আওয়ামী লীগের ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতিহার ও অদৃশ্য ভুতুড়ে সেকুলারিজম আর সমাজতন্ত্রের অনুপ্রবেশ

কভার পেজ (যেই বই থেকে নেওয়া)

লিপিকা ফেলহাম নামের এক এক্স মুসলিম মহিলা, যে কিনা বিবিসিতে আগে কাজ করতো, পরে ইজরায়েলে যেয়ে ইহুদি একজনকে বিয়ে করে নিজে হিন্দুতে কনভার্ট হয়ে যায়, তার একটা অপ-এড কলাম পড়লাম নিউ ইয়র্ক টাইমসে যার হেডিং ছিল " End of a Secular Bangladesh? " [১]। সেখানে মহিলা খুব চটকদার কিছু কথা লিখেছে, যেমন:



The Bengali language has always been linked with secular Bengali nationalism. The Bengali language has always been linked with secular Bengali nationalism. Protests followed, and on Feb. 21, 1952, the Pakistani police opened fire on students at Dhaka University. That day — perhaps the beginning of the conflicts that culminated in the 1971 war of independence — is remembered every year in Bangladesh and in the Indian state of West Bengal, and the monthlong book fair is one of the commemorative events.





বাহ কি মজা, ভাষা আন্দোলনও সেকুলার হয়ে গেল দেখি ? একে তো মহিলা নিজে মুসলিম থেকে হিন্দু হয়েছে, সে নিজে এথিয়িস্ট না তার মানে, কিন্তু পিউর হিন্দু আজকে [২]। অথচ সেই আরেক জায়গায় লেখেছে ...



Some 25 years ago, I sat on those rickety wooden stools and discussed the same issues Mr. Roy wrote about in his blog, Mukto-mona (Free Mind) and his recent book, “The Virus of Faith.” We students openly proclaimed our atheism. We probably provoked some strong reactions, but we did not fear for our lives. We were proud of the Bengali tradition of secularism, unique to the Indian Subcontinent.



মানে, সে বলছে সে নিজে ছিল এথিইস্ট, এথিইজমরেই সেকুলারিজম বলছে, আবার নিজেই স্বীকার করছে সে হিন্দু !! মানে নাস্তিক্যবাদ আর সেকুলারিজমকে ইন্টারচেঞ্জাবলি ইচ্ছা মতো যখন যেটা ইচ্ছা সেটাই ব্যবহার করে যাচ্ছে !! তবে তার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রের সেলফ ডিটারমিনেশনের সব সংগ্রাম ('৫২, '৭১ ইত্যাদি) সবই সেকুলারিজম/এথিইজম কে প্রক্লেইম করার জন্যেই হয়েছে !!



এর সত্যতা যাচাই করতে তাই কিছুটা সময় নিয়ে কিছু জিনিস ঘাটলাম, আগেও কিছু দেখেছিলাম, তাই ৭ মার্চের প্রাক্কালে ভাবলাম, বিস্তারিতই লিখে ফিলি।



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেকুলারিজম আর সমাজতন্ত্র এই দুই ভ্যালু থেকে সংগঠিত, এটা এস্টাব্লিশড করার জন্য বলা হয় ১৯৭২ এর সংবিধানে এই মূলনীতি দুইটা থাকার ব্যাপারে। কিন্তু ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনার প্রত্যক্ষ কোনও ম্যান্ডেট কিন্তু কেউ নেয় নি, এটাও পাশ হয় এমন পার্লামেন্টে, যেটা স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পরে কোনও নির্বাচনে অংশ নিয়ে গঠিত হয় নাই। ১৯৭২ সালের সংবিধান, তথা সেকুলারিজম আর সমাজতন্ত্রের ডকুমেন্টেড ইনডক্ট্রিনেশনের মেনিফেস্টেশন পাশ হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিতদের পার্লামেন্টে। তাই এটা বললে অত্যুক্তি হবেনা যে, সেকুলারিজম আর সমাজতন্ত্র এই দুই ভ্যালু এর ম্যান্ডেট থাকলে, সেইটা ১৯৭০ সালের ৭-ই ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমেই পাওয়াটা একটা লজিকাল কনক্লুসন হবে। আর যেকোন নির্বাচনের ম্যান্ডেট ডিপেন্ড করে, সেই নির্বাচনে বিভিন্ন দলের ইশতেহারের উপরে। ধরা হয়, বিজয়ী দলের ইশতেহারের প্রতি ম্যান্ডেট দিয়েছে ভোট দেওয়া লোকজন। তাই, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেই ইশতেহারে কি ছিল, সেটা জানা জরুরী। সেইখানে সেকুলারিজম আর সমাজতন্ত্র প্রকাশ্যে কি ছিল ? সেইটার পক্ষে কি আদৌ মানুষ ভোট দিয়েছে ?



১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সালের ৬ ই জুন তাদের ইশতেহার প্রকাশ করে। সেটার পুরাটুক নীচে দেওয়া হোলঃ (সুত্রঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ - সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল - নুহ উল আলম লেলিনের রচনা/সম্পাদনায় কভারের ছবি দ্রষ্টব্য )

কভার পেজ (যেই বই থেকে নেওয়া)



টাইটেলটাইটেল


পেজ-১/৮পেজ-১/৮


পেজ ২/৮পেজ ২/৮


পেজ ৩/৮পেজ ৩/৮


পেজ ৪/৮পেজ ৪/৮


পেজ ৫/৮পেজ ৫/৮


পেজ ৬/৮পেজ ৬/৮


পেজ ৭/৮পেজ ৭/৮


পেজ ৮/৮পেজ ৮/৮



লক্ষ্য করুনঃ এর প্রথম পেজে কি লিখাঃ

" তদানন্তীন ক্ষমতাশীল দল সমগ্র দেশকে একদলীয় রাস্ট্রে পরিণত করার যে প্রচেস্টা চালিয়েছিল, সে হীন চেস্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যেই আমাদের মহান নেতা মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই আমরা পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আপসহীন সংগ্রাম শুরু করি " 
পীর বাবা মুজিব নয়, সোহরাওয়ারদীর কথাই তারা তাদের ইশতেহারে দিয়েছে। আর পাকিস্তানের প্রতি কমিটমেন্ট। দেখি আর কি লিখেছে ...

... লবণের মতো অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদির উপরেও নিপীড়নমূলক পরোক্ষ কর বসানো হয়েছে। সংরক্ষিত বাজার, ট্যাক্স হলিডে, বোনাস ভাউচারের মাধ্যমে সাবসিডি প্রদান এবং কৃত্তিম ভাবে নিম্নহারে বিদেশী মুদ্রার ঋণ ও অর্থ বরাদ্দ প্রভৃতি ব্যাবস্থা একচেটিয়াবাদ ও কারটেল প্রথার সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে ... 

মানে ক্লাসিক সমাজতন্ত্রী সাবসিডি কেও এরা না করেছে ইশতেহারের দ্বিতীয় পেজে। মানে ইশতেহারে এরাই সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলছে। দেখি আরও কি লিখেছে ...

পঞ্চম পেজে আছে ...

" ... সিন্ধু ও পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে সিন্ধু নদীর উপর এবং বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী ও শীতলক্ষ্যার উপরেও সেতু নির্মাণ করতে হবে।"

মানে ? পাকবন্ধু মুজিবের পার্টি এর সেতু নির্মাণে সবার আগে এসেছে সিন্ধু নদের নাম !!! এই লোক কয়েকমাস পরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে মনে হয় কারও ???

এরপরে আসেন, আসল অংশে, সপ্তম পেজের " মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করুন " অংশ পুরাটুক পড়ুন ... 

৬-দফা বা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মসূচী ইসলাম বিপন্ন করে তুলছে বলে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে সেই মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি শেষবারের মতো আহ্বান জানাচ্ছি। অঞ্চলে অঞ্চলে এবং মানুষে মানুষে সুবিচারের প্রত্যাশী কোনও কিছুই ইসলামের পরিপন্থী হতে পারেনা। আমরা এই শাসনতান্ত্রিক নীতির প্রতি অবিচল ওয়াদাবদ্ধ যে, কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত ইসলামী নীতির পরিপন্থী কোনও আইনই এ দেশে পাস হতে বা চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারেনা  

এই ছিল আওয়ামী লীগের ইশতেহারের সেকুলার চিন্তা ভাবনা। খুব কি অবাক হচ্ছেন ? আপনাদের কি ধারণা এই অঞ্চলের মানুষ প্রকাশ্যে নাস্তিক্যবাদের পক্ষে কোনোদিন ম্যান্ডেট দিবে ? মোটেও না। এটা আওয়ামী লীগও ভালো জানে। কিন্তু বিদেশী সাহায্য পেতে ১৯৭১ এ রাশিয়া আর ভারতের সাথে তাজুদ্দীন গং রা সেকুলার হওয়ার শর্তে আর ২০০৮-২০১৫ পর্যন্ত ভারত সহ পশ্চিমের সাহায্য পেতে এরা সেকুলার ভেগ ধরেছে। আর সাথে আছে জায়নিস্টদের সাথে বিছানায় যাওয়া জয়, ববি, টিউলিপদের ট্যাসিট ইসলামোফোবিয়া।

তাই লিপিকা ফেলহাম এর সেই আরটিকালে যে প্রেমিস, মানে বাংলাদেশীদের স্বাধিকার আন্দোলন নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, এর চেয়ে বড় ডাহা মিথ্যা আর নাই। এই ব্যাপারে এর আগেও একটা নোট লিখা ছিল। সেইখানে ' সেকুলারিজম ' আর ' লেইসিজম ' এর জগাখিচুরি আর আওয়ামী লীগ দ্বারা এটার অনুপ্রবেশ নিয়েও বলা ছিল। এমনকি, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পরে কামাল হোসেনদের নিয়েও বলা ছিল

লিংকঃ https://www.facebook.com/notes/rage-ezekiel/the-backdoor-trojan-called-secularism/554491364650082
সেই লিখাটার অংশ বিশেষ আবার কোট করলামঃ

The current territory of Bangladesh and its historical precedents, always contained an inbred sense of religious harmony. Even before the colonial British rule, among all the previous Mughal, Persian, Afghan or Turkic rulers of Bengal, none were ever accused of imposing religious dogma on others. In fact, Islam spread in these land through a peculiar brand of Sufism, which frankly has more of a mystical undertone than a belligerent one.


So, Secularism was totally an alien concept to the creed of being a Bangal, the people of East Bengal. And what it has degenerated today is nothing but a form of Laïcisme or Laicism, which aims to banish religion from every affair, in the form of a cultural imposition of iconoclastic symbolism, e.g. organizing a secular reminiscing program instead of Janaza or Milad after death, eradicating the call of Bismillah or Allah Hafez from popular media. In point to note would be how Indians get away with the call of 'Namaste' in a secular India, and yet we see the urge from a particular section to appear too secular, more secular than the so-called secular themselves. And demonizing Islamic symbolism citing the excuse of the odd '' spirit of '71 ", has been all too rampant in the media world; e.g. all villains in drama having a beard, no central female figure in a drama ever wearing a hijab or a head gear.


State principles should form from what the people want, not the other way around. It should set forth organically from bottom up, not externally forcefully imposed from top-dpwn. By removing the term secularism, a word initially meaning worldly, Zia just enshrined what the popular feeling was on the ground. That was democracy and that was sincere. Not the feigned utterance of Medinah charter or wearing of a hijab just before elections by a certain poseur demagogue.


Religious harmony and moderation are part of our national creed. The ulterior agenda of enforcing laicism by using euphemisms of secularism must be resisted. It's the only way to uphold democracy and social justice.  
সেই থিউরি এর রিইনফরসিং প্রুফ পেলাম আওয়ামী লীগের ১৯৭০ এর নির্বাচনী ইশতেহারে। সাথে সাথে আমাদের স্বাধীন সরকারের স্বাধীনতা প্রক্লেইম করা ঘোষণা পত্রেও সেকুলারিজমের নাম গন্ধও নাই সেটাও এখানে দিয়ে দিচ্ছি ।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র - বাংলাস্বাধীনতার ঘোষণাপত্র - বাংলা

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র - ইংরেজিস্বাধীনতার ঘোষণাপত্র - ইংরেজি

তাই এরপরে 'সেকুলারিজম' মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল, এই ক্লেইম কেউ করলে এতোসব প্রমাণ একদম মুখের উপর খাওয়ায়ে দিবেন !! আর মুজিব যে নিজ মুখেই মার্চে বলেছে, ইন্ডিপেন্ডেন্স, দ্যাট আই ডোন্ট মিন, সেটা পাবেন ভিডিওতে [৩]

তাই ৭-ই মার্চের প্রেক্ষিতে, সত্য জানুন, অপরকে জানান। আর মুজিবের মতো ভন্ড ক্ষমতালিপ্সু বাংলাদেশে এতো দাম পেয়েছে, সেটা আমাদের জন্য একটা ট্র্যাজেডি। নইলে সবাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলে "জিয়ে পাকিস্তান" বলে ভাষণ শেষ করতেন না [৪], আর লিপিকা ফেলহামরাও ১৯৭১ কে নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠা এর যুদ্ধ বলতে পারতোনা, আর অভিজিতের ধর্মবিদ্বেষী ব্লগও দেশের প্রেসিডেন্টের হাত থেকে ' জাহানারা ইমাম ' পদক পেতনা [৫]

[১] http://goo.gl/J3qeJP

[২] http://goo.gl/Dqcjmf

[৩] http://goo.gl/bqGhO2

[৪] http://goo.gl/PYheCf

[৫] http://goo.gl/ljMlx2

- Rage Ezekiel

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম