শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের দাফন অনুষ্ঠানঃ এক বিরল অভিজ্ঞতা

সন্ধ্যার পর থেকেই ভাবছিলাম কিভাবে শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের দাফন অনুষ্ঠানে হাজির থাকা যায়। আমাদের শংকা ছিল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের মত একইরুপ আচরন করবে সরকার।রাত ৮ টা পর্যন্ত আমার বাসায় ১০ জনের উপস্থিতি। ঠিক করলাম একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যেতে হবে। রওয়ানা হয়েছি রাত তখন নয় টা। পথিমধ্যে দায়িত্বশীল পরামর্শ দিলেন নিরাপত্তারক্ষীদের চক্ষু ফাকি দেওয়ার জন্য প্যান্টের পরিবর্তে লুঙ্গি পরে যেতে হবে, নইলে ব্যরিকেডে পরার আশংকা আছে। অগত্যা শেরপুর শহরে নিকটাত্বীয়ের বাসায় গিয়ে দুজনে লুঙ্গি সংগ্রহ করে পরে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে এক ঘন্টা ঝড়বৃষ্টির কারনে বিলম্বে রাত সাড়ে বারটায় কবর স্থানের নিকটে যখন পৌছি, তখনই প্রবেশ পথে আড়াআডি ভাবে র‌্যাবের গাড়ী দাড় করানো। বিকল্প পথে যেতে আবারো ব্যাব পুলিশের বাধা, জানাজা সকালে হবে এখন যাওয়ার দরকার নেই, সেই সাথে গ্রেফতারের হুমকি। অগত্যা কবর স্থান থেকে দুইশত গজ দুরে রাস্তার পার্শ্বে দোকানের টংয়ে এক সাথে চার জনের অপেক্ষার পালা।


রাত তিনটার দিকে হ্যান্ড মাইকে আওয়াজ যারা জানাজার জন্য এসেছেন তারা স্বসন্মানে চলে যান। কবর স্থঅনের পার্শ্বে মাদরাসায় তখন হাজার খানেক লোকের অবস্থান। জনতা যেতে না চাইলে পুলিশের বেপরোয়া লাঠি চার্জ। তখন অনেকেই দৌড়ে পাশেই ধানের চাতালে অবস্থান নেন। ইত্যবসরে রাত সোয়া চারটার দিকে শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের কফিন এসে হাজির। র‌্যাব পুলিশের গাড়ীর বিকট আওয়াজ দর্শনার্থী কাউকেই কাছে যেতে দিচ্ছেনা। সীমিত সংখ্যাক লোকদের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হলো, তারা বুঝাতে চায় যে জানাজা পড়ার লোকও নেই। দুর থেকেই হাজারো জনতা নিদারুন কষ্ট নিয়ে শুধু তাকিয়েই ছিলাম। আমরাও পাশের চাতালে হাজার খানে লোকের উপস্থিতিতে জানাজা পড়ে নিলাম।

পরে সাহস করে রওয়ানা হলাম কবরের দিকে। তখন সময় ভোর ৫.৪০ টা। কবরে পৌছামাত্র কি এক হ্রদয় বিদারক দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষের গগন বিদারী আহাজারী। কবরের মাটি ছুয়ে সেকি কান্না। মনে হলো আল্লাহর আরশ বুঝি কেপে উঠবে। জালিমরা হয়তো এখনি নিঃশেষ হয়ে যাবে। ততক্ষনে মিডিয়া ও আইন শৃংখলা বাহিণীর কিছু গাড়ী সরে গিয়েছে। জামালপুর জেলা আমীরকে প্রস্তাব করলাম, শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের কবরকে সামনে রেখে আরও একটি জানাজা হউক। কিন্তু লোকের এত উপস্থিতি যে স্থান সংকুলান করা সম্ভব হলোনা। অগত্যা ৫০ গজ দুরে পাশের মাদরাসা মাঠে আবারো জানাজা হলো। সেখানেও আইন শৃংখলা বাহিনীর বেপরোয়া আচরন। মাঠের পূর্বের অংশের অর্ধেক লোককে জানাজায় শরীক হতে দিলনা। মাঝখানে ব্যরিকেড দিয়ে রাখলো। উত্তেজিত জনতা নারায়ে তাকবীর শ্লোগানে আকাশ বাতাশ মূখরিত করে তুললো। শান্তি পূর্ণ ভাবেই জানাজা শেষ হলো। যার ছবি বাশের কেল্লায় ছাপা হয়েছে দেখলাম। জানাজা শেষে আবারো মুনাজাত।

উপস্থিত হাজারো মুছুল্লি হ্রদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। তার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার প্রতিজ্ঞা করলেন। ততক্ষনে পূর্ব দিগন্তে সূর্য্যরে আলোয় কবর স্থান আলোকিত হয়ে উঠেছে। কোটি তরুনের প্রানোদিপ্ত ও জাগরনী নেতার কবর যেন হাসছে।

মুহাম্মদ আব্দুল আওয়াল এড.
প্রচার বিভাগ সহকারী, জেলা জামায়াত, জামালপুর।


 ঝড়-বৃষ্টিতে রাতভর অপেক্ষা, পরিবারের লোক ব্যতিত জানাজায় অংশগ্রহনে বাধা, হাজারও জনতার খন্ডে খন্ডে গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহন, বাধা উপেক্ষা করে শহীদ কামারুজ্জামানের কবরের পাশে জনতার ঢল, শহীদের জন্য আল্লাহর দরবারে মোনাজাত।

হে আল্লাহ! শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশে ইসলামের বিজয় দান কর।আমীন।






আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, এই মুহূর্তে আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ কি ?
__
উত্তর হিসেবে বলবো শহীদী কাফেলার জন্য জীবন উৎসর্গিত ভাইদের জানাজায় উপস্হিত হওয়া !
___
মরহুম আলহাজ্ব কামারুজ্জামান ভাইয়ের গায়েবানা নামাজ পড়া উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আসরের আগেই। পথিমধ্যে এক দিনমজুর লেবার চাচা কে বললাম চাচা গায়েবানা পড়বেন নাহ ? হাত ধরে অঝোরে কেঁদে বললো, বাবা এই মুহূর্তে দুটা ট্রাক লোড শুরু হবে।ওদিকে যাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করছে। রোজগার ইদানীং নাই বললে চলে। মনের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেল। হাত আরও শক্ত করে বললাম চাচা আপনি থাকেন, যাওয়া লাগবেনা । এই জানাজা পড়া ফরজ কিছু নয়। তারপর ওনাকে ছেড়ে আরও সামনে এগুলাম। দেখি বেশকয়েকজন মুরুব্বি চলছেন জানাজার দিকে। তাদের স্পিড দেখে সন্দেহ হল আদৌ পৌছাতে পারবে কি নাহ সময়ের মধ্যে। ভান ঠিক করে উঠিয়ে নিয়ে চললাম...
____
দূর থেকে দেখলাম অনেক লোকজন, সাদা পাঞ্জাবি গুলো ময়দানে পায়চারি করছে। এক্কেবারে আজানের সময় পৌছিয়ে দেখি বাজারে যেই চাচা কে রেখে এলাম সেই চাচা আম গাছের গোড়ায় গুটিসুটি হয়ে বসে। আল্লাহু আকবর। দেখেই আবার চোখ ভিজে গেল এই ভালবাসা দেখে, আহারে জীবনে দেখেনি, কথা শুনেনি অথচ এমন এক ব্যক্তির জন্যে দিনমজুর -দীন আনে দীন খাওয়া লোক চলে এসেছে। কাধে হাত রাখতেই বলে উঠলো, বাবা থাকতে পারি নাই। অমুক ভাইয়ের গাড়িতে চড়ে চলে আইছি....
_____
যথাসময়ে আসর শেষে নামাজ এর কাতারবন্দি হলাম। দায়িত্ব অনুযায়ী কিছু দায়িত্ব পালন করে আবার কাতারে দাড়িয়ে গেলাম। ওয়াল্লাহী এমন একজন পাইনি যার মুখে এক চিলতে হাসি ছিল। অন্যান্য যেকোন কর্মসূচি, হোক জামায়াত কিংবা শিবিরের ভাইব্রাদার মুরুব্বিরা মুখভারা হাসিতে কথা বলতো। আমার পাশের এক চাচা নাকি কাল রাত থেকে ঘরের বারান্দায় শোয়া। না ঘরে ঢুকেছিল না বাড়ির বাইরে বেড়িয়েছেন। সোকে মরা গাছের মত ভেঙে পরেছেন....
______
মুহতারাম থানা শিবির, জেলা শিবির, থানা জামায়াত, জেলা জামায়াত দায়িত্বশীল(বারকাল্লাহ-হু-ফি-হায়াতি) ভাই-চাচাদের কান্না মিশ্রিত আওয়াজ অন্তরের ভেতর আরও হুল ফুটিয়ে দিচ্ছিল। জানাজায় কেঁদে বুক ভাসিয়েছিল ছোট্ট একটি মাসুম ছেলে। ছোট বড় প্রায় সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সালাত শেয করেছে....
_______
উপরে বলেছিলাম যে উত্তর টি সেটির অন্যতম কারন গায়েবানা শেষে দোয়ার দাঁড়াতে আমার পা অক্ষম ছিল। নিজের পিতামারা গেলেও বুঝি এতো কাঁদেন নাই অনেকে যারা আজ চিৎকার করে করে কেঁদেছে। মুহতাম জেলা জামায়াত চাচা অনেক কাছ থেকে কামারুজ্জামান ভাইকে দেখেছেন, জানেন। তেনার গলারকাঁটা মুরগির মত আহাজারি বারবার আমার দম বন্ধ করিয়ে দিয়েছে। আয় আল্লাহ এত ভালবাসা আসে কোথা হতে? এ মহিমা কার দান ?
________
হে পরওয়ারে আলম, রাহমানুর রহিম তুমি প্রিয় কামারুজ্জামান ভাইকে কবুল করে নিয়েছ বলে আমাদের বিস্বাস। কারন একজন শহীদের শাহাদাত শরীয়ত মোতাবেক কেমন হয় তা আমরা জানি। তবুও তুমিই ফায়সালাহ দেনেওয়ালা। তাই ভাইয়ের রুহের মাগফেরাতের কামনা করি, তোমার ওয়াদা মাফিক ভাইয়ের উত্তম পুরুস্কার মহা পবিত্র জান্নত দান চাই..

- জ্যাস

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম