১৯শে মার্চ ২০১৫ । বেলা ১০:৪৫ আমি আর আম্মু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বাবার সাথে দেখা করবো বলে। ২০১৪ নভেম্বরে শেষ দেখা করে গিয়েছিলাম। আবেদন পত্র জমা দিলাম। কিছুক্ষন পরে আবেদন পত্র নিয়ে ফরত আসলো ডেপুটি জেলার বললো আপনার বৈদেশিক পার্সপোর্টে বাবার নাম নাই। বাবার নাম আর আপনার নাম আছে এমন পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কিন্তু গতবার এসেছিলাম এমন কোন কিছু তারা বলেনি। ভাগ্য ভালো সাথে বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইস্যন্সটা ছিলো। সেটা ফঠোকপি করে আবার জমা দিলাম। কিছুক্ষণ পরে আবার ফেরত আসলো বললো দেখা হবেনা। আমি কারাগারে আসার আগে জেল সুপার ফরমান আলীর সাথে আলাপ করেই এসেছিলাম। এটা বলতেই আমাকে আবেদনপত্র নিয়ে সরাসরি জেল সুপারের সাথে কথা বলতে বললো। আমি ভেতরে ঢুকে দেখলাম আর একজন ডেপুটি আমার আবেদন দেখে বললো আপনার পাসপোর্টে আপনার বাবার নাম নাই। তাই দেখা করা যাবে না।
আমি অনেক কষ্টে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে বাইরের কোন দেশের পাসপোর্টে পিতা/মাতার নাম থাকে না, তবু তিনি ইত্স্থ। পুনরায় আবার তিনি বড় কর্মকর্তার কামড়ায় ঢুকলেন। বড় কর্তা বেড়িয়ে এসে আমার চেহাড়া দেখে সেই ডেপুটি জেলা্রকে বললেন, চেহারা পোশাক আশাক দেখে বোঝেন না? একটা আবেদন পত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে কেন এতো, দেখা করতে দিলেইতো পাড়েন। ডেপুটি জেলার তার কামড়ায় বসালেন আবার আমার পাসপোর্ট ফটোকপি করলেন আর পুরানো নথি দেখে আমার নাম আর টেলিফোন নম্বর চেক করে মিলালেন। বুঝলাম হয়তো ভদ্রলোক অতি উতসাহি। কোন পাত্তা লাগালাম না কারন আমি দেখা করতে এসেছি এটাই আমার উদ্দেশ্য। উনি দরখাস্তে স্বাক্ষর করতে করতে আবার নতুন অনুযোগ শুরু করলেন। বললেন আজ আপনি দেখা করতে পারবেন কিন্তু আপনার আম্মাকে নির্ধারিত সময়েই দেখা করতে হবে, তার আগে নয়।
আমি শুধু বললাম আম্মা রোজা রেখে এসেছে বাইর একা বসে আছে, মানবিক কারনে দেখা করতে দেয়া উচিত। উনি রাজী হলেন না, আমিও আর কথা এগুলাম না। বাসা থেকে কিছু শুকনো খাবার আনা হয়েছিলো বাইরে গিয়ে সেগুলো নিয়ে আবার ভেতরে ঢুকলাম। আমাকে আর খাবার চেক করে হাতে সিলমোহর দিলো। ২য় গেইট পার হয়ে ৮নং সেল এর দিকে এগুচ্ছি সাথে ৪জন কারারক্ষী আর একজন ডেপুটি জেলারের এসকর্ট। সাধারণ কয়েদীদের রাস্তা খেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো এবং বলা হচ্ছিলো বসে পড়তে। আমি ধীরগতীতে এগুচ্ছিলাম আর আশেপাশের কয়েদীদের মাঝে আমার ফুফাতো ভাই আলীম আর ছোট মামাকে খোজার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পাইনি। ৮ নম্বর সেল এর কাছে আসতেই সেই পরিচিত কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পেলাম। দুজন কারারক্ষী গেইটের সামনে স্পেশাল ডিউটিতে ঘাড় ডানদিকে ঘো্ড়ালেই নজরে পরে একটি সিসি ক্যামেরা বাবার কক্ষ বরাবর তাক করা। কারারক্ষীরা গেইটের সামনে দাড়িয়ে গেলো। আব্বু কোরআন তেলাওয়াত করে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে আয়াত শেষ করে উঠে দাড়ালেন।
গত বছরের নভেম্বরে দেখা করে গিয়েছিলাম। তার রিভিউ এর আবেদনের পরে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের পরে আমি এসেছি বিধায় উনি জানেন না যে আমি এখন দেশে। আমি কাছে যেতেই কপালে চুমু খেলেন। অনেক কথা হলো সবার খোজ নিলেন। আম্মু রোযা এবং বাইরে একা আছে শুনে কথা দির্ঘায়িত করলেন না। যানিনা কি মনে করে ডেপুটি জেলার শিকের দড়জাটা খুলে দিলেন। বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবার কপালে চুমু খেলেন। আমি পেছন ফিরে চলে আসার সময় আবার তাকালাম বাবার দিকে তাকে অনেক প্রপ্ফুল লাগলো। আমি গেইট পার হতেই আবার সেই কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পেলাম আস্তে আস্তে সেই চিরচেনা সুমধুর কন্ঠের তেলাওয়াত চলে গেলো, মনে হলো কেউ মনে হয় ধীরে ধীরে ভলিউমটা কমিয়ে দিলো...
0 comments: