শহীদ কামারুজ্জামানঃ অসিয়তনামা ও পরিবারের প্রতি উপদেশ

গ্রেপ্তারে আগেই তিনি লিখিতভাবে কিছু অসিয়ত করে গেছেন শহীদ নেতা কামারুজ্জামান। সেই অসিয়তই কার্যকর হচ্ছে বলে জানি্যেছে তার পরিবার।

কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী জানান, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরে সাংবাদিক আবাসিক পল্লীতে একটি ছয়তলা বাড়ি, শেরপুর শহরে একটি বাড়ি, শেরপুর ও গাজীপুরে জমি এবং কামারুজ্জানের উত্তরাধিকার সূত্রে শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে পাওয়া জমি ও বাড়ি রয়েছে। ঢাকা ও শেরপুর শহরের বাড়ি থেকে তারা ভাড়া পান। এর বাইরে কিছু জমানো টাকা আছে। তবে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই বলে দাবি করেন হাসান ইকবাল।



কামারুজ্জামানের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা হলেন- হাসান ইকবাল, হাসান ইকরাম, হাসান জামান, হাসান ইমাম এবং আহমেদ হাসান। আর মেয়ে সবার ছোট আতিয়া নূর। কামারুজ্জামানের স্ত্রীর নাম নূরুন্নাহার।

প্রথম তিন ছেলে বিয়ে করেছেন। দুই ছেলে দেশের বাইরে। হাসান ইকরাম সুইডেনে হিউম্যান রাইটস-এর ওপর পড়াশোনা করছেন। আর হাসান জামান টেলিকমিউনিকেশনের ওপর পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়াতেই চাকরি করছেন। বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় দেশে থাকছেন না তারা।

বড় ছেলে হাসান ইকবাল বন্ধ হয়ে যাওয়া দিগন্ত টেলিভিশনের রিসার্চ ডাইরেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। দেশে থাকা আরো দুই ছেলে হাসান ইমাম এবং আহমেদ হাসান চাকরি করেন। কামারুজ্জামানের মেয়ে আতিয়া নূর মনিপুর স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। স্ত্রী নূরুন্নাহার লেখালেখি করেন।

কামারুজ্জামানের অসিয়ত অনুযায়ী, তার দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর স্ত্রী নূরুন্নাহার পরিবারের অভিভাবক হবেন। আর মেয়ে আতিয়া নূর সাবালক ও বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই থাকবেন। তার পড়াশোনা এবং বিয়ের খরচ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকেই বহন করা হবে।

পরিবারের সদস্যদের যতদিন সম্ভব একই বাড়িতে থাকতে বলেছেন কামারুজ্জামান। এ কারণে তার প্রবাসী দুই ছেলেসহ তিন ছেলের স্ত্রীরা ঢাকার মিরপুরের বাসাতেই থাকেন। নূরুন্নাহার যখন মনে করবেন, সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে দেবেন। ভাগ-বাটোয়ারা হবে ইসলামি পারিবারিক আইন অনুযায়ী। দায় দেনা যা আছে তাও শোধ করতে বলেছেন তার সম্পদ থেকে।

হাসান ইকবাল জানান, বাবা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন গ্রেপ্তার হবেন এবং গ্রেপ্তারের পর আর ছাড়া পাবেন না। এমনকি সর্বোচ্চ দণ্ডের ব্যাপারেও বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই অসিয়ত করে যান।






‘চিন্তা করো না, আল্লাহ চান তো তোমাদের সবার সাথে দেখা হবে জান্নাতে। তোমরা সবাই সৎ জীবনযাপন করবে। হালাল রুজি কামাই করবে’- কথাগুলো বলেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। গত ৬ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তার সাথে সাক্ষাত করেন। মনে হচ্ছিল এটাই তাদের শেষ সাক্ষাত। ওই বিবেচনাতেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা বলেছেন, তার এ মৃত্যু নিঃসন্দেহে শহিদি মৃত্যু। তিনি এজন্য আনন্দিত। এভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেছেন, কতভাবে কত মানুষের মৃত্যু হয়। যেকোনো দুর্ঘটনা বা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারতেন। কিন্তু এ মৃত্যু আনন্দের। মৃত্যু নিয়ে তিনি ভীত নন।

গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষ দুপুরের পর কামারুজ্জামানের মিরপুরের বাসায় চিঠি পাঠায়। বিকেল পাঁচটার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কারাগারে কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাতের জন্য যেতে বলা হয়। কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নিসহ মোট ১৬ জন সদস্য সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামিও ছিলেন এ ১৬ জনের মধ্যে।

হাসান ইকবাল ওয়ামি তার পিতার সাথে ওই সাক্ষাৎ বিষয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা আমাদের বলেছেন, তার অবর্তমানে আমাদের মা আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের নসিহত করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে আমরা যেন কোনোভাবেই বিচলিত না হই। তিনি বলেছেন, তিনি জুলুমের শিকার। ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা এবং রাজনীতির কারণেই তার আজকের এ পরিণতি। তিনি আমাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ চান তো একদিন তোমাদের সবার সাথে দেখা হবে জান্নাতে।

হাসান ইকবাল বলেছেন, একদিন এদেশে ইসলামের বিজয় হবে সেটাই আব্বার আশা। একদিন এ দেশের তরুণরা সত্য ইতিহাস জানবে।

আপনাদের পক্ষ থেকে তাকে কী বলেছেন জানতে চাইলে হাসান ইকবাল বলেন, আমরা আব্বার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলেছি আইনি লড়াইয়ে আমরা তাকে মুক্ত করতে আনতে পারলাম না। এজন্য আমরা দুঃখিত। 

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম