শিরোনামের ব্যখ্যা দিয়েই আজ লেখা শুরু করি।আগের পোষ্টেই আপনারা জেনেছেন যে প্রচলিত ৬ দফায় তাবলীগ জামায়াত যে আন্দোলন করছিলেন তা সত্ত্বেও সমাজে যে শুন্যস্থান ছিল তা পুরনের লক্ষ্যেই অথবা এটাও বলা যায় মানুষকে বিকল্প কিছু দেয়ার জন্যই মুলত জামায়াত ইসলামী গঠন হয়েছিল।সেই ছোটবেলায় যখন থেকে সংগঠনের সাথে উঠাবসা শুরু হয়েছে তখন থেকেই একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে তাবলীগ জামায়াত ভাল কিন্তু “অপরিপূর্ণ” কারন তারা পলিটিকসতো করেইনা বরং মানুষকে রাজনীতির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে।আর কেবল মাত্র জামায়াত পরিপূর্ন কারন আমরা রাজনীতির মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লব সাধিত করব।আর ছোটবেলার সেই ধারনা থেকেই আজকের শিরোনাম।
রাসুল (সঃ)এর বিপ্লব-ই-একমাত্র উদাহরন
রাসুল (সঃ)এর বিপ্লবের পদ্ধতি মাওলানা মওদুদীকে অভিভূত করেছিল।রাসুল (সঃ) ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রথমে মক্কায় এবং পরে মদীনায় মুসলমানদেরকে সংগঠিত করে ছিলেন যার ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে ইসলাম সমগ্র আরব জয় করে নিয়েছিল।মাওলানার মতে ঐ অর্জিত সফলতাকে শুধুমাত্র রাসুলের বাণীর শক্তি বলে বর্নণা করা যাবেনা এবং এও বলা যায়না যে এটা শুধু মাত্র আল্লাহ চেয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে[এর মানে এই নয় আল্লাহ চাইলেই পারেন না;আসলে এখানে বুঝানো হচ্ছে আল্লাহ সব কিছুই পারেন তবে তার করার কিছু সুন্নত(পদ্ধতি) রয়েছে]বরং এটা ছিল Prophet's organizational geniuses অর্থাৎ মাত্র ১৩ বছরে রাসুলের দক্ষ হাতে তৈরি করা খুবই ছোট্ট কিন্তু আনুগত্যকারী,উদ্দ্যমী এবং নিঃস্বার্থ পর একটা সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার প্রতিফলন।(1)
রাসুল (সঃ)কে আদর্শ ধরে নিয়ে মাওলানা মওদুদী রাসুলের বিপ্লবী আন্দোলনকে চার ভাগে ভাগ করেন;(2)
প্রথমত,একটা শক্তিশালী কাঠামো ও ভিত্তি গড়ার লক্ষ্যে রাসুল সমাজে অনেক সমস্যা থাকলেও সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষকে সর্বোপ্রথম ঈমানের দিকে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার আহবান জানান
দ্বীতিয়ত, যারা রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তাদেরকে তিনি একটা প্লাটফরমে সংগঠিত করেছেন, এবং তাদেরকে(মক্কী সাহাবীগন) সম্ভাব্য সকল প্রকার নির্যাতনের অগ্নি পরীক্ষায় নিখাদ সোনা হিসেবে তৈরি করেন
তৃতীয়ত, রাসুল নিজেই ছিলেন নেতা হিসেবে আদর্শের মডেল তিনি তাদেরকে ঐ মানের যোগ্য নেতৃত্ব দানের লক্ষ্যে ইসলামের মৌলিক নীতির আলোকে জীবন যাপনের জন্য প্রশিক্ষিত করে তুলেন এবং তাদের মাধ্যমে সমাজে খারাপের বিপরীতে ভাল হিসেবে উদাহরন হিসেবে উপস্থাপন করে যথেষ্ঠ শক্তিশালী জনমত তৈরি করেন।
সবশেষে,রাসুলের বিপ্লবের শেষ পর্যায় শুরু হয় মদীনায় যখন ইসলামিক principle এর আলোকে পরিপূর্ন ভাবে প্রশিক্ষিত প্রায় ৪০০ সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে উদাহরন হওয়ার মত লোক তৈরি হলো তখনই আদর্শের কার্যকর স্বাভাবিক বিপ্লব সাধিত হল ।প্রশিক্ষিত ঐ বিপ্লবী বাহিনীকে যখন মদীনার প্রশাসন পরিচালনার ভার দেয়া হলো ,তারা দায়িত্ব নিয়ে ইসলামী শিক্ষার আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যে মাত্র ৮ বছরে সমগ্র আরব ইসলামের সুমহান বিপ্লবী ঢাকে স্বতস্ফুর্ত সাড়া দেয়।
মাওলানা মওদুদী মনে করতেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেও এমন করা সম্ভব, তার নিজের ভাষায় "All those persons who thus surrender themselves are welded into a community and that is how the 'Muslim society' comes into being."(3)
পৃথিবীকে বদলের দেয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু জামায়াতের
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক(কোথাও আছে দল) অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে৷(আল ইমরান:১০৪)
১৯৪০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রেচী হলে প্রদত্ত ভাষনে মুসলিম লীগের তথাকথিত “ইসলামী রাষ্ট্রের” নামে "মুসলিম জাতীয়তাবাদ" কে অসাড় প্রমাণ করে দিয়ে বরং একে Nation state সৃষ্টি করে ভোটের মাধ্যমে(গনতন্ত্র)কতিপয় লোকের ক্ষমতা দখলের এক প্রকার ইমোশনাল ভাওতাবাজী আখ্যা দিয়ে(4) মাওলানা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে রাসুল (সঃ)এর প্রদর্শিত বিপ্লবের মডেল অনুসারে জামায়াতে ইসলামী গঠন করেন এবং তার কর্মপরিধিকে প্রধানত ৪ টি ধারায় নির্ধারণ করেন(5);
প্রথমত,আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার আহবান অর্থাৎ মানুষকে সরাসরি শুধু মাত্র আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয়ার(purely কালেমার)দাওয়াত দেয়া হবে।এর অংশ হিসেবে মুসলিম সমাজে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে অনইসলামিক যতসব উপাদান মুসলমানরা নিজেদের ঈমানের অংশ হিসেবে মনে করতে তার মুলৎপাটন করা। এক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান এবং আরব মহাদেশে শেখ মোহাম্মদ আবদুহ সহ পূর্ববর্তী মুসলিম স্কলারগন যারা western dominance এর ফলে ইসলামকে পশ্চিমা মানদন্ডে উত্তীর্ণ করার জন্য apologetic approach নিয়ে ইসলামিক আইনের ক্ষেত্রে compromise করছেন বলে মাওলানার মনে হয়েছে সেগুলোকে আবার মুল ধারায় ও সঠিক মানদন্ডে উর্ত্তীণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন।(6)
দ্বীতিয়ত, যারা ঐ দাওয়াতে সাড়া দিবে তাদেরকে সংগঠিত করা হবে।তিনি বলেন ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে এমন একদল দঃসাহসী যুবকের প্রয়োজন,যারা সত্যের প্রতি ঈমান এনে তার উপর পাহাড়ের মতো অটল থাকবে।অন্য কোন দিকে তাদের দৃ্ষ্টি নিবদ্ধ হবেনা।পৃথিবীতে যা-ই ঘটুক না কেন,তারা নিজেদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের পথ থেকে এক ইন্ঞ্চিও বিচ্যুত হবেনা এবং যারা সমাজে নিজেদের কর্ম দ্বারা উদাহরণ সৃষ্টি করে সমাজকে নেতৃত্ব দিবে (7)। ফলে দেখা যায় জামায়াতের অনেক সদস্য ঐ সময় নিজের এলাকা/জব ছেড়ে পাঠানকোটে চলে যান।মাওলানা মনজুর নোমানীতো একে হিজরত হিসেবে আখ্যায়িত করেন।(8)
তৃতীয়ত,সমাজের মানুষের চিন্তার পুণর্গঠন ও চেতনায় ইসলামী বিপ্লবের ধারনা পৌছে দেয়ার জন্য কেম্পেইন শুরু করা।এই জন্য একদল যোগ্য কর্মি তৈরির লক্ষ্যে গ্রামে,গন্জে,শহরে দ্বীনের দাওয়াত পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ইসলামিক principle এর আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।এই সময় জামায়াত অনেক বই,পত্রিকা,পাম্পলেট প্রকাশ করতে থাকে।সর্বোপরি The Pathankot years (1942-1947) were a time of organizational and intellectual consolidation. Pathankot provided time for learning, debate, and intellectual creativity. Many of the Jama'at's members belonged to different religious schools of thought, and the impact of the debates between Deobandis, Nadwis, Islahis, and the Ahl-i Hadith during this period was later to appear in some of the ways Mawdudi read Islam and its place in society. (9)
সর্বশেষ,জামায়াত ইসলামের আদলে সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে জনমত গঠনের কাজ করতে থাকে।যদিও জামায়াত তখন কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছিলনা তথাপি সমাজকে ইসলামের আদলে পরিবর্তনের জন্য প্রভাবশালী ব্যাক্তিদেরকে টার্গেট করে কাজ করছিল। দলের সদস্য শুধুমাত্র পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং যারা সৎ,ধার্মিক ও খুবই উচুঁমানের নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ছিল একমাত্র তাদেরকেই দলের সদস্যপদ দেয়া হত। The Emphasis of the Jamat was not on number but on character, ideological commitment, discipline, spirit of sacrifice for fellow members, and dedication to the cause. (10)
জামায়াত সে সময় সত্যের পক্ষে দাড়িয়েছে এমনকি তা যদি জনগনের প্রচলিত মতের বিপক্ষেও যায়।ইসলামিক বিপ্লবের লক্ষ্যে জামায়াত প্রাধান্য দিয়েছিল মানুষের মানসিক চিন্তার বিকাশ,শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব সাধন ,চিন্তার পরিশুদ্ধকরন ও পূনর্গঠন করে সমাজ পরিবর্তনের দিকে।(11) ফলে দেখা যায় রাজনীতি জামায়াতকে তেমন প্রভাবিত করতে পারেনি, রাজনীতি জামায়াতের কর্মসূচীতে ছিল বটে কিন্তু তা ছিল সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ন।
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِالل
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য৷তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷(আল ইমরান ১১০)
শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয় বরং সাড়া বিশ্ব হবে কর্মক্ষেত্র
জামায়াতের কাজ কি কাজের পরিধি কি হবে তার বর্ণনায় মাওলানা মওদুদী বলেন জামায়াতের কাজের নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই,তার কাজের পরিধির মধ্যে রয়েছে গোটা মানব জীবন।
তিনি দীপ্তকন্ঠে আরো বলেন “যারা জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করবে তাদের প্রত্যেকের একথা ভালো করে বুঝে নেয়া দরকার যে, জামায়াতে ইসলামীর সামনে যে কাজ রয়েছে তা যেমন তেমন কাজ নয়। দুনিয়ার নীতি নৈতিকতা, রাজনীতি, সভ্যতা সংস্কৃতি, অর্থর্নীতি, সমাজনীতি প্রতিটি বস্তুর পরিবর্তণ করে দিতে হবে। খোদাদ্রোহিতার উপর যে ব্যবস্থা এই দুনিয়ায় কায়েম রয়েছে তা বদলিয়ে খোদার আনুগত্যের উপর তা কায়েম করতে হবে।এ কাজে সকল শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম ও প্রতিটি পদক্ষেপের পূর্বে প্রত্যেককে ভাল করে বুঝে নিতে হবে যে সে কোন কন্টকময় পথে পা বাড়াচ্ছে"(12)
এভাবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪১ সালের শেষ সপ্তাহে আদর্শবাদী এই দলটি উপমহাদেশে যাত্রা শুরু করে।
রাসুল (সঃ)এর বিপ্লব-ই-একমাত্র উদাহরন
রাসুল (সঃ)এর বিপ্লবের পদ্ধতি মাওলানা মওদুদীকে অভিভূত করেছিল।রাসুল (সঃ) ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রথমে মক্কায় এবং পরে মদীনায় মুসলমানদেরকে সংগঠিত করে ছিলেন যার ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে ইসলাম সমগ্র আরব জয় করে নিয়েছিল।মাওলানার মতে ঐ অর্জিত সফলতাকে শুধুমাত্র রাসুলের বাণীর শক্তি বলে বর্নণা করা যাবেনা এবং এও বলা যায়না যে এটা শুধু মাত্র আল্লাহ চেয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে[এর মানে এই নয় আল্লাহ চাইলেই পারেন না;আসলে এখানে বুঝানো হচ্ছে আল্লাহ সব কিছুই পারেন তবে তার করার কিছু সুন্নত(পদ্ধতি) রয়েছে]বরং এটা ছিল Prophet's organizational geniuses অর্থাৎ মাত্র ১৩ বছরে রাসুলের দক্ষ হাতে তৈরি করা খুবই ছোট্ট কিন্তু আনুগত্যকারী,উদ্দ্যমী এবং নিঃস্বার্থ পর একটা সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার প্রতিফলন।(1)
রাসুল (সঃ)কে আদর্শ ধরে নিয়ে মাওলানা মওদুদী রাসুলের বিপ্লবী আন্দোলনকে চার ভাগে ভাগ করেন;(2)
প্রথমত,একটা শক্তিশালী কাঠামো ও ভিত্তি গড়ার লক্ষ্যে রাসুল সমাজে অনেক সমস্যা থাকলেও সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষকে সর্বোপ্রথম ঈমানের দিকে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার আহবান জানান
দ্বীতিয়ত, যারা রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তাদেরকে তিনি একটা প্লাটফরমে সংগঠিত করেছেন, এবং তাদেরকে(মক্কী সাহাবীগন) সম্ভাব্য সকল প্রকার নির্যাতনের অগ্নি পরীক্ষায় নিখাদ সোনা হিসেবে তৈরি করেন
তৃতীয়ত, রাসুল নিজেই ছিলেন নেতা হিসেবে আদর্শের মডেল তিনি তাদেরকে ঐ মানের যোগ্য নেতৃত্ব দানের লক্ষ্যে ইসলামের মৌলিক নীতির আলোকে জীবন যাপনের জন্য প্রশিক্ষিত করে তুলেন এবং তাদের মাধ্যমে সমাজে খারাপের বিপরীতে ভাল হিসেবে উদাহরন হিসেবে উপস্থাপন করে যথেষ্ঠ শক্তিশালী জনমত তৈরি করেন।
সবশেষে,রাসুলের বিপ্লবের শেষ পর্যায় শুরু হয় মদীনায় যখন ইসলামিক principle এর আলোকে পরিপূর্ন ভাবে প্রশিক্ষিত প্রায় ৪০০ সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে উদাহরন হওয়ার মত লোক তৈরি হলো তখনই আদর্শের কার্যকর স্বাভাবিক বিপ্লব সাধিত হল ।প্রশিক্ষিত ঐ বিপ্লবী বাহিনীকে যখন মদীনার প্রশাসন পরিচালনার ভার দেয়া হলো ,তারা দায়িত্ব নিয়ে ইসলামী শিক্ষার আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যে মাত্র ৮ বছরে সমগ্র আরব ইসলামের সুমহান বিপ্লবী ঢাকে স্বতস্ফুর্ত সাড়া দেয়।
মাওলানা মওদুদী মনে করতেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেও এমন করা সম্ভব, তার নিজের ভাষায় "All those persons who thus surrender themselves are welded into a community and that is how the 'Muslim society' comes into being."(3)
পৃথিবীকে বদলের দেয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু জামায়াতের
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক(কোথাও আছে দল) অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে৷(আল ইমরান:১০৪)
১৯৪০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রেচী হলে প্রদত্ত ভাষনে মুসলিম লীগের তথাকথিত “ইসলামী রাষ্ট্রের” নামে "মুসলিম জাতীয়তাবাদ" কে অসাড় প্রমাণ করে দিয়ে বরং একে Nation state সৃষ্টি করে ভোটের মাধ্যমে(গনতন্ত্র)কতিপয় লোকের ক্ষমতা দখলের এক প্রকার ইমোশনাল ভাওতাবাজী আখ্যা দিয়ে(4) মাওলানা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে রাসুল (সঃ)এর প্রদর্শিত বিপ্লবের মডেল অনুসারে জামায়াতে ইসলামী গঠন করেন এবং তার কর্মপরিধিকে প্রধানত ৪ টি ধারায় নির্ধারণ করেন(5);
প্রথমত,আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার আহবান অর্থাৎ মানুষকে সরাসরি শুধু মাত্র আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয়ার(purely কালেমার)দাওয়াত দেয়া হবে।এর অংশ হিসেবে মুসলিম সমাজে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে অনইসলামিক যতসব উপাদান মুসলমানরা নিজেদের ঈমানের অংশ হিসেবে মনে করতে তার মুলৎপাটন করা। এক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান এবং আরব মহাদেশে শেখ মোহাম্মদ আবদুহ সহ পূর্ববর্তী মুসলিম স্কলারগন যারা western dominance এর ফলে ইসলামকে পশ্চিমা মানদন্ডে উত্তীর্ণ করার জন্য apologetic approach নিয়ে ইসলামিক আইনের ক্ষেত্রে compromise করছেন বলে মাওলানার মনে হয়েছে সেগুলোকে আবার মুল ধারায় ও সঠিক মানদন্ডে উর্ত্তীণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন।(6)
দ্বীতিয়ত, যারা ঐ দাওয়াতে সাড়া দিবে তাদেরকে সংগঠিত করা হবে।তিনি বলেন ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে এমন একদল দঃসাহসী যুবকের প্রয়োজন,যারা সত্যের প্রতি ঈমান এনে তার উপর পাহাড়ের মতো অটল থাকবে।অন্য কোন দিকে তাদের দৃ্ষ্টি নিবদ্ধ হবেনা।পৃথিবীতে যা-ই ঘটুক না কেন,তারা নিজেদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের পথ থেকে এক ইন্ঞ্চিও বিচ্যুত হবেনা এবং যারা সমাজে নিজেদের কর্ম দ্বারা উদাহরণ সৃষ্টি করে সমাজকে নেতৃত্ব দিবে (7)। ফলে দেখা যায় জামায়াতের অনেক সদস্য ঐ সময় নিজের এলাকা/জব ছেড়ে পাঠানকোটে চলে যান।মাওলানা মনজুর নোমানীতো একে হিজরত হিসেবে আখ্যায়িত করেন।(8)
তৃতীয়ত,সমাজের মানুষের চিন্তার পুণর্গঠন ও চেতনায় ইসলামী বিপ্লবের ধারনা পৌছে দেয়ার জন্য কেম্পেইন শুরু করা।এই জন্য একদল যোগ্য কর্মি তৈরির লক্ষ্যে গ্রামে,গন্জে,শহরে দ্বীনের দাওয়াত পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ইসলামিক principle এর আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।এই সময় জামায়াত অনেক বই,পত্রিকা,পাম্পলেট প্রকাশ করতে থাকে।সর্বোপরি The Pathankot years (1942-1947) were a time of organizational and intellectual consolidation. Pathankot provided time for learning, debate, and intellectual creativity. Many of the Jama'at's members belonged to different religious schools of thought, and the impact of the debates between Deobandis, Nadwis, Islahis, and the Ahl-i Hadith during this period was later to appear in some of the ways Mawdudi read Islam and its place in society. (9)
সর্বশেষ,জামায়াত ইসলামের আদলে সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে জনমত গঠনের কাজ করতে থাকে।যদিও জামায়াত তখন কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছিলনা তথাপি সমাজকে ইসলামের আদলে পরিবর্তনের জন্য প্রভাবশালী ব্যাক্তিদেরকে টার্গেট করে কাজ করছিল। দলের সদস্য শুধুমাত্র পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং যারা সৎ,ধার্মিক ও খুবই উচুঁমানের নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ছিল একমাত্র তাদেরকেই দলের সদস্যপদ দেয়া হত। The Emphasis of the Jamat was not on number but on character, ideological commitment, discipline, spirit of sacrifice for fellow members, and dedication to the cause. (10)
জামায়াত সে সময় সত্যের পক্ষে দাড়িয়েছে এমনকি তা যদি জনগনের প্রচলিত মতের বিপক্ষেও যায়।ইসলামিক বিপ্লবের লক্ষ্যে জামায়াত প্রাধান্য দিয়েছিল মানুষের মানসিক চিন্তার বিকাশ,শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব সাধন ,চিন্তার পরিশুদ্ধকরন ও পূনর্গঠন করে সমাজ পরিবর্তনের দিকে।(11) ফলে দেখা যায় রাজনীতি জামায়াতকে তেমন প্রভাবিত করতে পারেনি, রাজনীতি জামায়াতের কর্মসূচীতে ছিল বটে কিন্তু তা ছিল সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ন।
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِالل
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য৷তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷(আল ইমরান ১১০)
শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয় বরং সাড়া বিশ্ব হবে কর্মক্ষেত্র
জামায়াতের কাজ কি কাজের পরিধি কি হবে তার বর্ণনায় মাওলানা মওদুদী বলেন জামায়াতের কাজের নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই,তার কাজের পরিধির মধ্যে রয়েছে গোটা মানব জীবন।
তিনি দীপ্তকন্ঠে আরো বলেন “যারা জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করবে তাদের প্রত্যেকের একথা ভালো করে বুঝে নেয়া দরকার যে, জামায়াতে ইসলামীর সামনে যে কাজ রয়েছে তা যেমন তেমন কাজ নয়। দুনিয়ার নীতি নৈতিকতা, রাজনীতি, সভ্যতা সংস্কৃতি, অর্থর্নীতি, সমাজনীতি প্রতিটি বস্তুর পরিবর্তণ করে দিতে হবে। খোদাদ্রোহিতার উপর যে ব্যবস্থা এই দুনিয়ায় কায়েম রয়েছে তা বদলিয়ে খোদার আনুগত্যের উপর তা কায়েম করতে হবে।এ কাজে সকল শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম ও প্রতিটি পদক্ষেপের পূর্বে প্রত্যেককে ভাল করে বুঝে নিতে হবে যে সে কোন কন্টকময় পথে পা বাড়াচ্ছে"(12)
এভাবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪১ সালের শেষ সপ্তাহে আদর্শবাদী এই দলটি উপমহাদেশে যাত্রা শুরু করে।
0 comments: