An Islamic history of Europe : full Documentary (BBC)
১ ঘন্টা ২৮ মিনিট
যখন মুর (মুসলিম) ইউরোপ শাসন করতো
গ্রীক আর রোমান সভ্যতার পতন যখন ঘটলো পঞ্চম শতাব্দীতে, তারপর পাশ্চাত্যে বা ইউরোপে এক ধরনের অন্ধকার রাজত্ব বিরাজ করছিলো যাকে বলা হয় ডার্ক এজ। তখন সেখানে ছিল বার্বেরিয়ানদের রাজত্ব। ইউরোপকে এই অন্ধকার যুগ থেকে আলোর পথে কারা নিয়ে এসেছিলো? এই ইতিহাস আধুনিক পাশ্চাত্যের ইতিহাস শিক্ষায় অনেক দিন ধরে লুকিয়ে অথবা সরিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন তা বেড়িয়ে আসছে আস্তে আস্তে। ইউরোপ বা পাশ্চাত্য সভ্যতা উত্থানের পিছনে রয়েছে আল-আন্দালুসের মুসলিমরা।
ইসলামের যখন গোড়া পত্তন ঘটলো আরব দেশে ষষ্ঠ শতাব্দীতে, তারপর থেকে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়লো এবং তারা প্রথমে উত্তর আফ্রিকায় অভিযান চালিয়ে চালিয়ে স্পেনের কাছে চলে আসলো। স্পেনে তখন বার্বেরিয়ান ভিজিগোথদের রাজত্ব। মুসলমানরা স্পেন এর একটা বিশাল অংশ দখল করে নিল এবং সেটার নামকরণ হলো আল-আন্দালুস বা বর্বরদের দেশ। সেটা ৭১১ সালে।
এই মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের, শিল্প সাহিত্যের অনুরাগী ছিল। আর ইসলাম ধর্ম হিসেবে জ্ঞান আহরণকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে এসেছে। তখনকার যুগের জ্ঞান বিজ্ঞান মূলত গ্রীক আর রোমান সভ্যতা লদ্ধ জ্ঞান। মুসলিমরা এই জ্ঞান খুব দ্রুত করায়ত্ত করে ফেললো। অন্যদিকে সেই যুগের খ্রীষ্টানরা গ্রীক আর রোমান সভ্যতা বর্জন করে চলতো কারণ তাদের ধর্ম গ্রীক দেব-দেবীকে সমর্থন করতো না। তাই আমরা অষ্টম শতাব্দীতে দেখি আমরা আধুনিক মুসলিম আর গোঁড়া খ্রীষ্টানকে। ফলাফল যা হবার তাই, আজকের পুরো উলটো। মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞান, শৌর্যে-বীর্যে এগিয়ে গেল আর খ্রীষ্টানরা পড়ে রইলো অন্ধকার যুগে।
গ্রীক-রোমান সভ্যতা লদ্ধ জ্ঞান কৃষিকাজ, সেচকাজ, আস্ট্রোনমি, আস্ট্রোলজি ইত্যাদিতে কাজে লাগিয়ে আল-আন্দালুসের মুসলিমরা একেবারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করলো। যার ফলে কৃষিতে বাম্পার ফলন ঘটতো। প্রচুর খাদ্যের সম্ভার থাকায় অন্যান্য দিকেও সমৃদ্ধি ঘটতে লাগলো। তাই দেখা যেতো স্পেনের কর্ডোবাতে যখন স্ট্রীট ল্যাম্প ছিলো, সুরম্য অট্টালিকা এবং রানিং ওয়াটার ছিলো তখন লন্ডন, প্যারিস এই সব শহরগুলোতে লোকজন বলতে গেলে কুড়েঁ ঘরে বাস করছে।
স্পেনের কর্ডোবা, টলেডো, গ্রেনাডা এই শহরগুলো ছিলো এক একটি জ্ঞান বিজ্ঞানের সূতিকাগার। এখানে মুসলিম শাসকের রাজত্বে মুসলমান, ইহুদী আর খ্রীষ্টান স্কলাররা একসাথে হয়ে কাজ করতো। তাদের সবচেয়ে বড় অবদান যেটি সেটি হলো গ্রীক এবং রোমান যত জ্ঞানের আধার সেগুলো তারা ট্রান্সলেট করে নিয়ে আসছিল আরবী এবং অন্যান্য ইউরোপীয়ান ভাষায়। তারপর ব্রিটিশ পন্ডিত মাইকেল স্কট যখন স্পেনে আসলো তিনি এইগুলো ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দিলেন। এই জ্ঞান-ভান্ডার পরে ইউরোপের রেঁনেসা জাগাতে সাহায্য করে যেটি ইউরোপ বা পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে আসতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আজকে পশ্চিমা বিশ্বের যে দাপট তার পিছনে ইউরোপের মুসলমানদের অবদান অনেক। এ থেকে আজকের মুসলিমদের শিক্ষণীয় হচ্ছে বোমা, অস্ত্র শস্ত্র, ভায়োলেন্স দিয়ে নিজেদের অধিকার বা আধিপত্য সবসময় বিস্তার করা যায় না। পাশ্চাত্য সভ্যতা আজকে পৃথিবী শাসন করছে কারণ জ্ঞান বিজ্ঞানের আধার এখন পশ্চিম মুখী। ভারত, চীন ধীরে ধীরে উঠে আসছে এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটিয়েই। তাই এই থেকে পৃথিবীর অতি রক্ষণশীল এবং জংগী মুসলিমদের শিক্ষা হলো যে পাশ্চাত্যের সবকিছুর প্রতি ঘৃণার প্রকাশ না ঘটিয়ে, আল-কায়েদা, হিজবুল তাহিরি বা লস্কর-ই-তৈয়িবার ট্রেনিং ক্যাম্প ছেড়ে দলে দলে স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে যাত্রা করুন। আপনি যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবেন, সারা পৃথিবী আপনার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিবে। সে আপনি মুসলিম, খ্রীষ্টান, হিন্দু, ইহুদী যাই হোন না কেন। সাতশ থেকে চোদ্দশ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপে মুসলিম রাজত্বের মূর্ত প্রতীক আল-আন্দালুসের অস্তিত্ব থেকে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এটাই হতে পারে।
0 comments: