হুনাইন যুদ্ধ
হিজরী অস্টম সন। শাওয়াল মাস। বারো হাজার সৈন্য নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা) হুনাইনের দিকে অগ্রসর হন। এই এলাকায় হাওয়াজিন ও সাকীফ গোত্র মালিক ইবনু আউফ নাযারীকে রাজা বানিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। হুনাইন মক্কা ও তাইফের মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা। মুসলিম বাহিনী এই উপত্যকায় পৌঁছে। শত্রু সেনারা দুই পাশের পাহাড় থেকে তীর বর্ষণ করতে শুরু করে। সংখ্যাধিক্যের কারণে কিছু সংখ্যক মুসলিম মনে করলো যে এবারের যুদ্ধে তো মুসলিমরা জিতবেই। আল্লাহ তাদের এই মনোভাব পছন্দ করেননি।
শত্রুদের তীর বর্ষণের মুখে মুসলিম বাহিনীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। অনেকেই পিছু হটে। আল্লাহর রাসূল (সা) ও একদল সাহাবী যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে রইলেন ও যুদ্ধ করার জন্য মুসলিমদের আহবান জানাতে থাকলেন। ভুল বুঝতে পেরে মুসলিমরা আবার এগিয়ে আসে। প্রচন্ড লড়াই হয়। এই যুদ্ধে ৭০ জন শত্রুসেনা নিহত হন। বন্দী হয় হাজারের বেশী লোক মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হয়। যুদ্ধের পর মুসলিমদের প্রশিক্ষণের জন্যে আল্লাহ নিন্মোক্ত বাণী নাযিল করেন,
এবং হুনাইনের দিন। সেদিন তোমাদের সংখ্যধিক্যের অংহকার ছিলো। কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। যমীন তার প্রশস্ততা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। আর তোমরা পিছু হটে পালালে। অতপর রাসূল ও মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা প্রশান্তি ধারা ঢেলে দিলেন। আর এমন বাহিনী পাঠালেন যা তোমরা দেখনি। কাফিরদেকে তিনি শাস্তি দিলেন। এটাই কাফিরদে প্রতিফল। সূরা আত তাওবা : ২৫-১৬
মূতা যুদ্ধ
হিজরী অষ্টম সন। জমাদিউল উলা মাস।
সিরিয়া সীমান্ত অশান্ত হয়ে উঠে। সিরিয়া তখন রোম সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রদেশ। সিরিয়া সীমান্তে তখন বেশ কয়েকটি খৃস্টান গোত্র বাস করতো। তাদের নিকট ইসলামের আহবান পৌঁছানোর জন্যে আল্লাহর রাসূল (সা) ষোলজন মুবাল্লিগ প্রেরণ করেন।
খৃষ্টানগণ পনর জন মুসলিম মুবাল্লিগকে হত্যা করে।
দলের নায়ক কাব ইবনু উমার আল গিফারী কোন প্রকারে বেঁচে যান। এই দিকে বাসরায় নিযুক্ত রোমের গভর্ণর শেরজিল আল্লাহর রাসূলের (সা) দূত হারিস ইবনু উমাইরকে (রা) হত্যা করে।
তাই সিরিয়ার দিকে সৈন্য পাঠানো অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
তিন হাজার মুসলিম সেনা অগ্রসর হয়।
শেরজিল ১ লাক্ষ সৈন্য নিয়ে সামনে এগুতে থাকে।
রোম-সম্রাট তাঁর ভাই থিওডরের সেনাপতিত্বে আরো ১লাক্ষ সৈন্য পাঠায়। সম্মিলিত বাহিনী তিন হাজার মুসলিমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মৃতা নামক স্থানে সংঘটিত হয় এই যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে মুসলিম সেনাপতি যায়িদ ইবনু হারিসা (রা), জাফর ইবনু আবি তালিব (রা), আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রা) শহীদ হন। পরে সনাপতি হন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রা)।
তিনি নতুন কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ চালাতে থাকেন। শেষে সৈন্যদের নিয়ে রনাংগনের এক প্রান্তে পৌঁছে যান। রোমান বাহিনী অন্য প্রান্তে অবস্থান গ্রহণ করেন। এইভাবে যুদ্ধ থেমে যায়।
খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ সসৈন্য মদীনায় ফেরেন।
এই যুদ্ধ কালে অন্যতম রোমান সেনাপতি ফারওয়া ইবনু আমার আল জুজামী ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি রোমদের হাতে বন্দী হন। রোমান সম্রাট তাঁকে বলেন, ইসলাম ত্যাগ করে নিজের পদে বহাল হও, তা না হলে মৃত্যুর জন্য তৈরী হও।
বলিষ্ঠ কন্ঠে তিনি জবাব দেন, আখিরাতের কামিয়াবী বরবাদ করে দুনিয়ার কোন পদ গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত নেই।
এর পর তাঁকে শহীদ করা হয়। কিন্তু ইসলামের নৈতিক শক্তি দেখে দুশমনরা অবাক হয়ে যায়।
অধ্যায় ১৬ : হুনাইন ও মূতার যুদ্ধ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: