শবে বরাত নিয়ে এতো বিভ্রান্তি কেন?
শবে বরাতের হাকিকত কি?
-----------------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
০২/০৬/২০১৫
-----------------------------------
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। শবে বরাত কি? শবে বরাত নিয়ে এতো বিভ্রান্তি কেন? ১৪ শাবানের রাতই কি শবে বরাত? এ রাতকে কেন্দ্র করে যেসব আচার অনুষ্ঠান হয়, হালুয়া রুটি বিতরণ হয়, আতশবাজি হয়, সেগুলো কি ইসলামে নির্দেশিত? এ রাতের পক্ষে বিপক্ষে বহুকথা শোনা যায়। এ রাতের প্রকৃত মর্যাদা ও হাকিকত কি? প্রকৃত বিষয় জানাবেন কি?
জবাবঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
শবে বরাত এবং ১৪ শাবানের রাত সম্পর্কে আজকেসহ গত কয়েক দিনে অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে। প্রশ্নগুলো প্রায় কাছাকাছি ধরনের। প্রশ্নগুলো উপরে উল্লেখ হয়েছে। এসব প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব হলো:
০১. 'শব-ই বরাত' কথাটি ফার্সি। উর্দুতেও ব্যবহার হয়। বাংলাদেশেও এটি পরিচিত কথা। 'শব' মানে- রাত বা রজনী। 'বরাত' মানে-ভাগ্য। 'শবে বরাত' মানে- 'ভাগ্যরজনী'।
০২. ১৪ শাবান -এর রাতকে হাদিসে 'লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান' বলা হয়েছে। এর অর্থ- মধ্য বা অর্ধ শা'বানের রাত।
০৩. এখন প্রশ্ন হলো, ১৪ শাবান বা মধ্য শাবানের রাতই কি 'ভাগ্যরজনী'? -এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও অকাট্য জবাব হলো- 'না'।
০৪. তাহলে প্রশ্ন আসে- এ রাত 'শবে বরাত' বা ভাগ্যরজনী হিসেবে পরিচিত হলো কিভাবে?
এর জবাব হলো, তাবেয়ী ইকরামা রহ. সূরা ৪৪ আদ দুখানের ৩-৪ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই 'ভুল' করেছেন। আয়াত দুটি হলো:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ • فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
অর্থ: "আমরা এটি (এ কুরআন) নাযিল করেছি এক মুবারক রাত্রে। আমরা (এর দ্বারা মানব জাতিকে) সতর্ক করছি। সে রাত্রে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফায়সালা করা হয়।" (আল কুরআন ৪৪: ৩-৪)
০৫. ইকরামা রহ. এই 'মুবারক রাত' বলতে মধ্য শা'বানের রাত বুঝেছেন। একথা অতীতের কোনো কোনো তফসিরে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু তাঁর এই মত স্বয়ং কুরআন দ্বারাই রদ (রহিত) হয়ে গেছে। তাঁর এই মতের পক্ষে কোনো সাহাবী এবং অন্য কোনো তাবেয়ীর সমর্থন নেই।
০৬. উপরোক্ত আয়াত দু'টির ব্যাখ্যা হলো সূরা ৯৭ 'আল কদর' এবং সূরা ২ আল বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াত। এই ১৮৫ নম্বর আয়াতে পরিষ্কার ও আকট্যভাবে বলা হয়েছে, কুরআন নাযিল হয়েছে রমযান মাসে। সুতরাং কুরআন নাযিলের রাতটি অবশ্যি রমযান মাস। আর 'লাইলাতুল কদর' এবং 'লাইলাতুল মুবারাকা' অবশ্যি রমযান মাসে।
০৭. আশা করি কেউ এই ভুল বুঝবেন না যে, ইকরামা রাহেমাহুল্লাহর মতকে আমরা রদ করেছি। না, তা নয়। বরং উনার মত স্বয়ং কুরআন দ্বারাই রদ হয়ে গেছে। কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক যে কোনো কথা এবং ব্যাখ্যাই বাতিল। তাছাড়া সাহাবায়ে কিরামের ইজমা এবং তিনি ব্যতিত বাকি সমস্ত তাবেয়ীরও ইজমা তাঁর মতকে রদ (রহিত) করেছে।
০৮. মধ্য শাবানের (১৪ শাবানের) রাতকে 'ভাগ্যরজনী' চিত্রিত করে হাদিস নামে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই মনগড়া, বানানো ও জয়ীফ। সেগুলো সবই কুরআন দ্বারা রহিত-বাতিল।
০৯. তবে মধ্য শাবান বা ১৪ শাবানের রাত সংক্রান্ত একটি বর্ণনাকে অনেক হাদিস বিশ্লেষকই সহীহ ও বিশুদ্ধ বলেছেন। হাদিসটি হলো:
اَِنَّ اللهَ لَيَطَّلِعُ فِىْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَاَنَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيْعِ خَلْقِهֽاِلاَّ لِمُشْرِكٍ اَوْ مُشَاحِنٍ
অর্থ: "নিশ্চয়ই আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি বিশেষ দৃষ্টিপাত করেন। তখন তিনি মুশরিক এবং বিদ্বেষী-হিংসুক ছাড়া বাকি সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন।" (সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৪৪৫, মুসনাদে আহমদ ২/১৭৬, সহীহ ইবনে হিব্বান ১২/৪৮১)
১০. সুতরাং অর্ধ শাবানের রাতে আমরা যে ইবাদতগুলো করতে পারি, সেগুলো:
এক: বেশি বেশি নফল নামায পড়া; অন্তত তাহাজ্জদ পড়া।
দুই: কুরআন তিলাওয়াত করা।
তিন: দীনের জ্ঞানার্জন করা।
চার: বেশি বেশি আল্লাহ পাকের তসবীহ, তাকবীর, তাহলীল করা।
পাঁচ: রসূল সা. -এর প্রতি সালাত (দরূদ) পাঠ করা।
ছয়: এ রাতে বিশেষভাবে করণীয় হলো, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং
সাত: ১৩, ১৪ ও ১৫ শাবানে আইয়্যামে বীজের রোযা রাখা।
১১. এ আলোচনা থেকে এটাও পরিষ্কার হলো যে, এ রাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে নিম্নোক্ত কাজগুলো অতি অবশ্যি আমাদের বর্জন করা উচিত:
এক: আমরা এ রাতকে আর 'শবে বরাত' বলবোনা, 'নিসফে শাবান' বা 'মধ্য শাবানের রাত' বলবো।
দুই: আতশবাজি করবোনা।
তিন: কবর-মাজার ইত্যাদিতে গিয়ে মৃতদের কাছে কিছু চাইবোনা।
চার: কোনো অশ্লীল কাজে অংশ নেবোনা।
পাঁচ: কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ করবোনা। হিংসা বিদ্বেষ পরিত্যাগ করবো।
ছয়: সব ধরনের শিরক বিদা'ত পরিত্যাগ করবো।
সাত: মৃত পিতা-মাতা এবং অন্যদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো।
শবে বরাত নিয়ে এতো বিভ্রান্তি কেন?

এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
- শহীদি প্রোফাইল সংকলণ
- তুরস্কে ব্যর্থ ক্যু: শ্বাসরুদ্ধকর একটি কালো রাত!
- বিরোধী জোটের ২০১৫ এর আন্দোলন চলাকালীন পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের পরিচয়
- এদের চিনে রাখুন,একদিন এরাই আপনাকে ছিড়ে-খুঁড়ে খাবে
- প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গাণিতিক বিষয় সম্পর্কিত ব্লগ সঙ্কলণ
- বিয়ে ► করণীয় ও বর্জনীয় ► (যে বিবাহে খরচ কম ও সহজ সে বিবাহই অধিক বরকতপূর্ণ)
- তুর্কি পাবলিক স্পেসে ইসলাম কীভাবে ফিরে আসছে?
- মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে
- জ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত : মানুষের উপর জ্বীনের নিয়ন্ত্রন (আছর)- বিশ্বাসযোগ্যতা, কারণ, প্রতিকার ..ইত্যাদি ইত্যাদি...
- একজন শিবির কর্মীর কথা
- কুরআন তেলাওয়াত ডাউনলোড
- ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট কারা চালায়, কেন চালায়?
- কুরআনে বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক ইঙ্গিতসমূহ
- হেফাজতের ওপর গণহত্যার ভিডিও আর্কাইভ | VDO archive of Genocide on Hefajat
- আজ কুরআন দিবস (১১-মে-১৯৮৫) : কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় শহীদ হবার দিন..
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
- নামায - aamzubair
- কিশোরকন্ঠ সমর্থক প্রতিবেদন ফরম - খালেদ হাসান রাফি
- Re: লিবিয়ার জনগণকে নিয়ে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখি খেলা - খালেদ হাসান রাফি
- Re: মিশরের ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড: নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় - খালেদ হাসান রাফি
4345727
2 জন পাঠক অনলাইনে
0 comments: