মক্কা বিজয়
মুসলিমদের মিত্র গোত্র বানু খুজায়ার লোকদের হত্যাকান্ডে কুরাইশরা অংশ নেয়। এমনকি কাবা ঘরে আশ্রয় নিয়েও বানু খুজায়ার কোন লোক প্রাণ বাঁচাতে পারেনি। এইভাবে কুরাইশরা হুদাইবিয়ার চুক্তি ভঙ্গ করে আল্লাহর রাসূল (সা) এবার মুশরিক কুরাইশরদেরকে সমুচিত শিক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নেন।
হিজরী অস্টম সন।
রমাদান মাস।
দশ হাজার মুসলিম নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা) মক্কার দিকে রওয়ানা হন। রাসূল (সা) মক্কার নিকটে এসে ছাউনী ফেলেন। মুসলিম সেনাদের শক্তি সামর্থ আন্দাজ করার জন্য কুরাইশ সরদার আবু সুফইয়ান গোপনে সেই ছাউনীর কাছে আসেন। মুসলিম প্রহরীগণ তাঁকে গ্রেফতার করে রাসূলের সামনে নিয়ে আসে। ইসলামের দুশমনের মধ্যে আবু সুফইয়ান ছিলেন প্রথম কাতারের একজন। তিনি রাসূলকে (সা) গোপনে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে ছিলেন একাধিকবার। ইসলামের সেই বড়ো দুশমন আজ রাসূলের হাতের মুঠোয়। চারদিকে নাঙ্গা তলোয়ার। রাসূলের (সা) নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষায় মুসলিমরা উন্মুখ। আল্লাহর রাসূল (সা) তাকে ক্ষমা করে দেন। মুক্ত করে দেবার নির্দেশ দেন প্রহরীকে। আবু সুফইয়ান এই সব বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। যখন বন্ধন খুলে দেয়া হলো তখন তাঁর অন্তর কেঁদে উঠলো। এতো দিনের অন্যায় কাজ গুলোর স্মৃতি তাঁর হৃদয়ে তীরের মতো বিধতে লাগলো। অনুশোচনায় ভরে উঠলো তাঁর মন। মুক্তি পেয়েও আবু সুফইয়ান মক্কায় ফিরলেন না। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূলের পাশে থেকে বাকী জীবন ইসলামের সৈনিকরূপে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
এবার শহরে প্রবেশের পালা। পেছন দিক থেকে একদল যোদ্ধা প্রবেশ করবে। এই দলের সেনাপতি করা হলো খালিদ ইবনু ওয়ালিদকে (রা) সামনের দিক থেকে প্রবেশ করবে আরেক দল। এই দলের পরিচালায় থাকলেন রাসূল (সা) নিজে। খালিদের (রা) বাহিনীর সাথে ছোট্ট একটি সংঘর্ষ হয়। একদল মুশরিক তীর ছুড়ে তিন জন মুসলিমকে শহীদ করে। পাল্টা আক্রমণ ১৩ জন প্রাণ হারায়। বাকীরা পালিয়ে যায়। রাসূলের (সা) পরিচালিত বাহিনীর সামনে আসেনি কেউ। বিনা বাধায় মুসলিম বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। মক্কায় প্রবেশ করেই আল্লাহর রাসূল (সা) ঘোষণা করলেন।
যারা আপন ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকবে, তারা নিরাপদ।
যারা আবু সুফইয়ানের ঘর প্রবেশ করবে, তারও নিরাপদ।
যারা কাবা গৃহে আশ্রয় নেবে, তারাও নিরাপদ।
বিজয় উৎসব
কাবা থেকে মূর্তি সরিয়ে ফেলা হলো। কাবার দেয়ালে বিভিন্ন চিত্র ছিলো। সেইগুলো মুছে ফেলা হলো। রাসূল (সা) ধ্বনি দিলেন আল্লাহ আকবার।
সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনি হলো হাজার হাজার কন্ঠে। রাসূল (সা) কাবার তাওয়াফ করলেন। মাকামে ইবরাহীমে ছালাত আদায় করলেন। এই ছিলো রাসূলের (সা) বিজয় উৎসব পালন।
বিজয়োত্তর ভাষণ
বিজয় সম্পন্ন হবার পর আসে বিজয়োত্তর ভাষণের পালা। সমবেত জনমন্ডলীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন-
এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সাহায্য করেছেন ও সমস্ত শত্রু বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। জেনে রাখ, সমস্ত গর্ব-অহংকার, সমস্ত পুরোনো হত্যা ও রক্তের বদলা ও সব রক্তমূল্য আমার পায়ের নীচে। কেবল কাবার তত্তাবধান ও হাজীদের পানি সরবরাহ এর ব্যতিক্রম। জাহিলী আভিজাত্য ও বংশ মর্যাদার উপর গর্ব প্রকাশকে আল্লাহ নাকচ করে দিয়েছেন। সব মানুষ এক আদমের সন্তান আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট।
অতপর আল্লাহর রাসূল (সা) আল কুরাআনের নিন্মোক্ত আয়াত পাঠ করেন-
হে মানুষ, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে নানা গোত্র ও খান্দানে বিভক্ত করে দিয়েছি যাতে তোমরা পরিচয় লাভ করতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই বেশী সম্মানার্হ যে সবচেয়ে বেশী মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। সূরা আল হুজরাত : ১৩
নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ ক্রয়-বিক্রয় হারাম করে দিয়েছেন। যাদের উৎপীড়নে মুসলিমরা ঘরদোর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা সেখানে উপস্থিত ছিলো। যারা রাসূলকে গালিগালাজ করতো ও তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর টুকরো নিক্ষেপ করতো তারাও সেখানে ছিলো। যেই পিশাচ রাসূলের আপন চাচা হামজার (রা) কলিজা বের করে চিবিয়েছিলো সেও সেখানে ছিলো। যারা অসংখ্য মুসলিমদের ঘরদোর ও সম্পত্তি জোর করে দখল করেছে তারাও সেখানে ছিলো। আল্লাহর রাসূল (সা) তাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, আজ তোমরা আমার নিকট কি আচরণ আশা কর?
উত্তরে তারা বললো,
আপনি আমাদের সম্মানিত ভাই ও ভাতিজা।
আল্লাহর রাসূল (সা) ঘোষণা করলেন.
আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। যাও, তোমরা মুক্ত।
কুরাইশ নেতগণ অনুতপ্ত হন। ভেজা চোখ নিয়ে রাসূলের (সা) হাতে হাত রেখে তার মুসলিম হন।
অধ্যায় ১৫ : মক্কা বিজয়
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
- শহীদি প্রোফাইল সংকলণ
- তুরস্কে ব্যর্থ ক্যু: শ্বাসরুদ্ধকর একটি কালো রাত!
- বিরোধী জোটের ২০১৫ এর আন্দোলন চলাকালীন পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের পরিচয়
- এদের চিনে রাখুন,একদিন এরাই আপনাকে ছিড়ে-খুঁড়ে খাবে
- প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গাণিতিক বিষয় সম্পর্কিত ব্লগ সঙ্কলণ
- বিয়ে ► করণীয় ও বর্জনীয় ► (যে বিবাহে খরচ কম ও সহজ সে বিবাহই অধিক বরকতপূর্ণ)
- তুর্কি পাবলিক স্পেসে ইসলাম কীভাবে ফিরে আসছে?
- মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে
- জ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত : মানুষের উপর জ্বীনের নিয়ন্ত্রন (আছর)- বিশ্বাসযোগ্যতা, কারণ, প্রতিকার ..ইত্যাদি ইত্যাদি...
- একজন শিবির কর্মীর কথা
- কুরআন তেলাওয়াত ডাউনলোড
- ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট কারা চালায়, কেন চালায়?
- কুরআনে বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক ইঙ্গিতসমূহ
- হেফাজতের ওপর গণহত্যার ভিডিও আর্কাইভ | VDO archive of Genocide on Hefajat
- আজ কুরআন দিবস (১১-মে-১৯৮৫) : কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় শহীদ হবার দিন..
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
- নামায - aamzubair
- কিশোরকন্ঠ সমর্থক প্রতিবেদন ফরম - খালেদ হাসান রাফি
- Re: লিবিয়ার জনগণকে নিয়ে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখি খেলা - খালেদ হাসান রাফি
- Re: মিশরের ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড: নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় - খালেদ হাসান রাফি
4345733
6 জন পাঠক অনলাইনে
0 comments: