জীবনের ভৌগলিক ও গোত্রীয় বিভাগ
মানব জীবনকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করার কথা যেমন অর্থহীন জীবনকে ভৌগলিক আঞ্চলিকতায় কিংবা গোত্রীয় পরিসীমায় বণ্টন করা তদপেক্ষা বেশি অর্থহীন। মানুষ দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত হয়ে আছে ; নদী, পর্বত, জংগল ও সমুদ্র কিংবা কৃত্রিম সীমারেখা তাদেরকে বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, একথা কেউই অস্বীকার করতে পারে না। পক্ষান্তরে মানুষের অসংখ্য গোত্র ও অসংখ্য জাতি এ দুনিয়াতে বর্তমান এবং ঐতিহাসিক, মনস্তাত্বিক ও অন্যান্য অসংখ্য কারণে মানবতার বিকাশ ও প্রকৃতি তাদেরকে বিভিন্ন রূপ দান করছে তাও অনস্বীকার্য। কিন্তু এ বিভিন্নতাকে ভিত্তি করে যারা বলে যে, প্রত্যেক গোত্র, প্রত্যেক জাতি এবং প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষের জন্য এক এক প্রকার জীবন ব্যবস্থা হওয়া বাঞ্ছনীয়, তারা নির্বোধ, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাদের স্থুল ও সীমাবদ্ধ দৃষ্টি কেবল মাত্র বাহ্যিক প্রকাশ, বাহ্যিক বাঁধা-বন্ধন ও বাহ্যিক কারণ বৈষম্যকেই বড় করে দেখেছে, এ বাহ্যিক বহুত্বের অভ্যন্তরে মানবতার মহান সত্তার অবিভাজ্য ঐক্য তাদের গোচরীভূত হয়নি। এসব বাহ্যিক বৈষম্য যদি বাস্তবিকই গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং তার ভিত্তিতে যদি মানুষের জীবন ব্যবস্থাও বিভিন্ন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে হয়, তাহলে মানুষকে একটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে। দু’দেশের অধিবাসীদের মধ্যে এবং দু’গোত্রের লোকদের মধ্যে যে বৈষম্য ও পার্থক্য বর্তমান তা একদিকে রাখুন, অন্যদিকে শুধুমাত্র নারী-পুরুষের মধ্যে দু’জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি এবং একই মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তাও লিপিবদ্ধ করুন।
অতপর এ উভয় প্রকার পার্থক্যের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করুন। আমি দাবি করে বলতে পারি, এ উভয় প্রকার পার্থক্যের মধ্যে প্রথম প্রকার অপেক্ষা দ্বিতীয় প্রকারের পার্থক্য অত্যন্ত গভীর ও স্পষ্ট বলে প্রমাণিত হবে। একথা সত্য হলে বলতে হবে যে, আলাদাভাবে প্রত্যেকটি ব্যক্তিরই জীবনব্যবস্থা ও জীবনযাত্রা প্রণালী সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন হওয়া আবশ্যক। অথচ এটা যে প্রকৃত সত্যের পরিপন্থী, তা আপনিও স্বীকার করবেন। কিন্তু আপনি যখন অসংখ্য ব্যক্তি, অসংখ্য স্ত্রী-পুরুষ এবং অসংখ্য পরিবারের মধ্যে এমন এক স্থায়ী ঐক্য ও সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন যার ভিত্তিতে জাতি, অঞ্চল কিংবা গোত্রীয় মতবাদ গড়ে উঠতে পারে এবং সে ধরনের বুনিয়াদে একটি জাতি কিংবা একটি অঞ্চলের অসংখ্য অধিবাসীর জন্য একই প্রকার জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ যোগ্য বলে মনে করেন তখন জাতি, গোত্র এবং আঞ্চলিক বৈষম্যের মধ্যে একটি বিরাট ও বুনিয়াদী ঐক্য আপনি দেখতে পান না কেন, যার ভিত্তিতে বিশ্বমানবতা সম্পর্কে একটি পূর্ণ ও ব্যাপক মত গড়ে উঠতে পারে এবং যার ভিত্তিতে সমগ্র বিশ্বমানবের একই ‘দীন’ বা জীবন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে পারে? সমগ্র ভৌগলিক, গোত্রীয় ও জাতিগত বৈষম্য সত্ত্বেও দুনিয়ার সমগ্র মানুষ একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন জীবন যাপন করছে, একই দৈহিক নিয়মে সমস্ত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, একই বিশেষত্ব ও বৈশিষ্ট্যের দরুন মানবজাতি দুনিয়ার অন্যান্য সৃষ্টি হতে স্বতন্ত্র এক সৃষ্টি বলে অভিহিত হয়, সকল মানুষের মধ্যে একই স্বাভাবিক অনুভূতি, চেতনা ও ভাবধারা বিদ্যমান সকল মানুষের মধ্যে একই প্রকার আত্মশক্তি বর্তমান এবং মানব জীবনে যেসব স্বাভাবিক, মনস্তাত্বিক, ঐতিহাসিক, তামাদ্দুনিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম অবিশ্রান্ত গতিতে চলেছে তাও সম্পূর্ণ এক ধরণের।
এটা যদি সত্য হয় কে বলতে পারে যে, এটা সত্য নয়? তাহলে যে নীতি বা আদর্শ মানুষ হিসেবে সমগ্র মানুষের পক্ষে কল্যাণকর হতে পারে তা সার্বজনীন ও বিশ্ব ব্যাপক হওয়া বাঞ্ছনীয়। তার জাতিগত, গোত্রীয় কিংবা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বিভিন্ন হওয়ার কোনোই কারণ নেই। অবশ্য বিভিন্ন জাতি এবং গোত্র সে মূলনীতির অধীন নিজেদের বিশিষ্ট ভাবধারার প্রকাশ করতে পারে এবং আংশিকভাবে তাদের নিজেদের কাজ কর্ম- বিভিন্ন পন্থায় আঞ্জাম দিতে পারে এটা করাও তাদের পক্ষে অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষের মানুষ হওয়ার দিক দিয়ে যে বিশুদ্ধ জীবন ব্যবস্থার প্রয়োজন, তাকে নিশ্চিতরূপে এক ও অভিন্ন হতে হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এক জাতির পক্ষে যা সত্য, অন্য জাতির পক্ষে তা মিথ্যা হওয়া, পক্ষান্তরে এক জাতির জন্য যা মিথ্যা, অন্য জাতির পক্ষে তা সত্য হওয়ার কথা মানুষের সুস্থ জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি কিছুতেই স্বীকার করতে পারে না।
অতপর এ উভয় প্রকার পার্থক্যের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করুন। আমি দাবি করে বলতে পারি, এ উভয় প্রকার পার্থক্যের মধ্যে প্রথম প্রকার অপেক্ষা দ্বিতীয় প্রকারের পার্থক্য অত্যন্ত গভীর ও স্পষ্ট বলে প্রমাণিত হবে। একথা সত্য হলে বলতে হবে যে, আলাদাভাবে প্রত্যেকটি ব্যক্তিরই জীবনব্যবস্থা ও জীবনযাত্রা প্রণালী সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন হওয়া আবশ্যক। অথচ এটা যে প্রকৃত সত্যের পরিপন্থী, তা আপনিও স্বীকার করবেন। কিন্তু আপনি যখন অসংখ্য ব্যক্তি, অসংখ্য স্ত্রী-পুরুষ এবং অসংখ্য পরিবারের মধ্যে এমন এক স্থায়ী ঐক্য ও সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন যার ভিত্তিতে জাতি, অঞ্চল কিংবা গোত্রীয় মতবাদ গড়ে উঠতে পারে এবং সে ধরনের বুনিয়াদে একটি জাতি কিংবা একটি অঞ্চলের অসংখ্য অধিবাসীর জন্য একই প্রকার জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ যোগ্য বলে মনে করেন তখন জাতি, গোত্র এবং আঞ্চলিক বৈষম্যের মধ্যে একটি বিরাট ও বুনিয়াদী ঐক্য আপনি দেখতে পান না কেন, যার ভিত্তিতে বিশ্বমানবতা সম্পর্কে একটি পূর্ণ ও ব্যাপক মত গড়ে উঠতে পারে এবং যার ভিত্তিতে সমগ্র বিশ্বমানবের একই ‘দীন’ বা জীবন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে পারে? সমগ্র ভৌগলিক, গোত্রীয় ও জাতিগত বৈষম্য সত্ত্বেও দুনিয়ার সমগ্র মানুষ একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন জীবন যাপন করছে, একই দৈহিক নিয়মে সমস্ত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, একই বিশেষত্ব ও বৈশিষ্ট্যের দরুন মানবজাতি দুনিয়ার অন্যান্য সৃষ্টি হতে স্বতন্ত্র এক সৃষ্টি বলে অভিহিত হয়, সকল মানুষের মধ্যে একই স্বাভাবিক অনুভূতি, চেতনা ও ভাবধারা বিদ্যমান সকল মানুষের মধ্যে একই প্রকার আত্মশক্তি বর্তমান এবং মানব জীবনে যেসব স্বাভাবিক, মনস্তাত্বিক, ঐতিহাসিক, তামাদ্দুনিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম অবিশ্রান্ত গতিতে চলেছে তাও সম্পূর্ণ এক ধরণের।
এটা যদি সত্য হয় কে বলতে পারে যে, এটা সত্য নয়? তাহলে যে নীতি বা আদর্শ মানুষ হিসেবে সমগ্র মানুষের পক্ষে কল্যাণকর হতে পারে তা সার্বজনীন ও বিশ্ব ব্যাপক হওয়া বাঞ্ছনীয়। তার জাতিগত, গোত্রীয় কিংবা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বিভিন্ন হওয়ার কোনোই কারণ নেই। অবশ্য বিভিন্ন জাতি এবং গোত্র সে মূলনীতির অধীন নিজেদের বিশিষ্ট ভাবধারার প্রকাশ করতে পারে এবং আংশিকভাবে তাদের নিজেদের কাজ কর্ম- বিভিন্ন পন্থায় আঞ্জাম দিতে পারে এটা করাও তাদের পক্ষে অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষের মানুষ হওয়ার দিক দিয়ে যে বিশুদ্ধ জীবন ব্যবস্থার প্রয়োজন, তাকে নিশ্চিতরূপে এক ও অভিন্ন হতে হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এক জাতির পক্ষে যা সত্য, অন্য জাতির পক্ষে তা মিথ্যা হওয়া, পক্ষান্তরে এক জাতির জন্য যা মিথ্যা, অন্য জাতির পক্ষে তা সত্য হওয়ার কথা মানুষের সুস্থ জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি কিছুতেই স্বীকার করতে পারে না।
জীবনের কালগত বিভাগ
আর এক শ্রেণীর লোক মানব জীবনের কালগত বিভাগ করতে প্রয়াস পাচ্ছে। তাদের বক্তব্য এই যে, কালের এক অধ্যায় মানুষের পক্ষে যে জীবন ব্যবস্থা সত্য ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হয় পরবর্তী অধ্যায়ে তাই বাতিল ও বর্জনীয় হয়ে পড়ে। কারণ, তাদের মতে জীবনের সমস্যা ও তৎসংক্রান্ত ব্যাপারগুলো প্রত্যেক যুগেই পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে এবং এ সমস্যা ও ব্যাপারগুলোর প্রকৃত রূপের উপরই জীবন ব্যবস্থা সত্য কিংবা বাতিল হওয়া নির্ভর করে। বস্তুত এ উদ্ভট মতবাদকে নূতন বৈজ্ঞানিক যুগের চরম নির্বুদ্ধিতা ভিন্ন আর কিছু বলা যায় না। বিশেষ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এরূপ নির্বুদ্ধিতামূলক মতবাদ পূর্ণ নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তার সাথেই প্রচার করা হয়। এটা আরো ভয়ংকররূপে মারাত্মক। এ ধরনের মতবাদ যে মানব জীবন সম্বন্ধে প্রচার করা হয়, সে সম্পর্কে সাথে সাথে আবার ক্রমবিকাশবাদের কথাও বলা হয় এবং ইতিহাসে তার সক্রিয় নিয়মগুলোও অনুসন্ধান করা হয়। সে জীবনের অতীত অভিজ্ঞতাসমূহ হতে বর্তমানের জন্য শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের জন্য নীতি ও নিয়ম-কানুনও রচনা করা হচ্ছে। মানুষের জীবনে ‘মানব প্রকৃতি’ নামে একটি বস্তু আছে একথাও খুব জোর গলায় প্রচার করা হয়।
আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, মানব জাতির এ অব্যাহত ঐতিহাসিক গতিধারায় কাল-অধ্যায় কিংবা যুগের সীমা নির্দেশ করার কোনো বিশ্বস্ত যন্ত্র বা মানদণ্ড আপনাদের কাছে আছে কি? সে নির্দিষ্ট সীমাগুলোর মধ্যে কোনো একটি সীমার উপর অংগুলি নির্দেশ করে আপনি কি বলতে পারেন যে, এ সীমার ওপারে জীবনের যে সমস্যা ছিলো, এপারে এসে তা আমুল বদলিয়ে গেছে? এবং ওপারে জীবনকে যেসব পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে, এপারে এসে তা সবই বিলুপ্ত হয়ে গেছে? মানুষের জীবনকে এরূপ বিভিন্ন কালগত খণ্ডে বিভক্ত করা যদি বাস্তবিকই সম্ভব হয় তাহলে বলতেই হবে যে, জীবনের অতীত অংশ পরবর্তী অংশের পক্ষে একেবারে অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয়। কালের সে অংশে মানুষ যা কিছুই করেছে, তা অতীত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের সেই সমস্ত কীর্তিও নিঃশেষ হয়ে গেছে। কালের সে অধ্যায়ের মানুষ যেমন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, পরবর্তী অধ্যায়ে সে তা হতে কোনো শিক্ষাই লাভ করতে পারে না। কারণ মানুষ কালের এ অধ্যায়ে যে পরিস্থিতি ও সমস্যাবলীর মধ্যে বিশেষ বিশেষ পন্থা ও নীতি গ্রহণ করে এবং বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে লাভের জন্য চেষ্টা সাধনা করে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, পরবর্তীকালে তা সবই ফুরিয়ে গেছে। কাজেই সে অভিজ্ঞতা জীবনের এ পরবর্তী অধ্যায়ে কোনো শিক্ষাই দিতে পারে না। তা যদি সত্য হয় তবে জিজ্ঞেস করেন, এ ক্রমবিকাশবাদের কথা এতো জোর গলায় কেন বলা হয়? জীবনের জন্য নিয়ম-কানুনের এরূপ অনুসন্ধিৎসা কেন?
এ ঐতিহাসিক তথ্যানুসন্ধানের যৌক্তিকতা কি? বস্তুত ক্রমবিকাশবাদকে যদি স্বীকারই করা হয়, তবে একথা মানতেই হবে যে, একটি নির্দিষ্ট জিনিস এহেন বিবর্তন ও পরিবর্তনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে বর্তমান আছে এবং পরিবর্তনের দুর্বার স্রোতধারার মধ্যেও নিজেকে অক্ষত রেখে অব্যাহত গতিতে ছুটে চলেছে। আপনি যখন জীবনের নিয়মাবলীর কথা আলোচনা করবেন, তখন আপনাকে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, এ অস্থায়ী অবস্থার মধ্যে, এ গতিমান অভিব্যক্তিকে, এ ভাংগা-গড়ার আবেষ্টনীর মধ্যে এমন একটি স্থায়ী ও চিরঞ্জীব সত্য বর্তমান আছে যার নিজস্ব একটি প্রকৃতি এবং স্বকীয় কোনো নিয়ম-পদ্ধতি বর্তমান রয়েছে। আপনারা যখন ঐতিহাসিক তথ্যানুসন্ধান করে তত্ত্ব আবিষ্কার করেন তখন তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, ইতিহাসের এ সুদীর্ঘ পথে যে পথিক কালের বিভিন্ন অধ্যায় অতিক্রম করে এসেছে, তার নিজস্ব কোনো সত্ত্বা এবং স্বকীয় কোনো প্রকৃতি বর্তমান আছে যে সম্পর্কে বলা যায় যে, তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে কাজ করে ; এক সময় তা কোনো কোনো জিনিস গ্রহণ করে, অন্য সময় আবার সেই জিনিসকেই বাতিল করে দিয়ে অপর একটি জিনিস পেতে চায়। এ জীবন্ত সত্য, এ স্থায়ী পরিবর্তনশীল বস্তু, ইতিহাস, রাজপথের এ চিরন্তন মুসাফিরকেই সম্ভবত আপনারা ‘মানবতা’ নামে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু আপনি যখন পথের বিভিন্ন মঞ্জিল, সে মঞ্জিলসমূহের বিভিন্ন অবস্থা এবং তা হতে উদ্ভুত নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেন, তখন সে কথায় এমনভাবে তন্ময় হয়ে যান যে, তখন স্বয়ং পথিকের কথা একেবারেই ভুলে যান।
জিজ্ঞেস করি, পথের মঞ্জিল, তার অবস্থাসমূহ এবং সে অবস্থা হতে উদ্ভুত সময়গুলো পরিবর্তিত হয়ে গেলে স্বয়ং পথিক এবং তার অন্তর্ভুক্ত নিগূঢ় সত্য ও কি পরিবর্তিত হয়ে যায়? আমাদের অভিজ্ঞতা এই যে, সৃষ্টির শুরু হতে আজ পর্যন্ত তার কাঠামো ও প্রকৃতি মোটেই বদলিয়ে যায়নি। হাজার বছর পূর্বে মানবসৃষ্টির যে উপাদান ছিলো আজও ঠিক তাই বর্তমান। তার প্রকৃতি ও স্বভাব, স্বভাবের অভিব্যক্তি, তার শক্তি ও গুণাগুণ, তার দুর্বলতা ও ক্ষমতা, তার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, তার গ্রহণ ও বর্জন, তার উপর প্রভাবশীল শক্তিনিচয় এবং তার প্রাকৃতিক পরিবেশ সবকিছুই যথাপূর্ব বর্তমান আছে ; এসবের কোনো কিছুতেই সৃষ্টির প্রথম দিন হতে আজ পর্যন্ত একবিন্দু পরিমাণ পরিবর্তন বা ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। এমন দাবি করার দুঃসাহস কেউই করতে পারে না যে, ইতিহাসের এ দীর্ঘ ও একটানা পথে বিভিন্ন অবস্থা ও সে অবস্থাসমূহ হতে উদ্ভুত জীবন সমস্যার পরিবর্তনের ফলে স্বয়ং ‘মানবতা’ও পরিবর্তিত হয়ে এসেছে কিংবা মানবতার সাথে সংশ্লিষ্ট মৌলিক বিষয়সমূহও পরিবর্তিত হয়ে চলে এসেছে। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে এমন দাবি করা একবারেই অর্থহীন যে, ‘মানবতার’ পক্ষে গতকাল যা বিষবৎ ছিলো, আজ তা অমৃত হয়ে গেছে, কাল যা সত্য ছিলো আজ তা মূল্যহীন হয়ে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, মানব জাতির এ অব্যাহত ঐতিহাসিক গতিধারায় কাল-অধ্যায় কিংবা যুগের সীমা নির্দেশ করার কোনো বিশ্বস্ত যন্ত্র বা মানদণ্ড আপনাদের কাছে আছে কি? সে নির্দিষ্ট সীমাগুলোর মধ্যে কোনো একটি সীমার উপর অংগুলি নির্দেশ করে আপনি কি বলতে পারেন যে, এ সীমার ওপারে জীবনের যে সমস্যা ছিলো, এপারে এসে তা আমুল বদলিয়ে গেছে? এবং ওপারে জীবনকে যেসব পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে, এপারে এসে তা সবই বিলুপ্ত হয়ে গেছে? মানুষের জীবনকে এরূপ বিভিন্ন কালগত খণ্ডে বিভক্ত করা যদি বাস্তবিকই সম্ভব হয় তাহলে বলতেই হবে যে, জীবনের অতীত অংশ পরবর্তী অংশের পক্ষে একেবারে অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয়। কালের সে অংশে মানুষ যা কিছুই করেছে, তা অতীত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের সেই সমস্ত কীর্তিও নিঃশেষ হয়ে গেছে। কালের সে অধ্যায়ের মানুষ যেমন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, পরবর্তী অধ্যায়ে সে তা হতে কোনো শিক্ষাই লাভ করতে পারে না। কারণ মানুষ কালের এ অধ্যায়ে যে পরিস্থিতি ও সমস্যাবলীর মধ্যে বিশেষ বিশেষ পন্থা ও নীতি গ্রহণ করে এবং বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে লাভের জন্য চেষ্টা সাধনা করে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, পরবর্তীকালে তা সবই ফুরিয়ে গেছে। কাজেই সে অভিজ্ঞতা জীবনের এ পরবর্তী অধ্যায়ে কোনো শিক্ষাই দিতে পারে না। তা যদি সত্য হয় তবে জিজ্ঞেস করেন, এ ক্রমবিকাশবাদের কথা এতো জোর গলায় কেন বলা হয়? জীবনের জন্য নিয়ম-কানুনের এরূপ অনুসন্ধিৎসা কেন?
এ ঐতিহাসিক তথ্যানুসন্ধানের যৌক্তিকতা কি? বস্তুত ক্রমবিকাশবাদকে যদি স্বীকারই করা হয়, তবে একথা মানতেই হবে যে, একটি নির্দিষ্ট জিনিস এহেন বিবর্তন ও পরিবর্তনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে বর্তমান আছে এবং পরিবর্তনের দুর্বার স্রোতধারার মধ্যেও নিজেকে অক্ষত রেখে অব্যাহত গতিতে ছুটে চলেছে। আপনি যখন জীবনের নিয়মাবলীর কথা আলোচনা করবেন, তখন আপনাকে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, এ অস্থায়ী অবস্থার মধ্যে, এ গতিমান অভিব্যক্তিকে, এ ভাংগা-গড়ার আবেষ্টনীর মধ্যে এমন একটি স্থায়ী ও চিরঞ্জীব সত্য বর্তমান আছে যার নিজস্ব একটি প্রকৃতি এবং স্বকীয় কোনো নিয়ম-পদ্ধতি বর্তমান রয়েছে। আপনারা যখন ঐতিহাসিক তথ্যানুসন্ধান করে তত্ত্ব আবিষ্কার করেন তখন তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, ইতিহাসের এ সুদীর্ঘ পথে যে পথিক কালের বিভিন্ন অধ্যায় অতিক্রম করে এসেছে, তার নিজস্ব কোনো সত্ত্বা এবং স্বকীয় কোনো প্রকৃতি বর্তমান আছে যে সম্পর্কে বলা যায় যে, তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে কাজ করে ; এক সময় তা কোনো কোনো জিনিস গ্রহণ করে, অন্য সময় আবার সেই জিনিসকেই বাতিল করে দিয়ে অপর একটি জিনিস পেতে চায়। এ জীবন্ত সত্য, এ স্থায়ী পরিবর্তনশীল বস্তু, ইতিহাস, রাজপথের এ চিরন্তন মুসাফিরকেই সম্ভবত আপনারা ‘মানবতা’ নামে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু আপনি যখন পথের বিভিন্ন মঞ্জিল, সে মঞ্জিলসমূহের বিভিন্ন অবস্থা এবং তা হতে উদ্ভুত নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেন, তখন সে কথায় এমনভাবে তন্ময় হয়ে যান যে, তখন স্বয়ং পথিকের কথা একেবারেই ভুলে যান।
জিজ্ঞেস করি, পথের মঞ্জিল, তার অবস্থাসমূহ এবং সে অবস্থা হতে উদ্ভুত সময়গুলো পরিবর্তিত হয়ে গেলে স্বয়ং পথিক এবং তার অন্তর্ভুক্ত নিগূঢ় সত্য ও কি পরিবর্তিত হয়ে যায়? আমাদের অভিজ্ঞতা এই যে, সৃষ্টির শুরু হতে আজ পর্যন্ত তার কাঠামো ও প্রকৃতি মোটেই বদলিয়ে যায়নি। হাজার বছর পূর্বে মানবসৃষ্টির যে উপাদান ছিলো আজও ঠিক তাই বর্তমান। তার প্রকৃতি ও স্বভাব, স্বভাবের অভিব্যক্তি, তার শক্তি ও গুণাগুণ, তার দুর্বলতা ও ক্ষমতা, তার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, তার গ্রহণ ও বর্জন, তার উপর প্রভাবশীল শক্তিনিচয় এবং তার প্রাকৃতিক পরিবেশ সবকিছুই যথাপূর্ব বর্তমান আছে ; এসবের কোনো কিছুতেই সৃষ্টির প্রথম দিন হতে আজ পর্যন্ত একবিন্দু পরিমাণ পরিবর্তন বা ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। এমন দাবি করার দুঃসাহস কেউই করতে পারে না যে, ইতিহাসের এ দীর্ঘ ও একটানা পথে বিভিন্ন অবস্থা ও সে অবস্থাসমূহ হতে উদ্ভুত জীবন সমস্যার পরিবর্তনের ফলে স্বয়ং ‘মানবতা’ও পরিবর্তিত হয়ে এসেছে কিংবা মানবতার সাথে সংশ্লিষ্ট মৌলিক বিষয়সমূহও পরিবর্তিত হয়ে চলে এসেছে। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে এমন দাবি করা একবারেই অর্থহীন যে, ‘মানবতার’ পক্ষে গতকাল যা বিষবৎ ছিলো, আজ তা অমৃত হয়ে গেছে, কাল যা সত্য ছিলো আজ তা মূল্যহীন হয়ে গেছে।
মানুষের প্রয়োজনীয় জীবন ব্যবস্থার রূপ
বস্তুত ব্যক্তি মানুষ ও সমষ্টিগত মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় মানবতাকে এবং তৎসংশ্লিষ্ট মৌলিক বস্তুগুলোকে বুঝতে ভুল করে কোনো কোনো সত্য স্বীকার করার ব্যাপারে উচ্ছ্বাস ও ভাবাবেগের আতিশয্য দেখিয়ে এবং কোনো কোনোটিকে অনুভব করতে অসমর্থ হয়ে সময়ে সময়ে যেসব জীবন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে এবং মহান মানবতা (humanity at large) যেগুলোকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পরে ভুল দেখতে পেয়ে তা ত্যাগ করতে এবং এ ধরনের নুতন পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, সেসবের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সিদ্ধান্ত করে নিয়েছে যে, মানবতার জন্য প্রত্যেক নুতন যুগে নুতন এক জীবন ব্যবস্থা আবশ্যক যা কেবল সে যুগের অবস্থা ও সমস্যাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং সেগুলোর সমাধান করতে সচেষ্ট। অথচ প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনা হতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অধিকতর যুক্তিসংগত যে, এ ধরনের কালগত ও যুগগত জীবন ব্যবস্থা অন্য কথায় মৌসুমী ফসলকে বারবার পরীক্ষা ও যাচাই করায় এবং প্রত্যেকটির ব্যর্থতার পরে অপর একটির পরীক্ষা করায় মহান মানবতার বহু মূল্যবান সময় বৃথা নষ্ট হয়ে যায়, তারপর বন্ধুর হয় তার ক্রমবিকাশ এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির পথে তার গতি ব্যাহত হয়। আসলে বিরাট মানবতার জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন এমন একটি জীবন ব্যবস্থার যাকে জেনে বুঝে এবং তৎসংক্রান্ত যাবতীয় তত্ত্ব অনুধাবন করে এক ব্যাপক, সার্বজনীন, চিরস্থায়ী ও সনাতন নীতির বুনিয়াদ কায়েম করা যেতে পারে যাকে নিয়ে মানবতা বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমগ্র বিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে অতীব স্বচ্ছন্দ গতিতে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হতে পারে সে পরিস্থিতি হতে উদ্ভুত সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান করাও সম্ভব হয় জীবনের রাজপথে সংকুচিত হয়ে নয়, বরং অব্যাহত গতিতে তার মঞ্জিলে মকসুদে গিয়ে উপনীত হতে পারে। এরূপ জীবন ব্যবস্থা কি মানুষ নিজেই রচনা করতে সক্ষম?
মানুষের জন্য ‘দীন’ বা জীবন পদ্ধতি একান্তভাবে অপরিহার্য, উপরে তার বাস্তব রূপ এবং পরিচয় দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের বিশেষভাবে বিচার করে দেখতে হবে যে, এ ধরণের কোনো জীবন ব্যবস্থা যদি মানুষ নিজেই- আল্লাহর সহায়তা ভিন্ন রচনা করতে চেষ্টা করে, তবে সে চেষ্টা কোনোক্রমেই কি সফল হতে পারে? ইতিপূর্বে মানুষ এমন কোনো জীবন ব্যবস্থা রচনা করতে সমর্থ হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন আমি আপনাদের কাছে করবো না ; কারণ তার উত্তরে আপনাদের সকলকেই নিশ্চিতরূপে ‘না’ বলতে হবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। বর্তমান যুগে যারা বড় গলায় নিজেদের রচিত ‘দীন’ বা জীবন ব্যবস্থা পেশ করছে এবং সেজন্য পরস্পর মারাত্মক সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছে, তারাও এমন দাবি করতে পারে না যে, তাদের কারো ‘দীন’ বা জীবন ব্যবস্থা মানুষ হিসাবে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কারো ‘দীন’ গোত্রীয় ও জাতিগত, কারো ‘দীন’ বিশেষ কোনো ভৌগলিক অঞ্চলের জন্য, কারো ‘দীন’ শ্রেণীগত কারো ‘দীন’ অতীত এক যুগের প্রয়োজন অনুসারে রচিত হয়েছিল। কাজেই তা অনাগত যুগের অবস্থা ও সমস্যার সমাধানে কিছুমাত্র কার্যকরি হবে কি না সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। কারণ যে যুগ এখন চলছে, তার ঐতিহাসিক প্রয়োজন এখনো যাচাই করে দেখা হয়নি। কাজেই মানুষ এ ধরনের কোনো জীবন ব্যবস্থা রচনা করতে সমর্থ হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন আমি করবো না ; আমি জিজ্ঞেস করবো যে, মানুষ এ প্রচেষ্টায় সফল হতে পারে কি?
বস্তুত এটা অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সুতরাং এ সম্পর্কে ভাসা-ভাসাভাবে আলোচনা করা সমীচিন হবে না। কাজেই সর্বপ্রথম ভালভাবে বুঝে নিতে হবে যে, এখানে যা রচনা করার কথা বলা হচ্ছে, সে জিনিসটি আসলে কি? এবং যে তা রচনা করতে চায়, তারই বা যোগ্যতা ও ক্ষমতা কতখানি?
মানুষের জন্য ‘দীন’ বা জীবন পদ্ধতি একান্তভাবে অপরিহার্য, উপরে তার বাস্তব রূপ এবং পরিচয় দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের বিশেষভাবে বিচার করে দেখতে হবে যে, এ ধরণের কোনো জীবন ব্যবস্থা যদি মানুষ নিজেই- আল্লাহর সহায়তা ভিন্ন রচনা করতে চেষ্টা করে, তবে সে চেষ্টা কোনোক্রমেই কি সফল হতে পারে? ইতিপূর্বে মানুষ এমন কোনো জীবন ব্যবস্থা রচনা করতে সমর্থ হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন আমি আপনাদের কাছে করবো না ; কারণ তার উত্তরে আপনাদের সকলকেই নিশ্চিতরূপে ‘না’ বলতে হবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। বর্তমান যুগে যারা বড় গলায় নিজেদের রচিত ‘দীন’ বা জীবন ব্যবস্থা পেশ করছে এবং সেজন্য পরস্পর মারাত্মক সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছে, তারাও এমন দাবি করতে পারে না যে, তাদের কারো ‘দীন’ বা জীবন ব্যবস্থা মানুষ হিসাবে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কারো ‘দীন’ গোত্রীয় ও জাতিগত, কারো ‘দীন’ বিশেষ কোনো ভৌগলিক অঞ্চলের জন্য, কারো ‘দীন’ শ্রেণীগত কারো ‘দীন’ অতীত এক যুগের প্রয়োজন অনুসারে রচিত হয়েছিল। কাজেই তা অনাগত যুগের অবস্থা ও সমস্যার সমাধানে কিছুমাত্র কার্যকরি হবে কি না সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। কারণ যে যুগ এখন চলছে, তার ঐতিহাসিক প্রয়োজন এখনো যাচাই করে দেখা হয়নি। কাজেই মানুষ এ ধরনের কোনো জীবন ব্যবস্থা রচনা করতে সমর্থ হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন আমি করবো না ; আমি জিজ্ঞেস করবো যে, মানুষ এ প্রচেষ্টায় সফল হতে পারে কি?
বস্তুত এটা অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সুতরাং এ সম্পর্কে ভাসা-ভাসাভাবে আলোচনা করা সমীচিন হবে না। কাজেই সর্বপ্রথম ভালভাবে বুঝে নিতে হবে যে, এখানে যা রচনা করার কথা বলা হচ্ছে, সে জিনিসটি আসলে কি? এবং যে তা রচনা করতে চায়, তারই বা যোগ্যতা ও ক্ষমতা কতখানি?
0 comments: