অবাধ্যতার পঙ্কে নিমজ্জিত গুটিকয়েক ব্যক্তি দেখতে পায় যে, তাদের সঙ্গী ইখওয়ানরা আল্লাহর পথে ঐক্যের প্রশ্নে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় কিভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এরা এ উত্তম কর্মে প্রভাবিত হওয়ার পরিবর্তে শত্রুতা ও পরশ্রীকাতরতার কাদায় আরো অধিক পরিমাণে তলিয়ে যেতে থাকে। এই সুমহান উদাহরণ তাদের অন্তরে প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের আগুনকে আরো উস্কে দিতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের প্রবৃত্তি যদি শুধুমাত্র লোভ লালসায় মত্ত হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অন্ধকার পথে ধাবমান হয় তাহলে সে এর বাইরে আর কিছুই উপলব্ধি করতে পারে না। সুতরাং যে ব্যক্তিকে অর্থ বিভাগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল তিনি তার বন্ধুদের পরামর্শে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি আবেদন দাখিল করেন।
আবেদনে লেখা ছিল, হাসানুল বান্না ইসমাঈলিয়ায় ইখওয়ানুল মুসলেমুনের প্রধান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি দলের সব সম্পদ টাকা পয়সা কায়রোতে নিজের ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। যার ব্যাপারে তিনি দাবি করে থাকেন যে, সে কায়রোতে দলের প্রধান। পোর্ট সাঈদ এবং আবু সুবায়েরেও টাকা পাঠানো হয়। অথচ এসব টাকা পয়সা ইসমাঈলিয়ার জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অতএব এসব টাকা পয়সা ইসমাঈলিয়াতেই খরচ করা উচিত ছিল। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের জানমাল ইজ্জত আব্রুর হেফাজত করা। এ কারণে আবেদনকারীর দাবি হচ্ছে, আপনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করত সম্পদের এ অপচয় রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনকারী ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি ইখওয়ানুল মুসলেমুনের কার্যকরি পরিষদের সদস্য? আবেদনকারী জবাবে বলেন, আমি এর সদস্য ছিলাম এবং অর্থ বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু আমি ইস্তেফা দিয়েছি। অফিসার জিজ্ঞেস করেন, দরখাস্তে বর্ণনাকৃত শাখাসমূহে যে অর্থ পাঠানো হয়, কার্যকরি পরিষদের তাতে কি অনুমোদন রয়েছে? আবেদনকারী জবাবে বলেন, জী, হ্যাঁ! তাহলে আপনি কি সাধারণ পরিষদের সদস্য? ‘আমি প্রত্যেক বিভাগেরই সদস্য ছিলাম। কিন্তু এখন আমি তাদেরকে দেখতেও পছন্দ করি না। এখন আমি নিজকে তাদের কোন বিভাগেরই সদস্য মনে করি না।’ অফিসার জেরার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি মনে করেন খরচের এসব হিসাবপত্র যদি সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করা হয় তাহলে তারা এটা অনুমোদন করবেন এবং হাসানুল বান্নার সিদ্ধান্তের সাথে একমত হবেন?
‘খুবই আশ্চর্যের বিষয়! হাসানুল বান্না যদি বলেন, এ অর্থ আমি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করেছি, তাহলেও তারা আনন্দের সাথে অনুমোদন দিয়ে দিবেন। হাসানুল বান্না তাদের ওপর যাদু করেছেন। তিনি যা কিছুই করেন এরা তা চোখ বন্ধ করে অনুমোদন করেন।’ সরকারি কর্মকর্তা পুনরায় জেরার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেন, ‘যদি কার্যকরি পরিষদ হাসানুল বান্নার সাথে একমত হয় এবং সাধারণ পরিষদও তাদেরকে সমর্থন করে তাহলে আপনি শূন্যের ওপর কেন লম্ফঝম্ফ দিচ্ছেন? আপনি দলের সদস্য বা কোন কিছুই নন। আর একজন সরকারি কর্মকর্তারই বা এর সাথে কি সম্পর্ক থাকতে পারে?’
এ সব ব্যক্তি অর্থাৎ ইখওয়ানুল মুসলেমনু-এরা একটি দল হিসেবে সংঘবদ্ধ হয়ে নিজদের অর্থ দান করছেন এবং তা ব্যয় করার জন্য একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তারা এ অর্থ যেভাবেই ব্যয় করুন না কেন সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের তাতে অনুমোদন ও আস্থা রয়েছে। তাহলে কিভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন? এ ব্যক্তিরা স্বাধীন। নিজদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। দেখো যুবক! তোমাকে একজন সরল সোজা লোক মনে হচ্ছে। কিন্তু তুমি খুব বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলেছো। তোমার প্রতি আমার উপদেশ হলো, তুমি তাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করো এবং উল্টাপাল্টা চিন্তা-ভাবনা থেকে বিরত থাক। যদি এদের কাজকর্ম তোমার কাছে ভাল না লাগে তাহলে এদেরকে পৃথক হয়ে অন্য চিন্তা-ভাবনা করো এবং এরা যা কিছু করছে ঝামেলা না বাঁধিয়ে তাদেরকে তা করতে দাও। তুমি যদি নিজের মঙ্গল চাও তাহলে এটাই তোমার জন্য উত্তম।’ একথা শোনার পর যুবকটি ফিরে যায়।
শাইখ হামেদ আসকারিয়া এসব ঘটনা শোনার পর শিবরাহিয়াত থেকে ইসমাঈলিয়া আসেন এবং তিনি তৃতীয় পক্ষ হয়ে এসব হটকারী লোককে দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা শত্রুতার ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরে আসতে তৈরি ছিল না। শাইখ হামেদ আসকারিয়া এসব ক্ষেত্রে খুবই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এসব লোকের সাথে মিশে ও তাদের অবস্থা উপলব্ধি করে তিনি হাসানুল বান্নাকে বলেন, উস্তাদ!
এদের মধ্যে কোন প্রকার কল্যাণ অবশিষ্ট নেই। এরা দাওয়াতের উচ্চ মর্যাদা ও স্তর থেকে বঞ্চিত এবং নেতৃত্বের আনুগত্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যারা এ দুটি অবস্থা থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তারা আমাদের দলের জন্য কোন প্রকার কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম নয়। সুতরাং আপনি তাদের শত্রুতা ও বিরোধিতাকে প্রতিদান ও পুণ্যের কাজ বুঝে নিবেন এবং নিজের পথে সুদৃঢ় থাকবেন। তিনি নিজের এ মতামত দলচ্যুত ব্যক্তিদেরকেও নিঃসংকোচে অবহিত করেন এবং নিজে শিবরাহিয়াত চলে যান। এসব লোক অগ্রবর্তী হয়ে ইখওয়ানুল মুসলেমুন থেকে ইস্তেফা দিয়ে দেয়। কার্যকরি পরিষদে তা গৃহীত হওয়ার পর এ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।
এ অবস্থায় এসব লোক নিজদেরকে ইখওয়ান থেকে অনেক দূরে দেখতে পায় এবং বিষয়টি আপনা আপনি তাদের মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা এ সময় ইখওয়ানের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল বুনতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা ইখওয়ানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা করে। এরা ইখওয়ানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে নাম ঠিকানাবিহীন চিঠিপত্র পাঠানো শুরু করে। কখনো শিক্ষামন্ত্রী আবার কখনো জেলা প্রশাসকের নামে আবেদন পাঠায়। তারা শহরের ঐ সব লোককেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাদেরকে ইখওয়ানের শুভাকাক্সী মনে করা হয়। তাদেরকে আন্দোলনের প্রতি বিরাগভাজন করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা শোনানো হয়। তাদের এই অপকর্মের সূচনা শাইখ মোহাম্মদ হোসাইন জমলুত থেকে শুরু হয়।
তারা তার কাছে এই বলে মিথ্যাচার চালায় যে, ‘ইখওয়ানুল মুসলেমুন খুবই বিপজ্জনক একটি দল। তাদের গোপন তৎপরতা এমন পর্যায়ের যে, আপনি যদি তা জানতে পারেন তাহলে অবশ্যই এদের থেকে দূরে সরে যাবেন এবং নিজের জীবন বাঁচানোর চিন্তা করবেন। আমরা তাদের এসব তপরতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকতাদেরকে অবহিত করতে চাই। কিন্তু তার আগে আমরা আপনাকে অবহিত করছি যাতে এ বিষযে অবগত হয়ে আপনি সতর্কতামূলক পন্থা অবলম্বন করতে পারেন এবং তাদের সাথে প্রকাশ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আর তাদের থেকে পৃথক ও সম্পর্কহীন হওয়ার ঘোষণাও দিতে পারেন।
শাইখ জমলুত জিজ্ঞেস করেন, আপনারা যা কিছু বিবৃত করেছেন তা সত্য হওয়ার বিষয়ে আপনাদের নিশ্চিত বিশ্বাস আছে তো?’ ‘হ্যা, আমরা নিশ্চিত বরং এসব গোপন তৎপরতায় আমরাও অংশ নিয়েছি।’ তাদের চেহারায় গাঢ় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শাইখ জমলুত বলেন, ‘যুবকগণ! এই মুহূর্তে আমি তোমাদেরকে দুইভাবে বিচার করতে পারি। প্রথমত যদি সত্য বলে থাকো তাহলে তোমরা গাদ্দার ও আমানতের খিয়ানতকারী, দ্বিতীয়ত যদি মিথ্যা বলে থাকো তাহলে তোমরা মিথ্যাবাদী। এ অবস্থায় কি করে তোমাদের কথাকে সত্য বলে মেনে নিয়ে বিশ্বাস করতে পারি! এখান থেকে চলে যাও। ভবিষ্যতে কোনদিন যেন তোমাদের এখানে আর না দেখি।’
অধ্যায় ০৯ : ধোঁকা প্রতারণা ও ভেলকিবাজি
☼→
বান্না-জীবনী
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: