ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে নিজদলের কর্মীকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থা যখন খুবই করুণ, ঠিক সেই মুহুর্তেই দলের সক্রিয় কর্মীদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে দলকে আরো সংকটে ফেলে দিচ্ছেন ছাত্রদলের ওই কেন্দ্রীয় নেতা।
এ নিয়ে ছাত্রদলে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ছাত্রদলের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ যেন ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। বৃহত্তর সংগঠনের ক্রান্তিকালে তাদের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা মুষ্টিমেয় ত্যাগী কর্মী যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামছে তাদেরকেই উল্টো গ্রেপ্তার করিয়ে দিচ্ছেন ছাত্রদলের প্রভাবশালী ওই নেতা।
জানা গেছে, ওই নেতার নাম মিজানুর রহমান সোহাগ। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে এই নেতা ছাত্রদলের কাল সাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দলের একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন। তার কারণে সক্রিয় কোন মিছিলই করতে পারছেন না ছাত্রদলের নেতারা।
ছাত্রদলের একাধিক নেতা অভিযোগ করে জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহ-সভাপতির যোগসাজসে ছাত্রদলের এই নেতা প্রায় সময় তার প্রতিপক্ষকে দমন করতে শাহবাগ থানার এক এসআইকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে তাদের গ্রেফতার করিয়ে দেন। বিনিময়ে তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। সাথে প্রার্থী শুন্য আসনে নিজের দলীয় অবস্থানও পাকাপোক্ত করা।
সর্বশেষ গত ৫ মার্চ মিছিল করে চানখারপুল এলাকার হোটেল সোহাগ থেকে বের হওয়ার সময় গ্রেফতার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা আল মেহেদি তালুকদারসহ ৪ জন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থেকে মেহেদীর অনুসারী আরও ৮ জন গ্রেফতার হন। এই আটকের পেছনে ছাত্রদলের ওই নেতার হাত রয়েছে বলে জানান বর্তমান সক্রিয় একাধিক নেতাকর্মী।
তারা জানান, ওইদিন মেহেদী গ্রেফতার হওয়ার সময় সোহাগ তার পাশেই ছিলেন অথচ তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এর আগেও সোহাগ তার প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এরূপ কাজ করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
এছাড়া ছাত্রদলের পেইজ হিসেবে পরিচিত ‘আলী বাবা’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে মিজানুর রহমান সোহাগের চ্যাট বক্সের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। সেখানে মিজানুর রহমান সোহাগকে নিয়ে অনেক স্টাটাস দেয়া আছে-
তার কয়েকটি তুলে ধরা হল :
‘ষড়যন্ত্রের শিকার ঢাবি ছাত্রনেতা আল মেহেদী তালুকদার। ঢাবি সভাপতি প্রার্থী হওয়াটা ছিলো তার অপরাধ। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে গত ৫ মার্চ সকাল ৯ টায় চানখারপুল এলাকা থেকে মেহেদীকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে সহযোগিতা করে।’
‘পুলিশের ইনফরমেশন দাতা হিসেবে কাজ করেন মিজানুর রহমান সোহাগ। গত ৫ মার্চ সকালে শহীদ মিনার এলাকায় হরতালের সমর্থনে মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।’
‘একইদিন সকাল ৬ টায় বৃষ্টির মধ্যে ঢাবি এলাকায় সোহাগের নেতৃত্বে মিছিল করা হয়। মিছিল শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ না করে বৃষ্টি ভেজা গায়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশে আনাগোনা করতে দেখা যায় তাকে।’
‘শুধু তাই নয় মেহেদী তালুকদার কখন মিছিল করবে, কোথায় গিয়ে শেষ করবো, যাকে দেখেছে তার কাছে জানার চেষ্টা করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। মেহেদী যখন গ্রেফতার হয় তার ৫ মিনিট আগে সোহাগকে চানখারপুল তেলের পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।’
‘তখনও একজন ছাত্রদল কর্মীর সাথে তার দেখা হলে তিনি মেহেদী কোথায় আছে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। নিরাপত্তার কারণে কর্মীর নাম গোপন রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে যথা সময়ে উপস্থাপন করা হবে। সোহাগের নেতৃত্বে এই পর্যন্ত যতগুলো মিছিল হয়েছে সবগুলো মিছিলের সাথে দুইটা করে মোটরসাইকেল থাকে।’
‘মিছিল শেষে মোটরসাইকেলে করে তাড়াতাড়ি সবাইকে রেখে ক্যাম্পাস এলাকা থেকে পালিয়ে যায় সে। অথচ ৫ মার্চ তার অবস্থান ছিলো ক্যাম্পাসের আশপাশে। যথাযথ প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়।’
‘গত তিন দিন প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে প্রমাণ সহ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। শুধু মেহেদী নয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মেদ মুন্নাকেও পুলিশের হাতে তুলে দিতে সোহাগের হাত আছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।’
‘এই পর্যন্ত ঢাবিতে যে সকল ছাত্রনেতাদের মিছিল হয়েছে সবার মিছিল থেকেই দুই একজন করে গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক সোহাগের কোন মিছিল থেকে একজনও গ্রেফতার হয়নি। রহস্য টা কি?’
‘এছাড়া হাসিনার একজন গুরুত্বপূর্ণ পিএসের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্কের আভাস পাওয়া গেছে। হলে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে বিচার পর্যন্ত হয়েছে। তাছাড়া কমিটি হওয়ার আগে অনেক কর্মীর কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। কমিটি হওয়ার পরে বিভিন্ন জেলার নেতাদের কাছ থেকে টাকা চান বলে জানা যায়।’
‘দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আশা করছি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
এভাবেই ‘আলী বাবা’ নামক ফেসবুক পেইজে মিজানুর রহমান সোহাগের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়া হয়।
একই সাথে সেখানে সোহাগের চ্যাট করা একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়। সেখানে সোহাগ অপর প্রান্তের অদৃশ্য লোকটিকে উদ্দেশ্যে করে লিখেন-
‘ভাই মেহেদীকে তো পুলিশের হাতে দিলাম, চাইছিলাম ক্রসে দিতে পারলাম না, অয় ডিইউ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এর প্রেসিডেন্ট হতে চায়।’
‘শুনছি জুয়েলও তাকে প্রেসিডেন্ট বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এখন দেখবো কেমনে হয়, পুলিশকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে, আরো টাকা লাগবে ভাই...আপনি আরো কিছু টাকা দিবেন।’
‘তাহলে আরো দু’জন আছে, পুলিশের সাথে কথা হইছে টাকা দিলে এবং সঠিক নিউজ দিতে পারলে কাজ করে দেব। ওকে আবার কথা হবে।’
এভাবেই সোহাগ অপরপ্রান্তের অদৃশ্য মানবের সাথে ফেসবুক চ্যাটিং করেন। তার এই ফেসবুক চ্যাটিং পুরো ছাত্রদলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংগঠনের জুনিয়র কর্মীরা ওই নেতাকে মারতে উদ্যতও হয়েছিল বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মোকতার হোসেন বলেন, এখানে হয়তো সাইকোলজিক্যাল কিছু বিষয় থাকতে পারে। তবে সোহাগ এমনটি করতে পারে চিন্তাই করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, সোহাগ যে পর্যায়ের নেতা সেখান থেকে সেখান থেকে এমনটি করার সম্ভাবনা খুবই কম।
অপরদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান সোহাগের নম্বরে বার বার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শীর্ষ নিউজ ডটকম/সৈকত/সুজন
০৮ মার্চ ২০১৫
0 comments: