ইসলামী আন্দোলনের মদীনা নামে খ্যাত সাতক্ষীরা । ইসলামী ছাত্রশিবির সকল ছাত্র-জনতার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তার আদর্শিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাতিলের পাহাড় সমান ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ৩৭ জন ভাই এর শাহাদাৎ এবং অসংখ্য ভাইয়ের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা “ শহীদি জনপদ ” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যে কাফেলার পথ ধরে চলে এসেছে শাহাদাতের মিছিল। সত্য ও হকের পথে অবিচল থাকার অপরাধে বাতিল শক্তির চক্ষুশুলে পরিণত হয় এই জান্নাতি কাফেলা। জুলুম নির্যাতনের যাতাকলে পিষ্ট হতে থাকলেও এক মুহূর্তের জন্যও ঈমানের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। বাতিলের কাছে পরাস্ত হতে এরা শিখেনি। এমন দৃঢ়পদে পথচলতে গিয়ে শতশত তরুন শাহদাৎ ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এ পথের জ্বলন্ত প্রমাণ হয়ে আছেন হযরত খাব্বাব, খুবাইব, শহীদ সাইয়্যেদ আহম্মদ বেরলভী, শহীদ হাসান আল বান্না, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও শহীদ কামরুজ্জামান ,শহীদ আব্দুল মালেক, শহীদ আলী মোস্তফা প্রমুখ ভাইয়েরা।
যুগে যুগে সাহাবী ও মুজাহিদদের শহীদ হওয়ার জন্য যে আকুতি এবং প্রতিযোগিতার দৃষ্টান্ত ¯স্তাপিত হয়েছে তা মুসলমানদের প্রেরণা যোগায়।
একবার মহানবী (স) রোমানেেদর সাথে যুদ্ধের প্রস্ততি নিচ্ছেন। জিহাদে অংশগ্রহণ করতে ই”ছুক মুজাহিদদের তালিকা তৈরি করছেন। এমন সময় একজন মহিলা তার দুধের শিশুকে নিয়ে হাজির। তিনি রাসূল (স:) বললেন , ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি শুনেছি আপনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপনার কাছে আমার একটি অনুরোধ- আমার এই শিশুটিকেও আপনি যুদ্ধে নিয়ে যান।’রাসূল (স) অবাক হয়ে গেলেন। তিনি ঐ মহিলাকে বললেন। আমি যুদ্ধের জন্য মুজাহিদদের নাম লেখাচ্ছি। তোমার এই শিশু না পারবে তলোয়ার চালাতে, না পারবে ঢাল দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে। তাকে যুদ্ধে নিয়ে গিয়ে আমি কী করবো?’জবাবে ঐ মহিলা বললেন ‘হে আল্লাহর রাসূল (স:)। আমি জানি, যুদ্ধের ময়দানে আমার এই শিশু তলোয়ার চালিয়ে শত্রুপক্ষের কাউকে হত্যা করতে পারবে না, এবং নিজেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু সে তো ঢালও হতে পারবে !! হে প্রিয় নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে যখন আপনার ঢাল পড়ে যাবে, তখন আপনি আমার এই শিশুটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন!!’ঐ আসরে উপস্তিত ছিল রোমের এক গোয়েন্দা। সে এই ঘটনা দেখে রোম সম্ম্রাটকে গিয়ে বললেন ‘রোম সম্ম্রাট ! মুসলমানদের সাথে যুদ্ধের পরিকল্পনা বাতিল করুন।
সম্রাট জিজ্ঞেস করলো । কেন? তারা কি সংখ্যায় আমাদের চেয়ে বেশি?
গোয়েন্দা বললো , না।
সম্ম্রাট আবার জিজ্ঞেস করলো , তাহলে তাদের অস্ত্রশস্ত্র কি আমাদের চেয়ে বেশি?
গোয়েন্দা বলল , না, আমাদের তুলনায় তাদের অস্ত্রশস্ত্র নেই বললেই চলে।
সম্রাট তখন বললো , ওহে গোয়েন্দা, তাহলে তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাচ্ছো , এবং কেন? কেন তুমি আমাকে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে নিষেধ করছো?
গোয়েন্দা বললো। হে রোম সম্রাট শুনে রাখুন । আপনি কখনোই মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করে বিজয় হতে পারবেনা । কারণ, তোমার সুবিশাল সৈন্যবাহিনীর কাছে নারী আর মদ যতটা না প্রিয়, মুসলমানদের কাছে আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়া তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি প্রিয়!
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ আল্লামা সাঈদীর রায়ের প্রতিবাদে শাহদাত বরণকারী শিবিরের সাথী প্রার্থী শহীদ আলি মোস্তফার গুলিবিদ্ধ দেহ রাস্তায় পড়ে ছিল । আবু হানিফ ছোটন আলী মোস্তফার নিথর দেহটা কাধে তুলে হাসপাতালে নিয়েছিল এবং তার সমস্ত শরীর রক্তে ভিজে গিয়েছিল । বাসায় ফিরে মা তাকে জিজ্ঞাস করে বাবা তোমার সমস্ত জামাকাপড়ে রক্ত কেন ? সেদিন সে বলেছিল – মা আমার এক ভাই পুলিশের গুলিতে শাহদাৎ বরণ করেছে , ওনাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম তো তাই। সেদিন মাকে বলেছিলো “ মা ! আমি যদি শহীদ হই তবে তুমি কাঁদবেনা নাতো? মা সেদিন না বুঝে ছোট ছেলে ভুল বকছে , এই ভেবে বলেছিলো না ! আমি কাদবো না ।
১ জানুয়ারী ২০১৪ যৌথ বাহিনীর আভিযানে আবু হানিফ ছোটন ভাইয়ের বাড়ী বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয় । আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয় পুরা এলাকাজুড়ে । বাড়ী ভাঙ্গার শোক কাটতে না কাটতেই ১৮ ফেব্রুয়ারী-২০১৪ কাঁধে চেপে গেল পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বোঝা “ পিতার কাঁধে পুত্রের কফিন” । শোকে পুরা পরিবার যেন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়ল ।গোয়েন্দা বললো , না।
সম্ম্রাট আবার জিজ্ঞেস করলো , তাহলে তাদের অস্ত্রশস্ত্র কি আমাদের চেয়ে বেশি?
গোয়েন্দা বলল , না, আমাদের তুলনায় তাদের অস্ত্রশস্ত্র নেই বললেই চলে।
সম্রাট তখন বললো , ওহে গোয়েন্দা, তাহলে তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাচ্ছো , এবং কেন? কেন তুমি আমাকে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে নিষেধ করছো?
গোয়েন্দা বললো। হে রোম সম্রাট শুনে রাখুন । আপনি কখনোই মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করে বিজয় হতে পারবেনা । কারণ, তোমার সুবিশাল সৈন্যবাহিনীর কাছে নারী আর মদ যতটা না প্রিয়, মুসলমানদের কাছে আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়া তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি প্রিয়!
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ আল্লামা সাঈদীর রায়ের প্রতিবাদে শাহদাত বরণকারী শিবিরের সাথী প্রার্থী শহীদ আলি মোস্তফার গুলিবিদ্ধ দেহ রাস্তায় পড়ে ছিল । আবু হানিফ ছোটন আলী মোস্তফার নিথর দেহটা কাধে তুলে হাসপাতালে নিয়েছিল এবং তার সমস্ত শরীর রক্তে ভিজে গিয়েছিল । বাসায় ফিরে মা তাকে জিজ্ঞাস করে বাবা তোমার সমস্ত জামাকাপড়ে রক্ত কেন ? সেদিন সে বলেছিল – মা আমার এক ভাই পুলিশের গুলিতে শাহদাৎ বরণ করেছে , ওনাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম তো তাই। সেদিন মাকে বলেছিলো “ মা ! আমি যদি শহীদ হই তবে তুমি কাঁদবেনা নাতো? মা সেদিন না বুঝে ছোট ছেলে ভুল বকছে , এই ভেবে বলেছিলো না ! আমি কাদবো না ।
১ জানুয়ারী ২০১৪ যৌথ বাহিনীর আভিযানে আবু হানিফ ছোটন ভাইয়ের বাড়ী বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয় । আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয় পুরা এলাকাজুড়ে । বাড়ী ভাঙ্গার শোক কাটতে না কাটতেই ১৮ ফেব্রুয়ারী-২০১৪ কাঁধে চেপে গেল পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বোঝা “ পিতার কাঁধে পুত্রের কফিন” । শোকে পুরা পরিবার যেন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়ল ।
১৭ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ৫ টা হঠাৎ সদর দক্ষিণ সভাপতি হাফেজ মনির ভাইয়ের ফোন। ভাই আমার এক কর্মী আবু হানিফ ছোটনকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সদর থানার ওসি এনামুল হকের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে উনি কিছুই জানেন না বললেন। ডিবির ওসি আব্দুল হান্নানের কাছে জানতে চাইলে উনিও বিষয়টা অস্বীকার করেন। কেন্দ্র, স্থানীয় দায়িত্বশীলদের বিষয়টা অবহিত করি। আমিনুর ভাইকে ডিবি অফিস ও থানায় সাংবাদিক পাঠিয়ে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে বলি। রাত যত গভীর হচ্ছে অজানা আশংকা ভর করছে। রাত্র ১২.৩০ পর্যন্ত আমিনুর ভাই, আমি, ¯স্থানীয় মুরব্বী ও সাংবাদিকসহ সকল প্রকার সোর্স এর মাধ্যমে গ্রেফতারের বিষয়টা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। অবশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল মহান প্রভুর সান্নিধ্যে আমার প্রিয় ভাইয়ের জন্য দোয়া করলাম।
আল্লাহ যাকে পছন্দ করেছেন, কোন বাঁধন তাকে আটকাতে পারে না। ফজরের আজানের শব্দের সাথে সাথে ভোমরা ¯’ল বন্দর, রাসেল স্কোয়ারের নিকটে গুলির শব্দ হয়। আযানের পরেই মনির ভাইয়ের ফোন ! অজানা আশংকায় ফোন রিসিভ করলাম। অপর প্রান্ত থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানালো পুলিশের গুলিতে ছোটন ভাই শাহাদাত বরণ করেছে। (ইন্না ---- রাজিউন) নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। আমিনুর ভাই সহ স্থানীয় মুরব্বী ও কেন্দ্রকে জানালাম। আমিনুর ভাইকে, ছোটন ভাইয়ের বাড়িতে পাঠালাম। হাসপাতালে নিকটতম আত্বীয়দের পাঠাতে বললাম। দুপুরে শহীদ ছোটন ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছাই। নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিল। মাকে কী দিয়ে সান্তনা দেব। ক্রন্দনরত মায়ের প্রশ্নের কী জবাব দেব। অজানা ভাবনায় নিজেকে আবিস্কার করি গন্তব্যহীন পথিক হিসেবে। একসময় মায়ের সামনে হাজির। একটু পূর্বে-ই যে মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার বিভিন্ন ভাষা আবিস্কার করার চেষ্টায় নিজেকে অন্য ভূবনের মানুষ মনে হয়েছিল। মা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, বাবা আমি তো গর্বিত আমার ছেলে শাহাদাৎ বরণ করেছে। আল্লাহ আমাকে শহীদের মা হওয়ার সৌভাগ্য দিয়েছেন। আমার এক ছোটন শহীদ হয়েছে তাতে কি হয়েছে, তোমরা আনেক ছোটন তো আমার পাশে অপেক্ষমাণ। আমাকে দেখ ! আমি তো কাঁদছি না। তোমরা কেন কাঁদছো? আমার ছোটন যে এত ভাল ও সুন্দর ছেলেদের সাথে মিশত তা যদি আগে জানতে পারতাম তাহলে আল্লাহর কাছে অনেক অগেই তার শাহাদাতের জন্য দোয়া করতাম। যাতে তোমাদের মত জান্নাতী মানুষদের সাথে আরো অনেক আগে দেখা হত।
এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, নারী-পুরুষ ও শিশু সকলে এই প্রিয় মুখটি একপলক দেখার জন্য সকাল থেকে প্রহর গুনছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড়। মাগরীবের পরে শহীদের কফিন আমাদের কাছে পৌঁছাল পুলিশের প্রহরায়। সমগ্র এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এল। মা তার প্রিয় মন্তানের মুখটা দেখার জন্য ছুটে এলো। মা মনে করেছিলো , শিশু (ছোটন) তার উপর রাগ করে চলে যাওয়ার ভান করে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে । যদিও অন্তরের অন্তস্থল থেকে সে প্রতি মুহুর্ত মায়ের আদুরে ডাক আসা করছে । স্হেহময়ী মায়ের কাছ থেকে সে ডাক আসবে। অবাধ্য শিশুটি আরো উতসাহ নিয়ে স্হেহময়ী মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়বে। কিন্তু মা ডাকলো ঠিকই! তার কলিজার টুকরার সে অভিমান আর ভাংলো না।
সকলে প্রিয় মুখটিকে একপলক দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। নিষ্টুরতার একি নির্মম র্পযায়, প্রিয় মুখটি সকলের দেখা হল না। খুব অল্প সময়ে জনাযা ও দাফন সমাপ্ত করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় । শহীদ আবু হানিফ ছোটন ৯ম শ্রেনীর একজন ছাত্র। এত অল্প বয়সে কী অপরাধ করেছিল ? সরকার উৎখাতের জন্য কী ষড়যন্ত্রই করেছিল ? অথবা সরকার ধ্বংসের কী পরিকল্পনার কথা তার জানা ছিল ? তাকে গ্রেফতার করে রাতভর অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়। এমন কী তথ্য তার কাছে জানতে চেয়েছিল ? হয়তো এমন কোন তথ্য জানতে চেয়েছিল, যে তথ্যের জন্য হয়ত সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত। সে তথ্য না দেওয়াতে তাকে রাতভর সমস্ত শরীরে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়েছে এবং বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করেছে। বাস্তব স্বাক্ষী তার ক্ষত-বিক্ষত দেহখানা। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি, যেখানে একজন মানুষ মারার জন্য একটা বুলেট ই যথেষ্ট, সেখানে ঐ ছোট্ট দেহে ৭ টি বুলেট মেরে ঝাঁঝরা করে দেয়। মনে করিয়ে দেয়, হযরত খোবায়েব রা: কে শুলে চড়ানোর পূর্বে বলা হয়েছিল, তোমার এই স্থানে যদি মোহাম্মাদ নিয়ে আসা হয় ? মৃত্যুর পথযাত্রী খোবায়েব সেদিন বলেছিল - আমার শরীরে একফোটা রক্ত থাকতে আমার প্রিয় রাসূল স: এর কোন ক্ষতি হতে দেব না এবং সহ্যও করবো না। ঠিক তেমনি , সদ্য ৮ম শ্রেনী সমাপ্ত কৈশর আবু হানিফ ছোটন কিবা অপরাধ ছিল তার ? যে জন্য তাকে এই কৈশর বয়সে মহান স্রষ্ট্রার কাছে চলে যেতে হলো । তার ও তো বেঁচে থাকার অনেক স্বাদ ছিল ,বড় হওয়ার অনেক স্বপ্ন ছিল ? কি অপরাধ ? তার আপরাধ একটাই “ আল্লাহর জমিনে , আল্লাহর দেওয়া বিধান প্রতিষ্টার প্রচেষ্টা চলোনো ”
স্থানীয় সকলে বললো, জানাযা সংক্ষিপ্ত করার জন্য। আমি ও আমিনুর ভাই সিন্ধান্ত নিলাম। আল্লাহ-তায়ালা যাকে সম্মান দিয়েছেন, আমরা সেই ভাইকে এভাবে বিদায় দিতে পারি না। আমিনুর ভাই ঘোষণা দিলেন, জানাযার পূর্বে সমাবেশ হবে পরে দাফন করা হবে। সেদিন আমিনুর ভাইয়ের সাহসী ভুমিকায় আমাদের প্রিয় ভাইকে একটু হলেও তৃপ্তি সহকারে বিদায় দিতে পেরেছিলাম। সমাবেশে আমিনুর ভাই আশ্রুসিক্ত নয়নে শহীদ আবু হানিফ ছোটন ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করলেন। কে জানতো মহান প্রভু এই ভাইকে ৩ মাস পরেই স্মৃতিচারণের পাত্র হিসেবে কবুল করবেন। শহীদের কফিন এত ভারী, কষ্ট ও বেদনায় সেদিনের আগে কোনদিন কল্পনার তুলিতে ছবিও আঁকতে পারিনি। আমিনুর ভাই আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফেরার পরামর্শ দিলেন। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলে মা বললো! আমার ছোটন বলতো,“মা আমি যদি কোনদিন শহীদ হই তুমি কাঁদবে না। তোমরা দেখ! আমি কিন্তু কাঁদছি না। আমার ছোটনের কাছে দেওয়া কথা আমি রেখেছি। মাকে বললাম, মা আজ থেকে আমি তোমার “ছোটন”। তুমি আমাকে ছোটন বলেই ডাকবে ।
মা ! আকাশের বিশালতায় চাঁদের জ্যোতির যে হাসি, তোমার ছোটন এমন-ই এক জ্যোতি হিসেবে তোমার বংশের উজ্জল নক্ষত্র হয়ে এসেছিল। তোমার ভাগ্যাকাশে এমন নক্ষত্রের উদয় তোমার আল্লাহর দয়ার-ই প্রমাণ। আল্লাহ তোমার ছোটনকে তোমার কাছে ১৪ বছরের অধিক আমানাত হিসেবে বুকে জড়িয়ে আদর করার ও ভালবাসার সুযোগ দিয়েছেন। এখন, মালিক তোমার কাছ থেকে ছোটনকে মালিকের হেফাজাতে নিয়ে গেছেন। তবে আমার বিশ্বাস, তোমার থেকেও আমার মালিক আমাদের প্রিয় ভাইকে অধিক যন্ত ও মর্যাদায় রাখবেন। কেননা তিনিতো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছেন ।
শহীদ ভাইদের মায়েদের চোখের পানি , দীর্ঘদিন নফল রোজা রাখা ও রাত জেগে আল্লাহর কাছে প্রিয় সন্তান ও এই কাফেলার সাফল্য কামনা ।
এই দোয়া যে কাফেলার জন্য , সে কাফেলা থেমে যাবে না , থেমে যেতে পারে না । শুধু মাত্র অপেক্ষা -- শহীদের সতীর্থদের চোখের পানি , গর্বিত মায়েদের আহাজারী ও দোয়া , একদিন সকল কষ্ট ও বেদনাকে হার মানিয়ে সফলতার লাল সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হবে ইনশায়াল্লাহ ।
আবু তালেব
সাবেক সভাপতি
সাতক্ষীরা শহর
*****************
কুরআন-হাদিস পড়ার কারণেই ছেলেকে জীবন দিতে হলো -শহর আলী
সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর গুলীতে ছাত্রশিবির কর্মী আবু হানিফ নিহত
# প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা
আব্দুর রাজ্জাক রানা, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে : আমার সাড়ে তের বছরের মাছুম বাচ্চাকে গুলী করে ওরা হত্যা করেছে। গুলী করার আগে তারা সারা রাত ধরে আমার বাচ্চার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তার সারা শরীর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সে তো একজন মাদরাসার ছাত্র। তালিবে এলেম। কুরআন-হাদিস পড়াই ছিল তার কাজ। আর সেই কুরআন-হাদিস পড়ার কারণেই কি তাকে এভাবেই জীবন দিতে হলো বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আবার চোখ মুছতে মুছতে বলে উঠলেন, “এই দুনিয়ায় আমার বাচ্চার হত্যার বিচার চাই না। আর বর্তমান সরকারের কাছে তো না-ই। এরা তো সরকার না এরা আজরাঈল। তারা প্রতিদিনই কোন না কোন মা-বাপের কোল খালি করছে। আমার বাচ্চারে যারা খুন করেছে তাদের কোলও একদিন আল্লাহ তায়ালা খালি করবে। এ জন্য এর বিচার আল্লাহ তায়ালার কাছেই দিলাম” এই বলতে বলতে মুর্ছা যান। এভাবেই সাতক্ষীরার পূর্ব ভোমরায় যৌথবাহিনীর গুলীতে শাহাদাতবরণকারী মোঃ আবু হানিফ ছোট’র বৃদ্ধ পিতা মোঃ শহর আলী কথা বলছিলেন। এ সময় ঘরের মধ্যে শহীদ আবু হানিফের মা হাসিনা খাতুন অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল। আর তার বড় ভাই-বোনেরা বুক চাপড়াতে চাপড়াতে একবার রাস্তায় আর একবার বারান্দায় এসে হাউমাউ করছে আর বলছে, কোন দেশে বাস করছি আমরা। ছোট ভাই কুরআর-হাদিস পড়ে বড় মাওলানা হবে এ আশায় আট ভাই-বোনের মধ্যে ছোট (সাত নম্বর) এই ভাইকে ভোমরা দাখিল মাদরাসায় পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু সরকার সেই আশা পূরণ করতে দিলো না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত উঁচু করে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ভাই হত্যার বিচার তার কাছে তুলে দিয়ে ছোট ভাইয়ের লাশের অপেক্ষার প্রহর গুণছিল। যৌথবাহিনীর ভয়ে কেউ আবার হাসপাতালে লাশও আনতে যেতে পারেনি। পুলিশ দুপুরে আবু হানিফের লাশ হস্তান্তর করলে দূর সম্পর্কের লোকজন হানিফের রক্তমাখা লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় তার মাতা-পিতা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজনের আহাজারীতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। যোহর বাদ স্বল্প পরিসরে জানাযা শেষ করে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়। আবু হানিফের পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে কেউ উচ্চ শিক্ষিত না হলেও তার স্বপ্ন ছিল সে লেখাপড়া করে বড় হয়ে মাতা-পিতার মুখ উজ্জ্বল করবে আর সকলের মাঝে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান ছড়িয়ে দেবে। তার এ আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হতে দিল না এই সরকার- এ কথা বলতে বলতে সহপাঠিরাও হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক লোকজনও চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেনি। সকলেই যেন একাকার হয়ে গেল এই শোকাহত পরিবারের সদস্যদের আহাজারীর সাথে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানায়, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাড়তদহমুখী ঘেরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পদ্মশাকরা গ্রামের বাসিন্দা শহর আলী গাজীর ছেলে মোঃ আবু হানিফ ছোটকে গ্রেফতার করে মাথায় কালোটুপি পরিয়ে গাড়িতে তোলে। এরপর তাকে এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পুষ্পকাটি পুরাতন ইটভাটায় নিয়ে যায়। এখানে রেখে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা হানিফকে পূর্ব ভোমরা বন্দর লাভলু স্কেলের সামনে নিয়ে তাকে লক্ষ্য করে পর পর ৮/১০ রাউন্ড গুলী করে। তাদের এই গুলীর শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভয়ে কেউ ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। হানিফকে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে হানিফের কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে তার পরিবার পাগলপ্রায় হয়ে যায়। শনিবার ভোর রাতে গুলীর খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ-খবর নিতে থাকে। এরমধ্যে টিভিতে দ্যাখে সাতক্ষীরার ভোমরায় ‘ছোটন’ নামের একজন যৌথবাহিনীর গুলীতে নিহত হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশের কাছে খবর নিয়ে জানতে পারে হানিফকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। তার বুকে, পিঠে গুলীর চিহ্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত মোঃ আবু হানিফ ছোট ভোমরা দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র। আবু হানিফ আট ভাই-বোনের মধ্যে সপ্তম এবং ভাইদের মধ্যে ছোট। এজন্য পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা আদর করে তাকে ‘ছোট’ বলে ডাকতো। মূলত সে থেকেই তার নাম ছোট হয়েছে। এদিকে অভিযানে অংশ নেয়া একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেফতারের জন্য যৌথবাহিনী রাতে সদর উপজেলার ভোমরা এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় যৌথবাহিনী ৮/১০ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করে। এতে শিবিরকর্মী মোঃ আবু হানিফ ওরফে ছোটনকে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গোলাগুলীর সময় পুলিশের এসআই আবুল কাশেম সামান্য আহত হয়েছেন। নিহত ছোটনের বিরুদ্ধে মালবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে পোড়ানোসহ দ্রুত বিচার আইনে তিনটি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা : ভোমরা দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণীতে পড়–য়া আবু হানিফ ছোটকে নির্মমভাবে গুলী করে হত্যা করার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির শনিবার বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এখান থেকে সাতক্ষীরা জেলা আমীর সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক ও সেক্রেটারি শেখ নুরুল হুদা, ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি মোঃ আবু তালেব ও জেলা সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন এক যৌথ বিবৃতিতে ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার জেলাব্যাপী বিক্ষোভ, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি সকলস্তরে গণযোগাযোগ ও ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার দোয়া দিবসের ঘোষণা দেন। নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ‘ভোমরা দাখিল মাদরাসার’ নবম শ্রেণীর ছাত্র আবু হানিফ ছোটকে এলাকার লোকজনের সামনে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজ-খবর নেয়ার পর জানা যায়, তাকে যৌথবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরের দিন শনিবার সকালে যৌথবাহিনী ভোমরা পোর্টের নিকটস্থ মেইন রোডের ওপর তাকে গুলী করে হত্যা করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আবু হানিফ ছোট নবম শ্রেণীতে পড়–য়া একটি নিষ্পাপ কিশোর। তার পিতা শহর আলী জামায়াতের পদ¥শাখরা ওয়ার্ড সেক্রেটারি। কিছুদিন আগে যৌথবাহিনী তার বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। আর সর্বশেষ আজ তার কলিজার টুকরো সন্তানকে গুলী করে হত্যা করল। সে কি বাংলাদেশের নাগরিক নয় ? তার কি বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার অধিকার নেই? তাকে হত্যা করে যৌথবাহিনী স্বাধীনতা এবং মানবধিকারকে হত্যা করেছে। নেতৃবৃন্দ এই জঘন্য, বর্বর, ঘৃণ্য এবং আইন ও গণতন্ত্র বহির্ভূত হত্যার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাক রানা, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে : আমার সাড়ে তের বছরের মাছুম বাচ্চাকে গুলী করে ওরা হত্যা করেছে। গুলী করার আগে তারা সারা রাত ধরে আমার বাচ্চার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তার সারা শরীর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সে তো একজন মাদরাসার ছাত্র। তালিবে এলেম। কুরআন-হাদিস পড়াই ছিল তার কাজ। আর সেই কুরআন-হাদিস পড়ার কারণেই কি তাকে এভাবেই জীবন দিতে হলো বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আবার চোখ মুছতে মুছতে বলে উঠলেন, “এই দুনিয়ায় আমার বাচ্চার হত্যার বিচার চাই না। আর বর্তমান সরকারের কাছে তো না-ই। এরা তো সরকার না এরা আজরাঈল। তারা প্রতিদিনই কোন না কোন মা-বাপের কোল খালি করছে। আমার বাচ্চারে যারা খুন করেছে তাদের কোলও একদিন আল্লাহ তায়ালা খালি করবে। এ জন্য এর বিচার আল্লাহ তায়ালার কাছেই দিলাম” এই বলতে বলতে মুর্ছা যান। এভাবেই সাতক্ষীরার পূর্ব ভোমরায় যৌথবাহিনীর গুলীতে শাহাদাতবরণকারী মোঃ আবু হানিফ ছোট’র বৃদ্ধ পিতা মোঃ শহর আলী কথা বলছিলেন। এ সময় ঘরের মধ্যে শহীদ আবু হানিফের মা হাসিনা খাতুন অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল। আর তার বড় ভাই-বোনেরা বুক চাপড়াতে চাপড়াতে একবার রাস্তায় আর একবার বারান্দায় এসে হাউমাউ করছে আর বলছে, কোন দেশে বাস করছি আমরা। ছোট ভাই কুরআর-হাদিস পড়ে বড় মাওলানা হবে এ আশায় আট ভাই-বোনের মধ্যে ছোট (সাত নম্বর) এই ভাইকে ভোমরা দাখিল মাদরাসায় পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু সরকার সেই আশা পূরণ করতে দিলো না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত উঁচু করে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ভাই হত্যার বিচার তার কাছে তুলে দিয়ে ছোট ভাইয়ের লাশের অপেক্ষার প্রহর গুণছিল। যৌথবাহিনীর ভয়ে কেউ আবার হাসপাতালে লাশও আনতে যেতে পারেনি। পুলিশ দুপুরে আবু হানিফের লাশ হস্তান্তর করলে দূর সম্পর্কের লোকজন হানিফের রক্তমাখা লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় তার মাতা-পিতা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজনের আহাজারীতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। যোহর বাদ স্বল্প পরিসরে জানাযা শেষ করে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়। আবু হানিফের পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে কেউ উচ্চ শিক্ষিত না হলেও তার স্বপ্ন ছিল সে লেখাপড়া করে বড় হয়ে মাতা-পিতার মুখ উজ্জ্বল করবে আর সকলের মাঝে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান ছড়িয়ে দেবে। তার এ আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হতে দিল না এই সরকার- এ কথা বলতে বলতে সহপাঠিরাও হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক লোকজনও চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেনি। সকলেই যেন একাকার হয়ে গেল এই শোকাহত পরিবারের সদস্যদের আহাজারীর সাথে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানায়, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাড়তদহমুখী ঘেরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পদ্মশাকরা গ্রামের বাসিন্দা শহর আলী গাজীর ছেলে মোঃ আবু হানিফ ছোটকে গ্রেফতার করে মাথায় কালোটুপি পরিয়ে গাড়িতে তোলে। এরপর তাকে এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পুষ্পকাটি পুরাতন ইটভাটায় নিয়ে যায়। এখানে রেখে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা হানিফকে পূর্ব ভোমরা বন্দর লাভলু স্কেলের সামনে নিয়ে তাকে লক্ষ্য করে পর পর ৮/১০ রাউন্ড গুলী করে। তাদের এই গুলীর শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভয়ে কেউ ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। হানিফকে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে হানিফের কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে তার পরিবার পাগলপ্রায় হয়ে যায়। শনিবার ভোর রাতে গুলীর খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ-খবর নিতে থাকে। এরমধ্যে টিভিতে দ্যাখে সাতক্ষীরার ভোমরায় ‘ছোটন’ নামের একজন যৌথবাহিনীর গুলীতে নিহত হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশের কাছে খবর নিয়ে জানতে পারে হানিফকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। তার বুকে, পিঠে গুলীর চিহ্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত মোঃ আবু হানিফ ছোট ভোমরা দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র। আবু হানিফ আট ভাই-বোনের মধ্যে সপ্তম এবং ভাইদের মধ্যে ছোট। এজন্য পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা আদর করে তাকে ‘ছোট’ বলে ডাকতো। মূলত সে থেকেই তার নাম ছোট হয়েছে। এদিকে অভিযানে অংশ নেয়া একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেফতারের জন্য যৌথবাহিনী রাতে সদর উপজেলার ভোমরা এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় যৌথবাহিনী ৮/১০ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করে। এতে শিবিরকর্মী মোঃ আবু হানিফ ওরফে ছোটনকে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গোলাগুলীর সময় পুলিশের এসআই আবুল কাশেম সামান্য আহত হয়েছেন। নিহত ছোটনের বিরুদ্ধে মালবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে পোড়ানোসহ দ্রুত বিচার আইনে তিনটি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা : ভোমরা দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণীতে পড়–য়া আবু হানিফ ছোটকে নির্মমভাবে গুলী করে হত্যা করার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির শনিবার বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এখান থেকে সাতক্ষীরা জেলা আমীর সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক ও সেক্রেটারি শেখ নুরুল হুদা, ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি মোঃ আবু তালেব ও জেলা সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন এক যৌথ বিবৃতিতে ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার জেলাব্যাপী বিক্ষোভ, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি সকলস্তরে গণযোগাযোগ ও ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার দোয়া দিবসের ঘোষণা দেন। নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ‘ভোমরা দাখিল মাদরাসার’ নবম শ্রেণীর ছাত্র আবু হানিফ ছোটকে এলাকার লোকজনের সামনে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজ-খবর নেয়ার পর জানা যায়, তাকে যৌথবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরের দিন শনিবার সকালে যৌথবাহিনী ভোমরা পোর্টের নিকটস্থ মেইন রোডের ওপর তাকে গুলী করে হত্যা করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আবু হানিফ ছোট নবম শ্রেণীতে পড়–য়া একটি নিষ্পাপ কিশোর। তার পিতা শহর আলী জামায়াতের পদ¥শাখরা ওয়ার্ড সেক্রেটারি। কিছুদিন আগে যৌথবাহিনী তার বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। আর সর্বশেষ আজ তার কলিজার টুকরো সন্তানকে গুলী করে হত্যা করল। সে কি বাংলাদেশের নাগরিক নয় ? তার কি বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার অধিকার নেই? তাকে হত্যা করে যৌথবাহিনী স্বাধীনতা এবং মানবধিকারকে হত্যা করেছে। নেতৃবৃন্দ এই জঘন্য, বর্বর, ঘৃণ্য এবং আইন ও গণতন্ত্র বহির্ভূত হত্যার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
0 comments: