ইতিমধ্যে নঈম সিদ্দিকির সতর্কতায়, জামায়াত bureaucracy (অফিসিয়ালস)তাদের যত ধরনের রিসোর্স ছিল যেমন সার্কুলার,পত্রিকা,ম্যাগাজিনের মাধ্যমে মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহী ও রিভিউ কমিটির প্রতি বিষেদাগার করে খবর ছড়িয়ে দেয় যাতে করে রিভিউ কমিটি তাদের প্রাপ্ত ফলাফল ও পর্যবেক্ষন আসছে রুকন সম্মেলনে উপস্থাপন করার আগেই তাদের থেকে সদস্যদের মন উঠে যায়।(1)
জামায়াত অফিসিয়ালস চাচ্ছিলেন তদন্ত কমিটির ফাইন্ডিংস,আমিরের বিরুদ্ধে রিভিউ কমিটির আনীত অনুযোগ,কমিটির উপর আমিরের অযাচিত হস্তক্ষেপের সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যত নিয়ে এতদিন ধরে চলা বিতর্ক থেকে শুধু মাত্র মাওলানা মওদুদীর আমির থেকে পদত্যাগের দিকে সম্মেলনের দৃষ্টি সড়িয়ে আনা।অফিসিয়ালস মাওলানা মওদুদীকে বুঝাতে সামর্থ হয় যে,তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ হচ্ছে মাওলানা ও জামায়াতের বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র!তারা মাওলানাকে আরো বুঝায় রিভিউ কমিটির সাপোর্টে মাওলানা ইসলাহি জামায়াতের আমির হওয়ার পরিকল্পনা করছেন,এটা এমন এক ধরনের accusation which had enough truth to it to seem compelling to Mawdudi।ফলে মাওলানা মওদুদী খুবই শক্ত হস্তে তার সমালোচনার জবাব দেয়ার সীদ্ধান্ত নেন এবং সংগঠনে যারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতা ব্যবহার করে হলেও জামায়াতকে একতাবদ্ধ রাখার দৃঢ় অবস্থান নেন।মাও ইসালাহী তার বিরুদ্ধে আনীত এ ধরনের অভিযোগে একরম নিশ্চুপ হয়ে যান এবং গুজবকে ভূল প্রমাণ করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য মাওলানা মওদুদীকে আমির হিসেবে মেনে নেয়ার সকল প্রস্তাবনায় সম্মতি দিয়ে দেন।(2)
মাওলানা মওদুদীর সমর্থনে জামায়াতে অফিসিয়ালস আরো একধাপ এগিয়ে offensive অবস্থান নেয়।তারা সাঈদ আহমেদ মালিক যে কিনা রিভিউ কমিটির কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন, আব্দুল রহিম আশরাফ যিনি কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন তাদেরকে সংগঠন থেকে প্রথমে suspend করেন এবং পরে একেবারে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করেন রাওয়ালিপিন্ডি ও ফায়সালাবাদ আমীর দ্বারা।(3)
এই ঘটনার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে আব্দুল জব্বার গাজী পদত্যাগ করেন,ফলে ঘটনা এবার অন্যদিকে মোড় নেয়।মাছিগোট সম্মেলনের কিছু দিন আগে শুরা বৈঠকে মাওলানা মওদুদীকে পরামর্শ দেয়া হয় যাতে তিনি আমীর হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যান এবং আরেকটা কমিটি তৈরির প্রস্তাব করা হয় যারা কিনা রিভিউ কমিটির প্রস্তাবনা গুলো স্টাডি করে দেখবেন।মাওলানা মওদুদী এই ধরনের কমিটির প্রস্তাবনাকে নাকচ করে দেন এবং বলেন তাহলে তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করবেন।শুধু মাত্র তার পদত্যাগ ও ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহনের বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে।মাওলানা মওদুদীর সাপোর্টারদের আদেশে শুরা এটা ঘোষনা করেন যে তারা রিভিউ কমিটির স্থলে মাওলানা মওদুদীকে আমীর হিসেবে দেখতে চান।(4)
ঐতিহাসিক মাছিগোট রুকন সম্মেলন
মাছিগোট(Machchi Goth) হচ্ছে পান্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালুর বিভাগের অন্তর্গত মরুভুমি সংলগ্ন একটি গ্রাম।পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৪ জন সহ সর্বমোট ৯৩৫জন রুকন ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।(5)পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত খবরের আলোকে মাওলানা মওদুদীর প্রতি সহমর্মিতা ও জামায়াতের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্দিগ্ন মন নিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হন সবাই।সম্মেলনের প্রথম দিন ইসলামী জমিয়তে তালাবার(ছাত্র সংঘ)সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন করাচীর প্রভাবশালী রুকন ডক্টর ইসরার আহমেদ বক্তব্য রাখলেন,তিনি মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য থেকে,বই থেকে বহু উদ্ধৃতি দিয়ে জামায়াতকে রাজনীতিতে একটিভলি অংশগ্রহনের বিপক্ষে অবস্থান নেন।(6)
মাও ইসলাহি ছিলেন প্রতিপক্ষের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী।সম্মেলনের দ্বীতিয় দিনে তিনি বক্তব্য দিতে দাড়িয়ে মাওলানা মওদুদীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বলেন; "মাওলানা মওদুদীর ডাকে সাড়া দিয়েই আমরা জামায়াতে ইসলামীতে শরীক হয়েছি।মাওলানাকে বলতে চাই,আপনি আমাদেরকে ছেড়ে কোথায় যাবেন?আমরা আপনার জামা ধরে আটকে রাখব"(7)।
যে সকল কারনে মাও মওদুদীর সাথে তার দুরুত্ব তৈরি হয়েছে সেই সব বিষয়ে কোন প্রশ্নই তুললেন না বরং ১৯৫১ সালের নভেম্বরে গৃহীত ৪দফার আলোকে বক্তব্য রাখলেন।(8)
মাওলানা ইসলাহির বক্তব্যের খুব ভাল সারাংশ করেছেন কলিম বাহাদুর;
• ইসলাহি বলেন, স্লোগানের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তনকে তিনি ইসলামিক বিপ্লব মনে করেন না এবং এটাও মনে করেন না নির্বাচনী প্রচারণাই সমাজ পরিবর্তন করে দিবে।গঠনমুলক কাজ, ইসলাহির মতে ভবিষ্যত নির্বাচনের জন্য ground তৈরি করবে।The people were not so eager to change the leadership of the country that if the Jamat did not participate in the election, Islam would be defeated.(মানুষ রাষ্ট্রের নেতৃত্ব পরিবর্তনে এতটা আকাঙ্খী নয় যে, যদি জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহন না করে ইসলামের পরাজয় ঘটবে)
• তিনি আরো বলেন,নীতির সাথে আপস ব্যাতীত নির্বাচনে অংশগ্রহন কোনভাবেই সম্ভব নয়।He alleged that candidature which had been condemned on the basis of Quran and Hadith, was now being justified without any reference to the Book and Sunnah.এটা হচ্ছে নীতির সাথে আপসের শুরু মাত্র এবং জামায়াত তা করতে বাধ্য হবে।(9)
মাওলানা মওদুদীও তার ৬ঘন্টার বক্তৃতার প্রথমে ডক্টর ইসরার আহমেদের জবাবে বলেন "আমার লেখা উদ্ধৃতি করেই আমাকে নসিহত করা হয়েছে এবং বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আগের লেখার কথা ভুলে গেছি এবং নিজের লেখার বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়েছি।আমার লেখা গবেষনা করার সময় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি।ব্রিটিশদের গোলামী যুগের আইনসভার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে আমার লেখাকে পাকিস্তানের আইনসভার নির্বাচনে প্রয়োগ করা হাস্যকর"(10)।
পরবর্তিতে রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন,রাজনীতিই হচ্ছে একমাত্র রাস্তা যার মাধ্যমে "ইকামতে দ্বীন"(ইসলামিক জীবন ব্যাবস্থা)ও হুকুমতে ইলাহী(আল্লাহ প্রদত্ত রাষ্ট্র ব্যাবস্থা) কায়েম করা সম্ভব(11)। Neither ("ইকামতে দ্বীন" ও হুকুমতে ইলাহী) would be attainable if the Jama'at permitted the secular forces to become too entrenched. The organization must abandon its isolation and enter the political scene, if not to further its own cause, at least to deny success to its adversaries. (12)
মাওলানা ইসলাহির বক্তব্যে কিছুটা সমঝোতার সুর ছিল যার কারনে তিনি রিভিউ কমিটির কোন কথা তুলেননি কিন্তু মাও মওদুদী তাতে ভ্রুক্ষেপ করেন নি, যা মাওলানা ইসলাহিকে রাগান্বিত করে এবং তিনি পরবর্তিতে জামায়াত ছেড়ে দেন।পরবর্তিতে মাওলানা মওদুদীকে লেখা তার একটি চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, চৌধুরী গোলাম মোহাম্মদ তাকে এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে মাওলানা মওদুদী কিছু অভিযোগ মেনে নিয়েছেন এবং তাকে accommodate করে নিতে রাজি আছেন।কিন্তু মাছিগোটে এর কোন আভাষ পাওয়া যায়নি বরং মাওলানা মওদুদী সবার সামনে ঠান্ডা মেজাজে তাকে দমানোর চেষ্টা করেছেন।এই অনুভূতিই প্রধান কারন যা তাকে জামায়াত ছেড়ে চলে বাধ্য করে বলে তিনি লিখেন।(13)
মাওলানা মওদুদীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত মাওলানা জাফর আহমেদ আনসারীর নিশ্চয়তার ভিত্তিতে মাও ইসলাহী তার আগের পদত্যাগ পত্র তুলে নিয়েছিলেন এই আশায় যে, মাছিগোটে কোন একটা সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে।ইসলাহি মনে করেন তিনি তার পক্ষে সব কিছু করেছেন কিন্তু মাওলানা মওদুদী তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছেন।(14)
যারা আগের দুইটা পোষ্ট পড়েছেন একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, যেখানে থেকে সমস্যার সুত্রপাত সেই রিভিউ কমিটির রিপোর্ট(যেখানে সংগঠনের নৈতিক মান নিয়ে,অর্থের অপব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা হয়েছে)নিয়ে কোন কথাই হলোনা পুরো সম্মেলন জুড়ে।মাওলানা মওদুদী ও তার বিপক্ষে যারা, তাদের কেউই এ বিষয়ে কিছু বলেন নি।An ethical issue had turned into a political one and served as the handmaiden for the party's greater politicization. (15)
সব বাদ দিয়ে আলোচনা চলে এক ধফা নিয়ে,রাজনীতিতে অংশগ্রহন করা না করা নিয়ে।ইসরার আহমেদ বলেন, আব্দুল রহিম আশরাফ সম্মেলনের সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোহাম্মদের কাছে যথেষ্ট সময় নিয়ে সব কিছু বলার গ্যারান্টি চেয়েছিলেন।কিন্তু মাওলানা মওদুদী তার ঐ অনুরোধ রাখতে দেননি এবং রিভিউ কমিটির রিপোর্ট কে সম্মেলনের এজেন্ডারই অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি।গোলাম মোহাম্মদ শুধু মাওলানা মওদুদীর আনুগত্য করে গেছেন।(16)
মাছিগোটের ফলাফল:
উভয় পক্ষে যুক্তি পাল্টা যুক্তির মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার পর সম্মেলনের তৃতীয় দিনে সভাপতি রুকনদের ভোট দিতে বলেন;৯৩৫ জন রুকনের মধ্যে জামায়াতের নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে হাত তুলেন ১৮ জন(গোলাম আযম)মতান্তরে ১৫ জন যাদের সবাই ছিলেন জামায়াতের weight and intellectual figure.(17) তারা জামায়াত থেকে বেরিয়ে যান।
মজার ব্যাপার হচ্ছে মাও ইসলাহি ও ডক্টর ইসরার আহমেদ সহ রিভিউ কমিটির কয়েকজন সদস্য ঐ ১৮ জনের মধ্যে ছিলেন না। তারা সহ জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্ব Kot Shair Sangh(কোট শাইর সংঘ)নামে পাশ্ববর্তি আরেকটি গ্রামে মিলিত হন যাকে আশরাফ চিহ্নিত করেছেন "জামায়াতের কারবালা" হিসেবে।যেটা পরবর্তি পোষ্টে আশাকরি জানা যাবে।
জামায়াত অফিসিয়ালস চাচ্ছিলেন তদন্ত কমিটির ফাইন্ডিংস,আমিরের বিরুদ্ধে রিভিউ কমিটির আনীত অনুযোগ,কমিটির উপর আমিরের অযাচিত হস্তক্ষেপের সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যত নিয়ে এতদিন ধরে চলা বিতর্ক থেকে শুধু মাত্র মাওলানা মওদুদীর আমির থেকে পদত্যাগের দিকে সম্মেলনের দৃষ্টি সড়িয়ে আনা।অফিসিয়ালস মাওলানা মওদুদীকে বুঝাতে সামর্থ হয় যে,তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ হচ্ছে মাওলানা ও জামায়াতের বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র!তারা মাওলানাকে আরো বুঝায় রিভিউ কমিটির সাপোর্টে মাওলানা ইসলাহি জামায়াতের আমির হওয়ার পরিকল্পনা করছেন,এটা এমন এক ধরনের accusation which had enough truth to it to seem compelling to Mawdudi।ফলে মাওলানা মওদুদী খুবই শক্ত হস্তে তার সমালোচনার জবাব দেয়ার সীদ্ধান্ত নেন এবং সংগঠনে যারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতা ব্যবহার করে হলেও জামায়াতকে একতাবদ্ধ রাখার দৃঢ় অবস্থান নেন।মাও ইসালাহী তার বিরুদ্ধে আনীত এ ধরনের অভিযোগে একরম নিশ্চুপ হয়ে যান এবং গুজবকে ভূল প্রমাণ করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য মাওলানা মওদুদীকে আমির হিসেবে মেনে নেয়ার সকল প্রস্তাবনায় সম্মতি দিয়ে দেন।(2)
মাওলানা মওদুদীর সমর্থনে জামায়াতে অফিসিয়ালস আরো একধাপ এগিয়ে offensive অবস্থান নেয়।তারা সাঈদ আহমেদ মালিক যে কিনা রিভিউ কমিটির কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন, আব্দুল রহিম আশরাফ যিনি কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন তাদেরকে সংগঠন থেকে প্রথমে suspend করেন এবং পরে একেবারে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করেন রাওয়ালিপিন্ডি ও ফায়সালাবাদ আমীর দ্বারা।(3)
এই ঘটনার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে আব্দুল জব্বার গাজী পদত্যাগ করেন,ফলে ঘটনা এবার অন্যদিকে মোড় নেয়।মাছিগোট সম্মেলনের কিছু দিন আগে শুরা বৈঠকে মাওলানা মওদুদীকে পরামর্শ দেয়া হয় যাতে তিনি আমীর হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যান এবং আরেকটা কমিটি তৈরির প্রস্তাব করা হয় যারা কিনা রিভিউ কমিটির প্রস্তাবনা গুলো স্টাডি করে দেখবেন।মাওলানা মওদুদী এই ধরনের কমিটির প্রস্তাবনাকে নাকচ করে দেন এবং বলেন তাহলে তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করবেন।শুধু মাত্র তার পদত্যাগ ও ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহনের বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে।মাওলানা মওদুদীর সাপোর্টারদের আদেশে শুরা এটা ঘোষনা করেন যে তারা রিভিউ কমিটির স্থলে মাওলানা মওদুদীকে আমীর হিসেবে দেখতে চান।(4)
ঐতিহাসিক মাছিগোট রুকন সম্মেলন
মাছিগোট(Machchi Goth) হচ্ছে পান্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালুর বিভাগের অন্তর্গত মরুভুমি সংলগ্ন একটি গ্রাম।পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৪ জন সহ সর্বমোট ৯৩৫জন রুকন ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।(5)পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত খবরের আলোকে মাওলানা মওদুদীর প্রতি সহমর্মিতা ও জামায়াতের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্দিগ্ন মন নিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হন সবাই।সম্মেলনের প্রথম দিন ইসলামী জমিয়তে তালাবার(ছাত্র সংঘ)সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন করাচীর প্রভাবশালী রুকন ডক্টর ইসরার আহমেদ বক্তব্য রাখলেন,তিনি মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য থেকে,বই থেকে বহু উদ্ধৃতি দিয়ে জামায়াতকে রাজনীতিতে একটিভলি অংশগ্রহনের বিপক্ষে অবস্থান নেন।(6)
মাও ইসলাহি ছিলেন প্রতিপক্ষের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী।সম্মেলনের দ্বীতিয় দিনে তিনি বক্তব্য দিতে দাড়িয়ে মাওলানা মওদুদীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বলেন; "মাওলানা মওদুদীর ডাকে সাড়া দিয়েই আমরা জামায়াতে ইসলামীতে শরীক হয়েছি।মাওলানাকে বলতে চাই,আপনি আমাদেরকে ছেড়ে কোথায় যাবেন?আমরা আপনার জামা ধরে আটকে রাখব"(7)।
যে সকল কারনে মাও মওদুদীর সাথে তার দুরুত্ব তৈরি হয়েছে সেই সব বিষয়ে কোন প্রশ্নই তুললেন না বরং ১৯৫১ সালের নভেম্বরে গৃহীত ৪দফার আলোকে বক্তব্য রাখলেন।(8)
মাওলানা ইসলাহির বক্তব্যের খুব ভাল সারাংশ করেছেন কলিম বাহাদুর;
• ইসলাহি বলেন, স্লোগানের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তনকে তিনি ইসলামিক বিপ্লব মনে করেন না এবং এটাও মনে করেন না নির্বাচনী প্রচারণাই সমাজ পরিবর্তন করে দিবে।গঠনমুলক কাজ, ইসলাহির মতে ভবিষ্যত নির্বাচনের জন্য ground তৈরি করবে।The people were not so eager to change the leadership of the country that if the Jamat did not participate in the election, Islam would be defeated.(মানুষ রাষ্ট্রের নেতৃত্ব পরিবর্তনে এতটা আকাঙ্খী নয় যে, যদি জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহন না করে ইসলামের পরাজয় ঘটবে)
• তিনি আরো বলেন,নীতির সাথে আপস ব্যাতীত নির্বাচনে অংশগ্রহন কোনভাবেই সম্ভব নয়।He alleged that candidature which had been condemned on the basis of Quran and Hadith, was now being justified without any reference to the Book and Sunnah.এটা হচ্ছে নীতির সাথে আপসের শুরু মাত্র এবং জামায়াত তা করতে বাধ্য হবে।(9)
মাওলানা মওদুদীও তার ৬ঘন্টার বক্তৃতার প্রথমে ডক্টর ইসরার আহমেদের জবাবে বলেন "আমার লেখা উদ্ধৃতি করেই আমাকে নসিহত করা হয়েছে এবং বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আগের লেখার কথা ভুলে গেছি এবং নিজের লেখার বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়েছি।আমার লেখা গবেষনা করার সময় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি।ব্রিটিশদের গোলামী যুগের আইনসভার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে আমার লেখাকে পাকিস্তানের আইনসভার নির্বাচনে প্রয়োগ করা হাস্যকর"(10)।
পরবর্তিতে রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন,রাজনীতিই হচ্ছে একমাত্র রাস্তা যার মাধ্যমে "ইকামতে দ্বীন"(ইসলামিক জীবন ব্যাবস্থা)ও হুকুমতে ইলাহী(আল্লাহ প্রদত্ত রাষ্ট্র ব্যাবস্থা) কায়েম করা সম্ভব(11)। Neither ("ইকামতে দ্বীন" ও হুকুমতে ইলাহী) would be attainable if the Jama'at permitted the secular forces to become too entrenched. The organization must abandon its isolation and enter the political scene, if not to further its own cause, at least to deny success to its adversaries. (12)
মাওলানা ইসলাহির বক্তব্যে কিছুটা সমঝোতার সুর ছিল যার কারনে তিনি রিভিউ কমিটির কোন কথা তুলেননি কিন্তু মাও মওদুদী তাতে ভ্রুক্ষেপ করেন নি, যা মাওলানা ইসলাহিকে রাগান্বিত করে এবং তিনি পরবর্তিতে জামায়াত ছেড়ে দেন।পরবর্তিতে মাওলানা মওদুদীকে লেখা তার একটি চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, চৌধুরী গোলাম মোহাম্মদ তাকে এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে মাওলানা মওদুদী কিছু অভিযোগ মেনে নিয়েছেন এবং তাকে accommodate করে নিতে রাজি আছেন।কিন্তু মাছিগোটে এর কোন আভাষ পাওয়া যায়নি বরং মাওলানা মওদুদী সবার সামনে ঠান্ডা মেজাজে তাকে দমানোর চেষ্টা করেছেন।এই অনুভূতিই প্রধান কারন যা তাকে জামায়াত ছেড়ে চলে বাধ্য করে বলে তিনি লিখেন।(13)
মাওলানা মওদুদীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত মাওলানা জাফর আহমেদ আনসারীর নিশ্চয়তার ভিত্তিতে মাও ইসলাহী তার আগের পদত্যাগ পত্র তুলে নিয়েছিলেন এই আশায় যে, মাছিগোটে কোন একটা সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে।ইসলাহি মনে করেন তিনি তার পক্ষে সব কিছু করেছেন কিন্তু মাওলানা মওদুদী তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছেন।(14)
যারা আগের দুইটা পোষ্ট পড়েছেন একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, যেখানে থেকে সমস্যার সুত্রপাত সেই রিভিউ কমিটির রিপোর্ট(যেখানে সংগঠনের নৈতিক মান নিয়ে,অর্থের অপব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা হয়েছে)নিয়ে কোন কথাই হলোনা পুরো সম্মেলন জুড়ে।মাওলানা মওদুদী ও তার বিপক্ষে যারা, তাদের কেউই এ বিষয়ে কিছু বলেন নি।An ethical issue had turned into a political one and served as the handmaiden for the party's greater politicization. (15)
সব বাদ দিয়ে আলোচনা চলে এক ধফা নিয়ে,রাজনীতিতে অংশগ্রহন করা না করা নিয়ে।ইসরার আহমেদ বলেন, আব্দুল রহিম আশরাফ সম্মেলনের সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোহাম্মদের কাছে যথেষ্ট সময় নিয়ে সব কিছু বলার গ্যারান্টি চেয়েছিলেন।কিন্তু মাওলানা মওদুদী তার ঐ অনুরোধ রাখতে দেননি এবং রিভিউ কমিটির রিপোর্ট কে সম্মেলনের এজেন্ডারই অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি।গোলাম মোহাম্মদ শুধু মাওলানা মওদুদীর আনুগত্য করে গেছেন।(16)
মাছিগোটের ফলাফল:
উভয় পক্ষে যুক্তি পাল্টা যুক্তির মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার পর সম্মেলনের তৃতীয় দিনে সভাপতি রুকনদের ভোট দিতে বলেন;৯৩৫ জন রুকনের মধ্যে জামায়াতের নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে হাত তুলেন ১৮ জন(গোলাম আযম)মতান্তরে ১৫ জন যাদের সবাই ছিলেন জামায়াতের weight and intellectual figure.(17) তারা জামায়াত থেকে বেরিয়ে যান।
মজার ব্যাপার হচ্ছে মাও ইসলাহি ও ডক্টর ইসরার আহমেদ সহ রিভিউ কমিটির কয়েকজন সদস্য ঐ ১৮ জনের মধ্যে ছিলেন না। তারা সহ জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্ব Kot Shair Sangh(কোট শাইর সংঘ)নামে পাশ্ববর্তি আরেকটি গ্রামে মিলিত হন যাকে আশরাফ চিহ্নিত করেছেন "জামায়াতের কারবালা" হিসেবে।যেটা পরবর্তি পোষ্টে আশাকরি জানা যাবে।
0 comments: