আল ইসলাম (الاسلام)
এখন ‘ইসলাম’ শব্দটির আলোচনা করা যাক। আরবি ভাষায় ‘ইসলাম’ (الاسلام) অর্থ আত্মসমর্পণ করা, নত হওয়া, আনুগত্য স্বীকার করা, নিজের ইচ্ছায় নিজেকে কারো নিকট সোপর্দ করে দেয়া। কিন্তু বিশেষ লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, কুরআন শুধু ‘ইসলাম’ বলেনি, তার সাথে আলিফ-লাম যোগ করে ‘আল ইসলাম’ বলেছে ; এটা কুরআনের একটি পরিভাষা। অতএব এ বিশিষ্ট পারিভাষিক শব্দের অর্থ হলো আল্লাহর সম্মুখে নত হওয়া, তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা, তাঁর নিকট নিজের যাবতীয় আযাদী পরিত্যাগ করা এবং নিজেকে সম্পূর্ণভাবে তাঁরই নিকট সমর্পণ করে দেয়া। কিন্তু এ আত্মসমর্পণ, আনুগত্য ও অধীনতা স্বীকার করার অর্থ প্রাকৃতিক নিয়মের (law of nature) সম্মুখে নিজেকে সোপর্দ করে দেয়া নয় যারা এ অর্থ গ্রহণ করতে চেষ্টা করে তারা ভ্রান্ত। পক্ষান্তরে মানুষের নিজের চিন্তা-কল্পনা, নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতালব্ধ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নির্দেশের কাল্পনিক ধারণার আনুগত্য করাও নয়, যদিও ভুলবশতঃ কোনো কোনো লোক এরূপ ধারণা করে থাকে। বস্তুত তার অর্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা নিজেই নিজের রসূলের মারফতে মানুষের জন্য যে চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি নাযিল করেছেন, সম্পূর্ণরূপে তাই গ্রহণ করা এবং নিজের চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা, অন্য কথায় চিন্তা ও কর্মের বিশিষ্টতা পরিত্যাগ করে তার আনুগত্য কবুল করাই আল্লাহর মনোনীত ও মনঃপুত পন্থা। একথাটিই কুরআন ‘আল ইসলাম’ শব্দ দ্বারা বুঝিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ‘ইসলাম’ নতুন যুগের সৃষ্ট কোনো ধর্ম নয় এবং আজ হতে সাড়ে তেরোশত বছর পূর্বে আরব দেশে হযরত মুহাম্মদ (সা) কর্তৃক তার প্রথম বুনিয়াদ স্থাপিত হয়েছিল এমন ধারণা করাও মারাত্মক ভুল। বস্তুত সর্বপ্রথম যেদিন এ ভূপৃষ্ঠে বসতি শুরু হয়েছে, সেদিনই আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন যে, তোমাদের জন্য এ ‘আল ইসলাম’-ই একমাত্র নির্ভুল জীবন ব্যবস্থা। অতপর দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে প্রত্যেক যুগের মানুষকে পথনির্দেশনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতো নবীই প্রেরিত হয়েছেন, তাঁদের সকলেই নির্বিশেষে এ এক ‘আল ইসলাম’-এর দিকে নিখিল মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। আর সর্বশেষে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)ও এদিকেই সকল মানুষকে পথনির্দেশ করেছেন। অবশ্য একথা সত্য যে, হযরত মূসা (আ)-এর অনুগামীগণ পরবর্তীকালে অসংখ্য বিভিন্ন মতবাদের সংমিশ্রণে ‘ইয়াহুদী’ নামে একটি স্বতন্ত্র ধর্ম রচনা করে নিয়েছে এবং হযরত ঈসা (আ)-এর অনুবর্তীগণও তদ্রুপ এক ‘খৃষ্ট ধর্মের’ উৎপত্তি করে নিয়েছে। এরূপে ভারতবর্ষ, ইরান, চীন এবং অন্যান্য দেশে প্রেরিত পয়গাম্বরদের উম্মতগণ বিভিন্ন মতবাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন নামে এক একটি ধর্ম রচনা করে নিয়েছে। কিন্তু এ মূসা (আ), ঈসা (আ) এবং অন্যান্য জ্ঞাত অজ্ঞাত সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামই সম্মিলিতভাবে এ এক ইসলামের দিকে আহবান জানিয়েছেন অন্য কিছুর দিকে নয়।
কুরআনের দাবি
উপরোক্ত বিশ্লেষণের পর কুরআনের দাবি অত্যন্ত স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে আমাদের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। মোটামুটি তার দাবি এ দাঁড়ায়, আল্লাহর সম্মুখে আনুগত্যের মস্তক অবনমিত করা এবং আল্লাহর প্রেরিত আম্বিয়ায়ে কেরামের মারফত প্রদর্শিত চিন্তা ও কর্মনীতি অনুসরণ করে চলাই নিখিল মানবজাতির জন্য একমাত্র নির্ভুল জীবন ব্যবস্থা বা ধর্ম। বস্তুত এটাই কুরআনের ঐকান্তিক দাবি। এ দাবি সত্যই গ্রহণযোগ্য কিনা তা বিশেষ বিচক্ষণতার সাথে আমাদের বিচার-বিবেচনা করে দেখতে হবে। স্বয়ং কুরআনের দাবির সত্যতা প্রমাণ করার জন্য যে যুক্তি উপস্থিত করেছে, সেগুলো তো আমাদের যাচাই করতে হবে। কিন্তু তার পূর্বে নিজেদের চিন্তা ও গবেষণাশক্তি প্রয়োগ করতে আমরা একবার একথার বিচার করে দেখতে পারি যে, কুরআনের এ দাবিকে দ্বিধাহীনচিত্তে কুবল করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় সত্যি কি আমাদের আছে?
জীবন ব্যবস্থার আবশ্যকতা
দুনিয়াতে মানুষের সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্য একটি জীবন ব্যবস্থা অপরিহার্য, এটা প্রমাণ করতে বিশেষ কোনো যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপিত করার প্রয়োজন হয় না। মানুষ নদী নয়, তাই নদীর ন্যায় তার পথ মাটির চড়াই-উৎরাইয়ের ভিতর দিয়ে আপনা আপনিই সুনির্দিষ্ট হয়ে যেতে পারে না। মানুষ বৃক্ষ নয় বৃক্ষের মত তার পথ প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন নির্ধারিত হতে পারে না। মানুষ নিছক পশুও নয়, পশুর জন্য কেবল জন্মগত প্রকৃতির পথনির্দেশই যথেষ্ট মানুষের জন্য নয়। মানুষ যদিও তার জীবনের একটি বিরাট অংশে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন তবুও সে তার জীবনের অন্যান্য অসংখ্য বিভাগে পশুর ন্যায় কোনো বাধাধরা নিয়মে এক কদমও চলতে পারে না।
বস্তুত এ বিভাগসমূহে তার সম্মুখে অসংখ্য পথের দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে থাকে, তাকে তা হতে একটি পথ নির্বাচন করে গ্রহণ করতে হয়। বিশ্বপ্রকৃতি মানুষের চিন্তাশীল মস্তিস্কের সম্মুখে চিন্তা ও গবেষণা করার জন্য অসংখ্য জটিল বিষয় উপস্থাপন করে, কিন্তু সেগুলোর কোনো স্পষ্ট সমাধান পেশ করে না। সে বিষয়গুলো সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে সুষ্ঠু মীমাংসা করে নেয়ার জন্য মানুষের জন্য একটি সুস্পষ্ট চিন্তা-পদ্ধতির প্রয়োজন। প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে ইন্দ্রিয়নিচয়ের সাহায্যে অসংখ্য তথ্য ও তত্ত্ব-জ্ঞান মানুষের সম্মুখে মস্তিস্কে জড়িভূত হয় ; কিন্তু সেগুলো একবারে বিক্ষিপ্ত ও বিশিষ্ট হয়ে থাকে প্রকৃতি সেগুলোকে সুশৃঙ্খল ও সংঘবদ্ধ করে দেয় না। তাই সে জ্ঞানরাশিকে সুসংবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মানুষের জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট পথ আবশ্যক। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের স্বভাব তার নিকট অসংখ্য ও বিভিন্ন দাবি পেশ করে, কিন্তু সেই দাবিগুলো পূর্ণ করার কোনো সুনির্দিষ্ট পথ সে পায় না। এ কারণে মানুষের ব্যক্তিগত আচার-আচরণের জন্য একটি মূলনীতি নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তার পারিবারিক জীবনের জন্য, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য, অর্থনৈতিক কাজ-কর্মের জন্য, দেশ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্বন্ধস্থাপনের জন্য এবং জীবনের অন্যান্য অসংখ্য বিভাগের জন্যও একটি সুনির্দিষ্ট পথ অপরিহার্য। যে পথে মানুষ কেবল ব্যক্তিগতভাবেই নয় একটি দল, একটি জাতি, একটি গোষ্ঠী হিসাবেও চলতে পারবে। স্বভাবগত নিয়ম অনুসারে মানব জীবনের বহু উদ্দেশ্য আছে, কিন্তু স্বভাব নিয়ম সেই উদ্দেশ্যগুলো সুস্পষ্টরূপে তার সম্মুখে পেশ করে না এবং সে উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য স্বভাব-নিয়ম কোনো পথও নির্দিষ্ট করে দেয় না।
বস্তুত এ বিভাগসমূহে তার সম্মুখে অসংখ্য পথের দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে থাকে, তাকে তা হতে একটি পথ নির্বাচন করে গ্রহণ করতে হয়। বিশ্বপ্রকৃতি মানুষের চিন্তাশীল মস্তিস্কের সম্মুখে চিন্তা ও গবেষণা করার জন্য অসংখ্য জটিল বিষয় উপস্থাপন করে, কিন্তু সেগুলোর কোনো স্পষ্ট সমাধান পেশ করে না। সে বিষয়গুলো সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে সুষ্ঠু মীমাংসা করে নেয়ার জন্য মানুষের জন্য একটি সুস্পষ্ট চিন্তা-পদ্ধতির প্রয়োজন। প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে ইন্দ্রিয়নিচয়ের সাহায্যে অসংখ্য তথ্য ও তত্ত্ব-জ্ঞান মানুষের সম্মুখে মস্তিস্কে জড়িভূত হয় ; কিন্তু সেগুলো একবারে বিক্ষিপ্ত ও বিশিষ্ট হয়ে থাকে প্রকৃতি সেগুলোকে সুশৃঙ্খল ও সংঘবদ্ধ করে দেয় না। তাই সে জ্ঞানরাশিকে সুসংবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মানুষের জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট পথ আবশ্যক। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের স্বভাব তার নিকট অসংখ্য ও বিভিন্ন দাবি পেশ করে, কিন্তু সেই দাবিগুলো পূর্ণ করার কোনো সুনির্দিষ্ট পথ সে পায় না। এ কারণে মানুষের ব্যক্তিগত আচার-আচরণের জন্য একটি মূলনীতি নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তার পারিবারিক জীবনের জন্য, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য, অর্থনৈতিক কাজ-কর্মের জন্য, দেশ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্বন্ধস্থাপনের জন্য এবং জীবনের অন্যান্য অসংখ্য বিভাগের জন্যও একটি সুনির্দিষ্ট পথ অপরিহার্য। যে পথে মানুষ কেবল ব্যক্তিগতভাবেই নয় একটি দল, একটি জাতি, একটি গোষ্ঠী হিসাবেও চলতে পারবে। স্বভাবগত নিয়ম অনুসারে মানব জীবনের বহু উদ্দেশ্য আছে, কিন্তু স্বভাব নিয়ম সেই উদ্দেশ্যগুলো সুস্পষ্টরূপে তার সম্মুখে পেশ করে না এবং সে উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য স্বভাব-নিয়ম কোনো পথও নির্দিষ্ট করে দেয় না।
মানব জীবনের অখণ্ডত্ব
মানব জীবনের অসংখ্য দিক ও বিভাগে একই নিয়ম ও বিধান অবলম্বন করা মানুষের পক্ষে অপরিহার্য। কারণ প্রকৃতপক্ষে এদিক ও বিভাগগুলো পরস্পর বিরোধী, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরস্পরের প্রতি অনির্ভরশীল নয়। এজন্যই তার কোনো একটি ক্ষেত্রেও মানুষ আলাদা পথ ও বিভিন্ন প্রকারের বিধান অবলম্বন করতে পারে না। মানুষ যদি জীবনের বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন মত ও পথ অবলম্বন করে এবং সে মত ও পথের প্রত্যেকটির লক্ষ্য ও পাথেয় যদি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হয়, সে পথে চলার ধরণ ও পন্থা যদি বিভিন্ন হয়, সে পথে চলার উদ্দেশ্য যদি ভিন্নতর হয় এবং তার লক্ষ্য ও মঞ্জিল মকসুদও যদি আলাদা হয়, তবে মানুষের জীবন অত্যন্ত দুঃসহ হয়ে পড়তে বাধ্য। মানুষ এবং মানব জীবনের সমস্যাগুলো যদি একটু তীক্ষ্ন দৃষ্টি ও গভীর মননশীলতার সাথে বুঝতে চেষ্টা করা হয়, তবে মানুষ নিশ্চিতরূপে জানতে পারবে এবং মানতে বাধ্য হবে যে, মানব জীবন সামগ্রীকভাবে একটি অবিভাজ্য সত্তা। তার প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগ এবং প্রত্যেকটি অংশই পরস্পরের সাথে এক গভীর ও অটুট বন্ধনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ অংশ ও বিভাগগুলোকে কিছুতেই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। অধিকন্তু এরা পরস্পরের উপর অনিবার্যরূপে প্রভাবশীল ও একটি অপরটি কর্তৃক প্রভাবান্বিত। এদের সকলের ধমনীতে একই রক্ত প্রবাহিত হয়। একই প্রাণশক্তি সবগুলোকেই সঞ্জীবিত ও সচেতন করে রাখে এবং এগুলোর নিবিড় সম্মিলনে যে বস্তুটি সৃষ্টি হয়, তারই নাম জীবন।
কাজেই মানুষের অসংখ্য লক্ষ্য ও বিবিধ উদ্দেশ্যের প্রয়োজন নেই। তার জন্য চাই একটি মাত্র কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য। সে একই উদ্দেশ্যের সাথে ছোট বড় সমগ্র উদ্দেশ্যই পূর্ণ আনুকুল্য ও সামঞ্জস্যের সাথে এমনভাবে যুক্ত ও মিলিত হবে যে, সে একই উদ্দেশ্য লাভের সাধনার ফলে অন্যান্য সমগ্র উদ্দেশ্যই আপনা আপনি লাভ হতে পারবে। মানুষের জন্য অসংখ্য পথের আবশ্যকতা নেই তার প্রয়োজন শুধু একটি মাত্র পথ, যে পথে সে তার সমগ্র জীবনকে জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগকে নিয়ে পূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্য সহকারে স্বীয় লক্ষ্যের দিকে চলতে পারবে। চিন্তা-গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-শিল্প, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম ও চরিত্র, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ইত্যাদির জন্য মানুষের আলাদা আলাদা মত, পথ ও নীতির কোনো প্রয়োজন নেই। তার জন্য চাই একটি ব্যাপক ব্যবস্থা, যার অধীনে এ সমস্ত দিক পূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্যের সাথে একত্রিত ও মিলিত হবে। সেই ব্যাপক ব্যবস্থায় মানুষের এ সমগ্র বিভাগের জন্য একই প্রকৃতি এ ভাবধারা সমন্বিত আলাদা আলাদা ব্যবস্থা বর্তমান থাকবে, যা অনুসরণ করে ব্যক্তি তথা মানব জাতি এবং সামগ্রিকভাবে গোটা মানবতা তার উচ্চতম ও চরম লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। বর্বরতার অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে মানব জীবনকে বিভিন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ বিভাগে বিভক্ত করা সম্ভব বলে মনে করা হতো।
এ যুগেও যদি এ ধরনের অর্থহীন মতাবলম্বী লোক বর্তমান থেকে থাকে, তবে হয় তারা একান্তভাবে প্রাচীন মতের অন্ধ আবেষ্টনীতে এখনও বসবাস করছে, অতএব তারা দয়ার পাত্র ; নয়তো তারা প্রকৃত তত্ত্ব জানতে পেরেও বিশেষ কোনো স্বার্থের বশবর্তী হয়ে এ অবলীলাক্রমে প্রচার করে যাচ্ছে। তারা একথা বলতে পেরেছে যে, মানব সমাজে তারা যে ব্যবস্থার প্রচলন করতে ইচ্ছুক, তার বিরোধী মতাবলম্বী অসংখ্য লোক সেই সমাজে বর্তমান। সেসব লোককে প্রতারিত করার জন্য তারা উদাত্ত কণ্ঠে বলে বেড়ায় যে, তোমরা আমাদের উপস্থাপিত ব্যবস্থায় তোমাদের জীবনের প্রিয় ক্ষেত্রগুলোতে পূর্ণ আযাদী ও নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে। অথচ জীবনের বিশেষ বিশেষ বিভাগে এক ধরনের বিধান অনুসরণ করলে অন্যান্য কয়েকটি বিভাগে সে বিধানকে অমান্য করে চলা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসম্ভব, প্রাকৃতিক নিয়মের বিরোধী এবং কার্যত তা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আমার মনে হয়, এ ধরনের কথা যারা বলে বেড়ায়, তারা নিজেরাও মর্মে মর্মে বুঝতে পারে যে, এটা বস্তুতই সম্ভব নয় ; প্রত্যেক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাই জীবনের সমগ্র বিভাগকে তার নিজের ভাবধারা ও প্রকৃতির অনুরূপ ঢেলে সাজায়, লবনের খনিতে যাই পড়বে, খনি তাকেই লবনে পরিণত করে নিবে, তা সর্বজনবিদিত সত্য।
কাজেই মানুষের অসংখ্য লক্ষ্য ও বিবিধ উদ্দেশ্যের প্রয়োজন নেই। তার জন্য চাই একটি মাত্র কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য। সে একই উদ্দেশ্যের সাথে ছোট বড় সমগ্র উদ্দেশ্যই পূর্ণ আনুকুল্য ও সামঞ্জস্যের সাথে এমনভাবে যুক্ত ও মিলিত হবে যে, সে একই উদ্দেশ্য লাভের সাধনার ফলে অন্যান্য সমগ্র উদ্দেশ্যই আপনা আপনি লাভ হতে পারবে। মানুষের জন্য অসংখ্য পথের আবশ্যকতা নেই তার প্রয়োজন শুধু একটি মাত্র পথ, যে পথে সে তার সমগ্র জীবনকে জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগকে নিয়ে পূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্য সহকারে স্বীয় লক্ষ্যের দিকে চলতে পারবে। চিন্তা-গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-শিল্প, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম ও চরিত্র, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ইত্যাদির জন্য মানুষের আলাদা আলাদা মত, পথ ও নীতির কোনো প্রয়োজন নেই। তার জন্য চাই একটি ব্যাপক ব্যবস্থা, যার অধীনে এ সমস্ত দিক পূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্যের সাথে একত্রিত ও মিলিত হবে। সেই ব্যাপক ব্যবস্থায় মানুষের এ সমগ্র বিভাগের জন্য একই প্রকৃতি এ ভাবধারা সমন্বিত আলাদা আলাদা ব্যবস্থা বর্তমান থাকবে, যা অনুসরণ করে ব্যক্তি তথা মানব জাতি এবং সামগ্রিকভাবে গোটা মানবতা তার উচ্চতম ও চরম লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। বর্বরতার অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে মানব জীবনকে বিভিন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ বিভাগে বিভক্ত করা সম্ভব বলে মনে করা হতো।
এ যুগেও যদি এ ধরনের অর্থহীন মতাবলম্বী লোক বর্তমান থেকে থাকে, তবে হয় তারা একান্তভাবে প্রাচীন মতের অন্ধ আবেষ্টনীতে এখনও বসবাস করছে, অতএব তারা দয়ার পাত্র ; নয়তো তারা প্রকৃত তত্ত্ব জানতে পেরেও বিশেষ কোনো স্বার্থের বশবর্তী হয়ে এ অবলীলাক্রমে প্রচার করে যাচ্ছে। তারা একথা বলতে পেরেছে যে, মানব সমাজে তারা যে ব্যবস্থার প্রচলন করতে ইচ্ছুক, তার বিরোধী মতাবলম্বী অসংখ্য লোক সেই সমাজে বর্তমান। সেসব লোককে প্রতারিত করার জন্য তারা উদাত্ত কণ্ঠে বলে বেড়ায় যে, তোমরা আমাদের উপস্থাপিত ব্যবস্থায় তোমাদের জীবনের প্রিয় ক্ষেত্রগুলোতে পূর্ণ আযাদী ও নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে। অথচ জীবনের বিশেষ বিশেষ বিভাগে এক ধরনের বিধান অনুসরণ করলে অন্যান্য কয়েকটি বিভাগে সে বিধানকে অমান্য করে চলা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসম্ভব, প্রাকৃতিক নিয়মের বিরোধী এবং কার্যত তা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আমার মনে হয়, এ ধরনের কথা যারা বলে বেড়ায়, তারা নিজেরাও মর্মে মর্মে বুঝতে পারে যে, এটা বস্তুতই সম্ভব নয় ; প্রত্যেক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাই জীবনের সমগ্র বিভাগকে তার নিজের ভাবধারা ও প্রকৃতির অনুরূপ ঢেলে সাজায়, লবনের খনিতে যাই পড়বে, খনি তাকেই লবনে পরিণত করে নিবে, তা সর্বজনবিদিত সত্য।
0 comments: