১. আল্লাহর সত্তার সাথে শিরক
এটি হচ্ছে আল্লাহ একের অধিক বা তাঁর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ইত্যাদি আছে এ কথা বলা বা স্বীকার করা। মুসলমানরা এ ধরনের শিরক থেকে মুক্ত বলা চলে।
২. আল্লাহর গুণাবলীর সাথে শিরক
এটি হচ্ছে, যে সকল গুণ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে নির্ধারিত, সে গুণ অন্য কারো আছে এটি বলা, স্বীকার করা বা সে অনুযায়ী কাজ করা। যেমন- সব জায়গায় উপস্থিত থাকা, সব কথা শুনতে পাওয়া, গায়েব জানা ইত্যাদি গুণ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে নির্ধারিত। অন্য কোন ব্যক্তি বা সত্তার এই রকম গুণ আছে, এটি মনে করা বা সেই অনুযায়ী কাজ করা শিরক। চাই সে ব্যক্তি বা সত্তা জীবিত বা মৃত কোন নবী-রাসূল আ., অলি-আউলিয়া, পীর, বুজুর্গ বা অন্য কেউ হোক না কেন। এ ধরনের শিরক বর্তমানকালের মুসলমানদের মধ্যে বেশ দেখা যায়।
৩. আল্লাহর হক বা অধিকারের সাথে শিরক
যে সকল জিনিস পাওয়ার হক শুধুমাত্র আল্লাহর তা অন্য কাউকে দিলে বা অন্য কারো তা পাওয়ার হক আছে -এ কথা স্বীকার করলে শিরক করা হবে। যেমন, সেজদা পাওয়ার হক শুধুমাত্র আল্লাহর। তাই কেউ যদি কোন মাজারে বা অন্য কোথাও গিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করে, তবে সে শিরক করল। এ ধরনের শিরক মুসলমানদের মধ্যে বর্তমানে কম হলেও আছে।
৪. আল্লাহর ক্ষমতার সাথে শিরক
ক. আল্লাহর সাধারণ ক্ষমতার সাথে শিরক
হায়াত-মউত, রিজিক, ধন-দৌলত, সম্মান, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি দেয়া এবং গুনাহ মাফ করার মতা শুধু আল্লাহর। পৃথিবীর জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তি বা সত্তার আল্লাহর নিকট থেকে ঐগুলো জোর করে এনে দেয়ার বিন্দুমাত্র মতা নেই। কেউ যদি মনে করে জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তি বা সত্তার, আল্লাহর নিকট থেকে জোর করে বা আল্লাহকে বাধ্য করে অথবা ইচ্ছে করলেই আল্লাহকে অনুরোধ করে ঐগুলো আদায় করে দেয়ার মতা রাখে, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহর মতার সঙ্গে শিরক করা হবে। মানুষ মতাবান কোন ব্যক্তির নিকট থেকে কিছু পাওয়ার আশায় দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির পিছনে অর্থ-সম্পদ বা শ্রম তখনই শুধু ব্যয় করে, যখন সে মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে, দ্বিতীয় ব্যক্তি খুশি হয়ে চেষ্টা করলে মতাবান ব্যক্তি বা সত্তার নিকট থেকে তার কাক্সিত বস্তুটি অবশ্যই এনে দিতে পারবে। তদ্রƒপ, আল্লাহর নিকট থেকে কিছু পাওয়ার আশায় জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তিকে (পীর, বুজুর্গ, দরবেশ ইত্যাদি) নজর-নিয়াজ বা শ্রম (হাত-পা টিপা) মানুষ শুধু তখনই দেয়, যখন সে বিশ্বাস করে, ঐ ব্যক্তি খুশি হয়ে চেষ্টা করলে তার কাক্সিত বস্তুটি আল্লাহর নিকট থেকে অবশ্যই এনে দিতে পারবে। এটি অবশ্যই শিরক। বর্তমান মুসলমানসমাজে এই ধরনের শিরক কম-বেশি চালু আছে।
খ. আল্লাহর আইন বানানোর মতার সাথে শিরক
পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফের ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন-
اِنِ الْحُكْمُ اِلاَّ ِللهِ.
অর্থ: হুকুম করার মতা শুধুমাত্র আল্লাহর।
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এই আয়াত ও আরো আয়াতের মাধ্যমে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিচ্ছেন যে, হুকুম করার মতা শুধুমাত্র তাঁর। হুকুম মানে আইন, আবার আইন মানে হুকুম। তাহলে আল্লাহ এখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছেন যে, আইন বানানোর সার্বভৌম বা স্বাধীন মতা শুধু তাঁর। পৃথিবীর আর কোন সত্তার আইন বানানোর ব্যাপারে সার্বভৌম বা স্বাধীন মতা নেই। চাই সে সত্তা আইন পরিষদ (চধৎষরধসবহঃ), সিনেট, হাউজ অব কমন্স, হাউজ অব লর্ডস, লোকসভা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বাদশাহ যেই হোক না কেন। এই সব সত্তার আইন প্রণয়নের ব্যাপারে মতা শুধু এতটুকু যে, যে সকল ব্যাপারে আল্লাহ কোন স্পষ্ট আইন দেননি, সেগুলোর ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু তা অবশ্যই আল্লাহর দেয়া কোন স্পষ্ট আইনের পরিপন্থী হতে পারবে না। কেউ যদি ঐ সব সংস্থা বা সত্তা আইন প্রণয়নের ব্যাপারে স্বাধীন মতার অধিকারী, এ কথা ভোট বা সমর্থনের মাধ্যমে স্বীকার করে নেয় বা তাদের বানানো (আল্লাহর আইনের বিরোধী) আইনকে খুশি মনে মেনে চলে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহর আইন বানানোর মতার সাথে শিরক করল।
মানুষের জীবন পরিচালনার আইনগুলো বানিয়ে আল্লাহ তা জানিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। আর রাসূল সা. সেগুলো বাস্তবে রূপদান করে মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই কুরআনে বলা আছে, এমন হুকুম বা আইনের পরিপন্থী কোন আইন বানানোর মতা কোন সত্তা বা সংস্থার নেই। যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা এরকম আইন প্রণয়ন করে এবং তা মানুষকে মানতে বাধ্য করে, কুরআনের ভাষায় তাদের বলা হয়েছে ‘তাগুত’। এটি হচ্ছে ইসলামকে অস্বীকার করার (কুফরীর) সাধারণ পর্যায়ের চেয়ে খারাপ পর্যায়। আর যে সব মুসলমান ইসলাম বিরোধী আইন প্রণয়নের জন্যে ভোট বা সমর্থনের মাধ্যমে তাগুতকে মতায় বসায় বা খুশি মনে তাগুতের বানানো আইন মেনে চলে, তারা নিঃসন্দেহে নিজেদের ঐ পর্যায়ের কুফরীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে।
এটিই হচ্ছে সেই শিরক, যেটি বর্তমান বিশ্বে মুসলমানরা সব চেয়ে বেশি করছে। বর্তমানে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর ২/১টি ছাড়া সব ক’টিতে কুরআন বিরোধী আইন চালু আছে। অধিকাংশ মুসলমান সমর্থন করেছে বলেই এটি চালু হতে পেরেছে। আর বেশির ভাগ মুসলমান খুশি মনে মেনে চলছে বলে এটি চালু থাকতে পারছে। তাই না বুঝে হোক, আর বুঝে হোক পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান আজ এই শিরকটি করছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
কুরআনে বর্ণিত আইন-কানুন বা বিধি-বিধানগুলো যে কত যুক্তিসঙ্গত মানবকল্যাণমূলক তা যে কেউ একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। ঐ বিধি-বিধানগুলোর মাত্র ১৪টি উল্লেখ করেছি ‘পবিত্র কুরআন অনুযায়ী নবী-রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং তাঁদের সঠিক অনুসরণের মাপকাঠি’ নামক বইয়ে। ঐ ১৪টি বিধানও যদি সঠিকভাবে কোন দেশে চালু করা যায়, তবে সে দেশটি যে একটি শান্তিময় দেশ হয়ে যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
অধ্যায় ০৭ : শিরকের শ্রেণীবিভাগ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
- শহীদি প্রোফাইল সংকলণ
- তুরস্কে ব্যর্থ ক্যু: শ্বাসরুদ্ধকর একটি কালো রাত!
- বিরোধী জোটের ২০১৫ এর আন্দোলন চলাকালীন পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের পরিচয়
- এদের চিনে রাখুন,একদিন এরাই আপনাকে ছিড়ে-খুঁড়ে খাবে
- প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গাণিতিক বিষয় সম্পর্কিত ব্লগ সঙ্কলণ
- বিয়ে ► করণীয় ও বর্জনীয় ► (যে বিবাহে খরচ কম ও সহজ সে বিবাহই অধিক বরকতপূর্ণ)
- তুর্কি পাবলিক স্পেসে ইসলাম কীভাবে ফিরে আসছে?
- মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে
- জ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত : মানুষের উপর জ্বীনের নিয়ন্ত্রন (আছর)- বিশ্বাসযোগ্যতা, কারণ, প্রতিকার ..ইত্যাদি ইত্যাদি...
- একজন শিবির কর্মীর কথা
- কুরআন তেলাওয়াত ডাউনলোড
- ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট কারা চালায়, কেন চালায়?
- কুরআনে বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক ইঙ্গিতসমূহ
- হেফাজতের ওপর গণহত্যার ভিডিও আর্কাইভ | VDO archive of Genocide on Hefajat
- আজ কুরআন দিবস (১১-মে-১৯৮৫) : কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় শহীদ হবার দিন..
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
- নামায - aamzubair
- কিশোরকন্ঠ সমর্থক প্রতিবেদন ফরম - খালেদ হাসান রাফি
- Re: লিবিয়ার জনগণকে নিয়ে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখি খেলা - খালেদ হাসান রাফি
- Re: মিশরের ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড: নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় - খালেদ হাসান রাফি
0 comments: