এক।
ভাষা আন্দোলন বিষয়ে কিছু অজানা তথ্য (অনেকের কাছে বিব্রতকর মনে হতে পারে):
১৯৪৭ সালঃ পাকিস্তানে মোট পাঁচটি প্রদেশের নিজস্ব মাতৃভাষা যথাক্রমে বাংলা, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ ও পশতু। উর্দু কোন প্রদেশের মাতৃভাষা নয় বরং উর্দু ছিল ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের কমন ভাষা।
- AbuSamihah
ভাষা আন্দোলন বিষয়ে কিছু অজানা তথ্য (অনেকের কাছে বিব্রতকর মনে হতে পারে):
১৯৪৭ সালঃ পাকিস্তানে মোট পাঁচটি প্রদেশের নিজস্ব মাতৃভাষা যথাক্রমে বাংলা, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ ও পশতু। উর্দু কোন প্রদেশের মাতৃভাষা নয় বরং উর্দু ছিল ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের কমন ভাষা।
রাষ্ট্রভাষার প্রস্তাবকঃ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে পূর্ব
পাকিস্তানের ধিরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক উর্দুর পরিবর্তে বাংলাকে একমাত্র
রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয় এবং প্রেম হরি বর্মণ, ভুপেন্দ্র
কুমার দত্ত এবং শ্রী চন্দ্র চট্টপাধ্যায় প্রমুখ আইন সভার তিন সদস্য কর্তৃক
প্রস্তাবটি সমর্থিত হলেও বাকি সবার বিরোধিতায় জাতীয় পরিষদে সেটা নাকচ হয়ে
যায়।
১৯৪৯ সালঃ ভারতীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক হিন্দিকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা (ইংরেজি সেকেন্ড অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ) হিসেবে প্রস্তাব পাশ। সে সময় পশ্চিমবংগের বাংগালি বাবুরা পূর্ব পাকিস্তানের রাস্ট্রভাষা বাংলা হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক ওকালতি করলেও নিজের দেশে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে হিন্দিকে রাস্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। উর্দুর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে তখন আন্দোলন চলছে।
১৯৫২ সালঃ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীঃ বাঙ্গালী খাজা নাজিম উদ্দিন (জন্ম ও মৃত্যু ঢাকায়) ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের চিপ মিনিস্টারঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম গ্রহনকারী নুরুল আমিন।
২১শে ফেব্রুয়ারীঃ হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানিসহ অনেক বাংগালী রাজনৈতিকদের সমর্থন নিয়ে বাংগালী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের পাকিস্তান সরকার কর্তৃক শুধুমাত্র প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দান ও বাংলাকে হিন্দুয়ানী প্রভাব বলয় থেকে বের করে আনার জন্য বাংলা ভাষাকে এরাবিয়ান লিপিতে লেখার প্রস্তাব করা হয় ঠিক যেমনটা ভারতীয়রা করেছিল হিন্দির (মুসলিম প্রভাব থেকে ভারতীয় নতুন প্রজন্মকে বের করে আনার জন্য) ক্ষেত্রে।
এর প্রতিবাদে ঢাকায় ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভংগ করে মিছিল করে। নুরুল আমিনের নেতৃত্বে বেঙ্গল এসেম্বলির অধিবেশন চলাকালীন সময়ে ক্ষুব্ধ বাঙ্গালী ছাত্ররা সংসদ ভবন ভাঙ্গার চেষ্টা করলে গুলি বর্ষণ করা হয়। বাঙ্গালী (!) পুলিশের গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত সহ ৫/৬ জন। আহত হন অনেকে। সংসদ ভবনে অবস্থানরত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মনরঞ্জন ধর, বসন্ত কুমার দাশ, ধিরেন্দ্রনাথ দত্ত ও শামসুদ্দিন আহমেদ চিপ মিনিস্টার নুরুল আমিনকে প্রস্তাব করেন আহতদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার। কিন্তু তিনি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
১৯৫৬ সালঃ পাকিস্তান পার্লামেন্টে উর্দু ও বাংলা উভয় ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করা হয়।
পুনশ্চঃ তার মানে দৃশ্যপটে পক্ষে বিপক্ষে সবাই বাংগালী। মুসলিম জাতী সত্বার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের পূর্ব অংশে কেউ হিন্দু বাংগালী কেউ মুসলিম বাংগালী। কিন্তু একই সময়ে ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের পশ্চিম বংগে সবাই হিন্দু বাংগালী!
এখন প্রশ্ন আসে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি মুসলিম না হয়ে হিন্দু বা খ্রিষ্টান হত তাহলে কি ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে বাংগালীরা শহীদ দিবস এবং অমুসলিম শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করত? এবং আমরা প্রতি বছর মাস ব্যাপি ২১শে ফেব্রুয়ারী পালন করতাম? কারন এর আগে বৃটিশরা ইংরেজি ভাষাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাদের মুখের ভাষাকে কাইরা নিয়েছিল। আশা করি সবার কাছে এর উত্তর আছে।
-দ্রোহী শামীম
দুই।
পশ্চিম পাকিস্তানীরা কেন বাংলাদেশীদের চেয়ে ভাল মুসলমান?
চেতনায় আঘাত লাগলে আমার কিছু করার নাই।
আসেন ভাষা দিয়ে শুরু করি।
ওরা উপমহাদেশের মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছে কোন আপত্তি ছাড়াই; অথচ পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্তপ্রদেশ ও বেলুচিস্তানের চেয়েও উর্দুর প্রচলন বাংলায় ছিল বেশি - বাংলার স্থায়ী অধিবাসীদের বিরাট একটা অংশ [কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকাসহ আরো অনেকগুলো শহর] কয়েক’শ বছর আগে থেকেই ছিল উর্দুভাষী।
শুধু তাই নয় তারা বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছিল কোন আপত্তি ছাড়াই যখন কেন্দ্রীয় সরকার ৫২ সালে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করে। ওরা এখানকার লোকদের মত মিথ্যা চেতনা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেয়ে উঠে নাই “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিবার চায়” বলে। এই মিথ্যা কথাটা এখানে ছাড়ানো হয়েছে এবং এখানকার লোকেরা গিলেছেও তা; অথচ ব্যাপারটা মুখের ভাষা বা মাতৃভাষা নিয়ে ছিল না, ছিল রাষ্ট্রভাষা নিয়ে।
ওরা মুহাজিরদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের ভাষাকে গ্রহণ করেছে এবং মুহাজিরদের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক ডঃ আব্দুল কাদির খান মধ্যপ্রদেশ থেকে সেই ছেলেবেলায় হিজরত করে এসেছিলেন পাকিস্তানে। মুশাররফের মত দিল্লীওয়ালা মুহাজির পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টও হয়েছেন। অন্যদিকে আমাদের এখানে মুহাজিরদেরকে ম্যাসাকার করার মধ্য দিয়ে ৭১ এর যুদ্ধটাকে লাগানো হয়েছে, যার পরিণতিতে অসংখ্য বনি আদমকে নিহত হতে হয়েছে। আর এখন তারা রাষ্ট্রহীন ভাসমান মানুষ। তাদের অপরাধ তাদের মাতৃভাষা ভিন্ন।
এখানে ২৫ মার্চের আগেই অবাঙালী/মুহাজির মুসলমানদের হত্যার উৎসব শুরু হয়। এক বিহারী নারীর স্তন কেটে নিয়ে তা দিয়ে ফুটবল খেলা হয়। স্তন কর্তিত সেই বিহারী নারীকে করাচীতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও সেখানে বসবাসরত বাঙালীদের উপর কোন নির্যাতন হয় নি। ৭১ এ যখন এখানে অবাঙালী মুসলমান হত্যার উৎসব করা হচ্ছিল তখনও ওখানে বাঙালীরা নিরাপদে বসে বসে বেতন ভাতা খেয়েছেন কাজ করা ছাড়াই। কিন্তু এর মধ্যেও একজন গাদ্দারী করে উড়াল দিয়েছিলেন। তিনি এখন বীরশ্রেষ্ট।
এখানে প্রতিনিয়ত ঘৃণার বীজ বপন করা হয় যা থেকে চারা বেরিয়ে সেগুলো মহীরূহে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে সেখানে ঘৃণার পরিবর্তে আপন করে নেবার চেষ্টা চলে।
আমাদের এখানে দাদাদের সাথে মিল খুঁজতে খুঁজতে তাদের সাথে মিশে যাবার প্রাণান্ত চেষ্টা চলে। দাদাদের ভাষারীতি গ্রহণ করে আমাদের লেখকরা ও শিক্ষিতজনেরা জাতে উঠেন; কয়েক’শ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা বাঙালদের ভাষাকে ত্যাগ করে ঘটি হবার নিরন্তর প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। আর বাঙালদের সেই ভাষাটাকে শুনলে ভাব ধরেন যেন অসংস্কৃত আরবী-ফারসী সমৃদ্ধ যবনভাষা ব্যবহার করে আপনি ম্লেচ্ছ হয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে ওরা তাদের সমগোত্রীয় পাঞ্জাবী শিখ ও হিন্দুদের সাথে কোন মিল খোঁজে না। একই ভাষায় কথা বললেও তারা ভিন্ন বর্ণমালা ও অনেক ভিন্ন শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করে নিজেদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্য ধরে রাখে। উল্লেখ্য যে মুসলিম পাঞ্জাবীরা ব্যবহার করে শাহমুখী বর্ণমালা, আর শিখ ও হিন্দু পাঞ্জাবীরা ব্যবহার করে গুরুমুখী বর্ণমালা। একই কথা সিন্ধীদের ক্ষেত্রেও সমান।
ইসলাম ও ইসলামী কর্মকাণ্ডে অনুদানের ক্ষেত্রেও তাদেরকে দেখা যায় অগ্রগামী। কিন্তু এখানে বাঙালদের দেখা যাবে “আব্বার অঙ্গচোষা” কাজের জন্য অনুদান দিতে একেবারে দিলখোলা, কিন্তু দীনী কর্মকাণ্ডে তেমন না।
আরো অনেক বিষয় আছে। তবে আসেন ভাষা দিয়ে শেষ করি। বাংলাদেশিরা ভাষার ক্ষেত্রে আখেরে তাদের চেয়েও বেশি উদার হয়ে গেছে। বাংলাদেশিরা এখন কিন্তু ঠিকই উর্দু কয়, তবে হিন্দী নাম দিয়ে।
১৯৪৯ সালঃ ভারতীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক হিন্দিকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা (ইংরেজি সেকেন্ড অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ) হিসেবে প্রস্তাব পাশ। সে সময় পশ্চিমবংগের বাংগালি বাবুরা পূর্ব পাকিস্তানের রাস্ট্রভাষা বাংলা হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক ওকালতি করলেও নিজের দেশে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে হিন্দিকে রাস্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। উর্দুর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে তখন আন্দোলন চলছে।
১৯৫২ সালঃ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীঃ বাঙ্গালী খাজা নাজিম উদ্দিন (জন্ম ও মৃত্যু ঢাকায়) ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের চিপ মিনিস্টারঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম গ্রহনকারী নুরুল আমিন।
২১শে ফেব্রুয়ারীঃ হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানিসহ অনেক বাংগালী রাজনৈতিকদের সমর্থন নিয়ে বাংগালী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের পাকিস্তান সরকার কর্তৃক শুধুমাত্র প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দান ও বাংলাকে হিন্দুয়ানী প্রভাব বলয় থেকে বের করে আনার জন্য বাংলা ভাষাকে এরাবিয়ান লিপিতে লেখার প্রস্তাব করা হয় ঠিক যেমনটা ভারতীয়রা করেছিল হিন্দির (মুসলিম প্রভাব থেকে ভারতীয় নতুন প্রজন্মকে বের করে আনার জন্য) ক্ষেত্রে।
এর প্রতিবাদে ঢাকায় ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভংগ করে মিছিল করে। নুরুল আমিনের নেতৃত্বে বেঙ্গল এসেম্বলির অধিবেশন চলাকালীন সময়ে ক্ষুব্ধ বাঙ্গালী ছাত্ররা সংসদ ভবন ভাঙ্গার চেষ্টা করলে গুলি বর্ষণ করা হয়। বাঙ্গালী (!) পুলিশের গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত সহ ৫/৬ জন। আহত হন অনেকে। সংসদ ভবনে অবস্থানরত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মনরঞ্জন ধর, বসন্ত কুমার দাশ, ধিরেন্দ্রনাথ দত্ত ও শামসুদ্দিন আহমেদ চিপ মিনিস্টার নুরুল আমিনকে প্রস্তাব করেন আহতদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার। কিন্তু তিনি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
১৯৫৬ সালঃ পাকিস্তান পার্লামেন্টে উর্দু ও বাংলা উভয় ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করা হয়।
পুনশ্চঃ তার মানে দৃশ্যপটে পক্ষে বিপক্ষে সবাই বাংগালী। মুসলিম জাতী সত্বার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের পূর্ব অংশে কেউ হিন্দু বাংগালী কেউ মুসলিম বাংগালী। কিন্তু একই সময়ে ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের পশ্চিম বংগে সবাই হিন্দু বাংগালী!
এখন প্রশ্ন আসে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি মুসলিম না হয়ে হিন্দু বা খ্রিষ্টান হত তাহলে কি ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে বাংগালীরা শহীদ দিবস এবং অমুসলিম শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করত? এবং আমরা প্রতি বছর মাস ব্যাপি ২১শে ফেব্রুয়ারী পালন করতাম? কারন এর আগে বৃটিশরা ইংরেজি ভাষাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাদের মুখের ভাষাকে কাইরা নিয়েছিল। আশা করি সবার কাছে এর উত্তর আছে।
-দ্রোহী শামীম
দুই।
পশ্চিম পাকিস্তানীরা কেন বাংলাদেশীদের চেয়ে ভাল মুসলমান?
চেতনায় আঘাত লাগলে আমার কিছু করার নাই।
আসেন ভাষা দিয়ে শুরু করি।
ওরা উপমহাদেশের মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছে কোন আপত্তি ছাড়াই; অথচ পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্তপ্রদেশ ও বেলুচিস্তানের চেয়েও উর্দুর প্রচলন বাংলায় ছিল বেশি - বাংলার স্থায়ী অধিবাসীদের বিরাট একটা অংশ [কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকাসহ আরো অনেকগুলো শহর] কয়েক’শ বছর আগে থেকেই ছিল উর্দুভাষী।
শুধু তাই নয় তারা বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছিল কোন আপত্তি ছাড়াই যখন কেন্দ্রীয় সরকার ৫২ সালে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করে। ওরা এখানকার লোকদের মত মিথ্যা চেতনা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেয়ে উঠে নাই “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিবার চায়” বলে। এই মিথ্যা কথাটা এখানে ছাড়ানো হয়েছে এবং এখানকার লোকেরা গিলেছেও তা; অথচ ব্যাপারটা মুখের ভাষা বা মাতৃভাষা নিয়ে ছিল না, ছিল রাষ্ট্রভাষা নিয়ে।
ওরা মুহাজিরদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের ভাষাকে গ্রহণ করেছে এবং মুহাজিরদের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক ডঃ আব্দুল কাদির খান মধ্যপ্রদেশ থেকে সেই ছেলেবেলায় হিজরত করে এসেছিলেন পাকিস্তানে। মুশাররফের মত দিল্লীওয়ালা মুহাজির পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টও হয়েছেন। অন্যদিকে আমাদের এখানে মুহাজিরদেরকে ম্যাসাকার করার মধ্য দিয়ে ৭১ এর যুদ্ধটাকে লাগানো হয়েছে, যার পরিণতিতে অসংখ্য বনি আদমকে নিহত হতে হয়েছে। আর এখন তারা রাষ্ট্রহীন ভাসমান মানুষ। তাদের অপরাধ তাদের মাতৃভাষা ভিন্ন।
এখানে ২৫ মার্চের আগেই অবাঙালী/মুহাজির মুসলমানদের হত্যার উৎসব শুরু হয়। এক বিহারী নারীর স্তন কেটে নিয়ে তা দিয়ে ফুটবল খেলা হয়। স্তন কর্তিত সেই বিহারী নারীকে করাচীতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও সেখানে বসবাসরত বাঙালীদের উপর কোন নির্যাতন হয় নি। ৭১ এ যখন এখানে অবাঙালী মুসলমান হত্যার উৎসব করা হচ্ছিল তখনও ওখানে বাঙালীরা নিরাপদে বসে বসে বেতন ভাতা খেয়েছেন কাজ করা ছাড়াই। কিন্তু এর মধ্যেও একজন গাদ্দারী করে উড়াল দিয়েছিলেন। তিনি এখন বীরশ্রেষ্ট।
এখানে প্রতিনিয়ত ঘৃণার বীজ বপন করা হয় যা থেকে চারা বেরিয়ে সেগুলো মহীরূহে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে সেখানে ঘৃণার পরিবর্তে আপন করে নেবার চেষ্টা চলে।
আমাদের এখানে দাদাদের সাথে মিল খুঁজতে খুঁজতে তাদের সাথে মিশে যাবার প্রাণান্ত চেষ্টা চলে। দাদাদের ভাষারীতি গ্রহণ করে আমাদের লেখকরা ও শিক্ষিতজনেরা জাতে উঠেন; কয়েক’শ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা বাঙালদের ভাষাকে ত্যাগ করে ঘটি হবার নিরন্তর প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। আর বাঙালদের সেই ভাষাটাকে শুনলে ভাব ধরেন যেন অসংস্কৃত আরবী-ফারসী সমৃদ্ধ যবনভাষা ব্যবহার করে আপনি ম্লেচ্ছ হয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে ওরা তাদের সমগোত্রীয় পাঞ্জাবী শিখ ও হিন্দুদের সাথে কোন মিল খোঁজে না। একই ভাষায় কথা বললেও তারা ভিন্ন বর্ণমালা ও অনেক ভিন্ন শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করে নিজেদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্য ধরে রাখে। উল্লেখ্য যে মুসলিম পাঞ্জাবীরা ব্যবহার করে শাহমুখী বর্ণমালা, আর শিখ ও হিন্দু পাঞ্জাবীরা ব্যবহার করে গুরুমুখী বর্ণমালা। একই কথা সিন্ধীদের ক্ষেত্রেও সমান।
ইসলাম ও ইসলামী কর্মকাণ্ডে অনুদানের ক্ষেত্রেও তাদেরকে দেখা যায় অগ্রগামী। কিন্তু এখানে বাঙালদের দেখা যাবে “আব্বার অঙ্গচোষা” কাজের জন্য অনুদান দিতে একেবারে দিলখোলা, কিন্তু দীনী কর্মকাণ্ডে তেমন না।
আরো অনেক বিষয় আছে। তবে আসেন ভাষা দিয়ে শেষ করি। বাংলাদেশিরা ভাষার ক্ষেত্রে আখেরে তাদের চেয়েও বেশি উদার হয়ে গেছে। বাংলাদেশিরা এখন কিন্তু ঠিকই উর্দু কয়, তবে হিন্দী নাম দিয়ে।
- AbuSamihah
0 comments: