স্টিফেন হকিং-এর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে ইসলাম-বিদ্বেষীমনাদের ক্ষণিকের আস্ফালন

 প্রফেসর স্টিফেন হকিং তাঁর "A Brief History of Time" বইতে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে একজন গডের প্রয়োজন থাকার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। অথচ সম্প্রতি প্রকাশিত "The Grand Design" বইতে বলেছেন:

"Because there is a law such as gravity, the universe can and will create itself from nothing. Spontaneous creation is the reason there is something rather than nothing, why the universe exists, why we exist. It is not necessary to invoke God to light the blue touch paper and set the universe going."

তার মানে প্রফেসর হকিং-এর আগের বক্তব্যের সাথে বর্তমান বক্তব্য কিন্তু সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। আজ বাদে কাল আবার নতুন কিছু যে বলবেন না – তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অথচ ইসলাম-বিদ্বেষীমনারা তড়িঘড়ি করে তাঁর এই বক্তব্যকে "গডের অভ্রান্ত বাণী" ধরে নিয়ে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করেছে এই বলে যে, মুসলিমরা বিজ্ঞান মানে না! প্রফেসর হকিং-এর এই বক্তব্য নাকি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য! এমনকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নাকি ইতোমধ্যে তাঁর এই বক্তব্যকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়ে বিজ্ঞানমনা নাস্তিক হয়ে গেছে!

যাহোক, অন্ধ অনুসারী ইসলাম-বিদ্বেষীমনাদের কথা না হয় বাদই থাক। এমনকি প্রফেসর ডকিন্স তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন এভাবে:

"Darwinism kicked God out of biology but physics remained more uncertain. Hawking is now administering the coup de grace."

বাহ! নাস্তিক পাদ্রী-পুরোহিত-মোল্লারা জীববিজ্ঞান আর পদার্থবিজ্ঞান থেকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে কিক মেরে আউট করে দেওয়ার জন্য 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা' করছেন এবং ইতোমধ্যে স্রষ্টাকে আউট করে দেওয়া হয়েছে! বিজ্ঞানের আজ এ-কী হাল! এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে নিয়ে 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা' যে কোন্ ল্যাবে হচ্ছে – কে জানে! আমিও সেই ল্যাবে যোগ দিতে চাই!

যাহোক, প্রফেসর হকিং-এর সাম্প্রতিক বক্তব্য অনুযায়ী এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে নাকি গডের কোন ভূমিকা নাই। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব নাকি এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে – যাকে বলে স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি। উল্লেখ্য যে, প্রফেসর হকিং কিন্তু গডের অস্তিত্বকে নাকচ করে দিচ্ছেন না কিংবা বলেছেন না যে গড বলে কিছু নাই। শুধু বলছেন যে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে গডের কোন "ভূমিকা" নাই। তার মানে প্রফেসর হকিং-এর বিশ্বাস অনুযায়ী গড থাকতেও পারে। অন্যথায় গডের অস্তিত্বকে সরাসরি নাকচ করে দিলেই তো সব ল্যাটা চুকে যেত।

পাঠক! এবার ব্যাপারটা নিয়ে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন। গড আছে – কিন্তু এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে তার কোন "ভূমিকা" নাই! ব্যাপারটা কিন্তু বেশ হাস্যকর শুনায়। যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে গড থেকে থাকলে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে তার ভূমিকাও থাকতেই হবে। অন্যথায় এই মহাবিশ্ব হবে স্বয়ম্ভূ। তাহলে প্রফেসর হকিং-এর সাম্প্রতিক দাবি থেকে নিদেনপক্ষে দু'জন সমান্তরাল ও স্বতন্ত্র গডের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে: গড এবং প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব। কিন্তু গড এবং প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব একে অপর থেকে স্বতন্ত্র হতে পারে না। এবার বিষয়টাকে যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরেকটু সূক্ষভাবে দেখা যাক:

-এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের যে কোন স্রষ্টা নাই – সেটি হকিন্স আর ডকিন্স সহ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মিলে অনন্তকাল ধরে চেষ্টা করলেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না।

-এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে যে গডের কোন "ভূমিকা" নাই – যেমনটি প্রফেসর হকিং দাবি করেছেন – সেটিও সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মিলে অনন্তকাল ধরে চেষ্টা করলেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না। কারণটাও খুব সহজ। বিষয় দুটি এমন যে – কোনভাবেই তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিশ্বাস ছাড়া অন্য কোন পথ-ই যে খোলা নেই! ব্যাপারটা এমন নয় যে, ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী কারো উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, "দেখুন! পিরামিড তৈরীতে আপনার কোন ভূমিকা নাই, যেহেতু আপনার বয়স পিরামিডের বয়সের চেয়ে অ-নে-ক কম!" অথবা বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলছেন, "আইফেল টাওয়ার তৈরীতে আপনাদের কোন ভূমিকা নাই।" এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার ভূমিকার ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও সেরকম কিছু নয়।

-একটি শূন্য ঘরকে অসীম সময় ধরে রেখে দিলেও সেই ঘরের মধ্যে পদার্থবিদ্যার সূত্র মেনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মহাবিশ্বের মতো ছোট-খাট একটি প্রতিরূপও তৈরী হবে না – যেখানে আবার মানুষের মতো প্রজাতি সহ প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত থাকা তো দূরে থাক! হকিন্স বা ডকিন্স যদি সত্যি সত্যি এমন কিছুতে বিশ্বাস করেন তাহলে তাদের সাথে ট্রিলিয়ন-ডলার বাজি ধরা হবে। অধিকন্তু, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু সৃষ্টি হওয়াকে কিন্তু কোনভাবেই বৈজ্ঞানিক বলা যাবে না। এমন কিছু হয়ে থাকলেও সেটি হবে দৈব ঘটনা – আর দৈব ঘটনা বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত নহে। ফলে বিজ্ঞানের নামে হকিন্স-ডকিন্স যতই ভেলকিবাজী মার্কা কথাবার্তা বলুক না কেন – দৈব ঘটনায় বিশ্বাস করতেই হবে। হায় কপাল! সারা রাত ধরে রামায়ণ পড়ে…!

-আজ থেকে কয়েক দশক আগে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর জড় বস্তু থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাণ বা জীব সৃষ্টির সম্ভাবনাকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যেই বাতিল করে দিয়েছেন।

এই যখন বাস্তবতা তখন ডকিন্স-হকিন্স বিজ্ঞানের নামে আমজনতাকে ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন কেন – আর কেনই বা ইসলাম-বিদ্বেষীমনারা প্রফেসর হকিং-এর বক্তব্যকে লুফে নিয়ে বিজ্ঞানের নামে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করছে? এদের মাথায় ঘিলু বলে কি কিছুই নাই – নাকি নাস্তিকতার আড়ালে স্রেফ ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ। মুসলিমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে সত্য – কিন্তু তাই বলে সব দিক দিয়েই পিছিয়ে আছে ভাবাটা নিঃসন্দেহে চরম গোঁড়ামী বা জাতিবিদ্বেষ ছাড়া কিছু নয়। এদের নিজস্বতা বলে কিছু নাই। এরা তীর্থের কাকের মতো পশ্চিমা বিশ্বের নাস্তিক বিজ্ঞানীদের দিকে চেয়ে থাকে। পশ্চিমা কোন নাস্তিক বিজ্ঞানী কিছু একটা বলার সাথে সাথে সেটিকে বিজ্ঞানের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভার্চুয়াল আত্মতৃপ্তি পাওয়ার করা হয়। তারপর দু-দিন যেতে না যেতে অন্য কোন পশ্চিমা নাস্তিক বিজ্ঞানীর দ্বারে ধন্না দেয়। বছরের পর বছর ধরে পরগাছার মতো এভাবেই তারা বেঁচে আছে।

প্রশ্ন হচ্ছে প্রফেসর হকিং একজন পদার্থবিদ হয়ে বিজ্ঞানের নামে এই ধরণের উটকো বক্তব্যের পেছনে উদ্দেশ্যটা কী হতে পারে। আমার ধারণা এর পেছনে ডকিন্স ও সমমনা নাস্তিকদের ভূমিকা আছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে বিজ্ঞানের নামে গড-ও-ধর্ম বিহীন সমাজ তৈরী করা। এছাড়া অন্য কোন যৌক্তিক কারণ তো দেখা যায় না। তবে তা-ই যদি হয় তাহলে মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্টরা তো ইতোমধ্যে বিজ্ঞানের নামে গড-ও-ধর্ম বিহীন সমাজ তৈরী করেছে। সোসাল ডারউইনিজম সম্পর্কেও অনেকেই কম-বেশি অবগত। তো মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্টদের গড-ও-ধর্ম বিহীন সমাজের সাথে হকিন্স-ডকিন্সদের গড-ও-ধর্ম বিহীন সমাজের পার্থক্য তাহলে কী হবে?

*The expression coup de grace means a death blow intended to end the suffering of a wounded creature. The phrase can refer to the killing of civilians or soldiers, friends or enemies, with or without the consent of the sufferer.



0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

প্রিয়বই.কম → (19)123456 -► পরের পাতা
সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম