সুয়েজ কোম্পানির একজন কর্মকর্তা মসজিদ সংলগ্ন কামরায় বসা শাইখ ফরুগলীকে বলেন, ডাইরেক্টর সাহেব আমাকে জানিয়েছেন যে, কোম্পানির আপনার সেবার আর প্রয়োজন নেই। কোম্পানি ভাবছে অন্য কাউকে আপনার স্থলাভিষিক্ত করতে। ডাইরেক্টর সাহেবের নির্দেশ মোতাবেক আজকের দিন পর্যন্ত আপনার পাওনা-দাওনার হিসাব তৈরি আছে।
শাইখ অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে তাকে বলেন, মসিঁয়ে ফ্রাসোয়া! আমার জানা ছিল না যে, আমি হাবাসাতুল বালাহ এলাকায় সুয়েজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারী। আমি তো জানি যে, ইসমাঈলিয়ার ইখওয়ানের পক্ষ থেকে এখানে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমি তাদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ করি যারা আপনার মাধ্যমে তা পাঠিয়ে থাকে। আমার চুক্তি আপনার সাথে নয় ইখওয়ানের সাথে। আমি আপনার কাছ থেকে কোন বেতন কিংবা হিসাব নিতে প্রস্তুত নই। আমি মসজিদে যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি তা অব্যাহত থাকবে। ইখওয়ান নেতৃবৃন্দ যারা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন তারা আমাকে এ জায়গা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক কদমও নড়ছি না। ইসমাঈলিয়া খুব দূরে নয়, সেখানে গিয়ে যা কিছু করার তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করুন। শাইখ ফরুগলীর এ জবাব শুনে অফিসার ফিরে যান। শাইখের এ জবাব শুনে কোম্পানির লোকেরা বেকায়দায় পড়ে যায়। হাবাসাতুল বালাহ এলাকায় কিছুসংখ্যক শ্রমিক এবং শ্রমজীবী ব্যক্তির সাথে ইসমাঈলিয়ার ইখওয়ানের মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে এ সুযোগে তারা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ইখওয়ানের দাওয়াতী কাজ শুরু করেন। সেখানে ৩ শতাধিক মুসলমান শ্রমিক থাকায় কিছুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরই তারা সুয়েজ কোম্পানির কাছে ঐ এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের দাবি জানায়। কোম্পানি দাবি মেনে নিয়ে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে এবং ইসমাঈলিয়ার ইখওয়ানের কাছে ইমামতি ও দরসের জন্য একজন দ্বীনী আলেম পাঠানোর অনুরোধ জানায়। হেরা মকতবের শিক্ষক শাইখ ফরুগলীকে ইখওয়ানের পক্ষ থেকে নির্বাচন করা হয়।
সেখানকার সৎ শ্রমিক শ্রেণী শাইখের উন্নত ও উচ্চ নৈতিকতায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকদের মনমগজ ও চিন্তা-চেতনায় সামাজিকতায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। তারা নিজেদের মূল্য মর্যাদা বুঝতে সক্ষম হয়। জীবনের উন্নততর লক্ষ্যের সাথে পরিচিতির মাধ্যমেই তাদের অন্তর থেকে ভয়ভীতি ও হীনম্মন্যতার অনুভূতি বিদূরিত করা সম্ভব। ঈমানের সম্পদে বলীয়ান হওয়ার উপলব্ধি তাদের মধ্যে গৌরব ও গর্বের অনুভূতি সৃষ্টি করে। একদিকে তারা কর্তব্যের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠে অপরদিকে লোভ-লালসা ও চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার শিক্ষা লাভ করে। আদব কায়দা রক্ষা করে একজন শ্রমিক অফিসারের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শিক্ষা তারা অর্জন করেছে। তারা আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন কিন্তু দৃঢ় ও ধীরস্থির। তাদের পূর্বের অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
তারা যেমন নিজেদের মানমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন তেমনি অফিসারদের মানসম্মানের ব্যাপারেও সজাগ। পারস্পরিক ভালবাসা, পরিশ্রম ও ঈমানদারী এসব শ্রমিকের ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করেছে।
কোম্পানির বিদেশি অফিসার যারা শ্রমিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিজেদের অধিকার বলে মনে করতো, তাদের কাছে এই নীরব রাজনীতি মোটেই পছন্দ হয়নি। তারা বুঝতে পারে যে, অবস্থা যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে ক্ষমতার লাগাম একদিন ঐ শাইখ ফরুগলীর হাতে চলে যাবে। এরপর আর কোন শক্তিই শাইখ ফরুগলী ও শ্রমিকদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সুতরাং কোম্পানির অফিসাররা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে ভাবতে থাকে যে, যে কোন উপায়ে এই সাহসী শাইখকে মসজিদের ইমামতি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট অফিসার মসিঁয়ে ফ্রাসোয়াকে শাইখের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
শাইখ ফরুগলী ইসমাঈলিয়া পৌঁছে তার ও ফ্রাসোয়ার মধ্যে হয়ে যাওয়া আলোচনার বিষয়ে হাসানুল বান্নাকে অবহিত করেন। হাসানুল বান্না তাকে বলেন যে, তিনি যেন নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। কেননা তিনি সঠিক অবস্থানে রয়েছেন এবং তিনি কোম্পানির পক্ষ থেকে কোন কাগজপত্র গ্রহণ করেননি। কোম্পানি কিছুদিন অপেক্ষা করে যাচাই করতে চাইলো যে, শাইখ ফরুগলী তাদের কাছে বেতনভাতা দাবি করেন কিনা। অবশেষে তারা তাদের কেন্দ্রের শরণাপন্ন হয়। কোম্পানির ডাইরেক্টর মসিয়ে মেনু সুয়েজ এলাকার প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করেন। সুয়েজের প্রশাসক ইসমাঈলিয়ার পুলিশ ইন্সপেক্টরকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত একদল পুলিশ নিয়ে হাবাসাতুল বালাহ পৌঁছার নির্দেশ দেন। পুলিশ ইন্সপেক্টর একদল পুলিশ নিয়ে কোম্পানির ডাইরেক্টরের অফিসে পৌঁছান এবং শাইখকে ডেকে আনার জন্য একজন কর্মচারীকে পাঠানো হয়।
শাইখ কর্মচারীকে জানিয়ে দেন, পুলিশ ইন্সপেক্টর বা ডাইরেক্টরের সাথে আমার কোন সম্পর্ক বা সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার সম্পর্ক বা সংশ্লিষ্টতা হচ্ছে মসজিদের সাথে। তাদের দুইজনের মধ্যে যদি কারো কোনো প্রয়োজন পড়ে তাহলে তারা আমার কাছে আসতে পারেন। এরপর ইন্সপেক্টর নিজেই শাইখের কাছে উপস্থিত হয়ে ডাইরেক্টরের ইচ্ছাকে মেনে নেয়ার জন্য তাকে অব্যাহত চাপ দিতে থাকেন এবং বলে বসেন, আপনি ইমামতি ছেড়ে ইসমাঈলিয়া চলে যান। শাইখ নিজের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, আপনি ইসমাঈলিয়া বরখাস্ত সংক্রান্ত লিখিত দুই লাইন এনে দিন আমি এখনি চলে যাবো। আপনি যদি শক্তি প্রয়োগ করতে চান তাহলে করে দেখতে পারেন। আমি এখান থেকে কক্ষনোই বাইরে বের হবো না। শুধু আমার লাশই বের হবে।
এরই মধ্যে এ খবর শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে। তারা তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে মিছিল সহকারে স্লোগান দিতে দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
পুলিশ ইন্সপেক্টর এই বিরোধের পরিণতি সম্পর্কে ভীত হয়ে যেখানকার অবস্থা সেখানে রেখেই ইসমাঈলিয়া চলে গিয়ে এ সমস্যার সমাধানে কোন উপায় বের করা যায় কিনা তার জন্য হাসানুল বান্নার সাথে সাক্ষাৎ করেন। হাসানুল বান্না ব্যক্তিগত অপরাগতার কথা তাকে জানিয়ে দেন যে, এ ব্যাপারে কার্যনির্বাহী পরিষদের চিন্তা-ভাবনা, পরামর্শ ও পর্যালোচনার পরই কোন কিছু বলা যেতে পারে।
হাসানুল বান্না কায়রোতে কোম্পানির ডাইরেক্টর জেনারেলের সাথে নিজে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করেন, আপনার শাইখ ফরুগলীর পিছনে কেন আদাপানি খেয়ে লেগেছেন। তার কাছে এর কোন জবাব ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তাদের এখন লোক দরকার যিনি তাদের বশ্যতা স্বীকার করে নিবেন এবং তাদের দাবির সামনে মাথানত করবেন। অনেক মুসলমান নেতা আমার বন্ধু। আমি আলজেরিয়ায়ও ২০ বছর ছিলাম। আমি তাদের মধ্যে শাইখের মত কোন লোককে পাইনি। তিনি আর্মির জেনারেলের মত আমাদের ওপর তার নির্দেশ কার্যকর করতে চান।
হাসানুল বান্না তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এসব কোম্পানি শ্রমিকদের ওপর বরাবর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করার চেষ্টা করছে। তাদেরকে এরা মানুষই মনে করে না, এমনকি এদের পূর্ণ মজুরি পর্যন্ত দেয় না। অপরদিকে এসব কোম্পানির লভ্যাংশ ফুলে ফেঁপে স্ফীত হয়ে উঠছে। এ বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসানকল্পে কোম্পানির পরিবর্তন নীতিমালায় পরিবর্তন সাধন অত্যন্ত জরুরি। অবশেষে ডাইরেক্টর ও হাসানুল বান্না এই মর্মে মতৈক্যে পৌঁছান যে, শাইখ ফরুগলী ২ মাস পর্যন্ত যথারীতি নিজের পদে বহাল থাকবেন। এরপর কোম্পানি তাকে সসম্মানে অব্যাহতি দিবে। কোম্পানি নিয়ম মাফিক ইখওয়ানুল মুসলেমুনের কাছে তার স্থলাভিষিক্ত করার জন্য অন্য একজন আলেমের নাম চেয়ে পাঠাবে এবং নতুন ইমামকে দ্বিগুণ বেতন দিতে হবে। যা হোক দুই মাস পর শাইখ ফরুগলী তার সাবেক কর্মস্থলে ফিরে আসেন এবং শাইখ শাফী আহমদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এভাবেই সুয়েজের এ মরুভূমিতে ইসলামী আন্দোলনের কাফেলা এগিয়ে যেতে থাকে।
শাইখ অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে তাকে বলেন, মসিঁয়ে ফ্রাসোয়া! আমার জানা ছিল না যে, আমি হাবাসাতুল বালাহ এলাকায় সুয়েজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারী। আমি তো জানি যে, ইসমাঈলিয়ার ইখওয়ানের পক্ষ থেকে এখানে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমি তাদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ করি যারা আপনার মাধ্যমে তা পাঠিয়ে থাকে। আমার চুক্তি আপনার সাথে নয় ইখওয়ানের সাথে। আমি আপনার কাছ থেকে কোন বেতন কিংবা হিসাব নিতে প্রস্তুত নই। আমি মসজিদে যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি তা অব্যাহত থাকবে। ইখওয়ান নেতৃবৃন্দ যারা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন তারা আমাকে এ জায়গা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক কদমও নড়ছি না। ইসমাঈলিয়া খুব দূরে নয়, সেখানে গিয়ে যা কিছু করার তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করুন। শাইখ ফরুগলীর এ জবাব শুনে অফিসার ফিরে যান। শাইখের এ জবাব শুনে কোম্পানির লোকেরা বেকায়দায় পড়ে যায়। হাবাসাতুল বালাহ এলাকায় কিছুসংখ্যক শ্রমিক এবং শ্রমজীবী ব্যক্তির সাথে ইসমাঈলিয়ার ইখওয়ানের মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে এ সুযোগে তারা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ইখওয়ানের দাওয়াতী কাজ শুরু করেন। সেখানে ৩ শতাধিক মুসলমান শ্রমিক থাকায় কিছুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরই তারা সুয়েজ কোম্পানির কাছে ঐ এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের দাবি জানায়। কোম্পানি দাবি মেনে নিয়ে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে এবং ইসমাঈলিয়ার ইখওয়ানের কাছে ইমামতি ও দরসের জন্য একজন দ্বীনী আলেম পাঠানোর অনুরোধ জানায়। হেরা মকতবের শিক্ষক শাইখ ফরুগলীকে ইখওয়ানের পক্ষ থেকে নির্বাচন করা হয়।
সেখানকার সৎ শ্রমিক শ্রেণী শাইখের উন্নত ও উচ্চ নৈতিকতায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকদের মনমগজ ও চিন্তা-চেতনায় সামাজিকতায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। তারা নিজেদের মূল্য মর্যাদা বুঝতে সক্ষম হয়। জীবনের উন্নততর লক্ষ্যের সাথে পরিচিতির মাধ্যমেই তাদের অন্তর থেকে ভয়ভীতি ও হীনম্মন্যতার অনুভূতি বিদূরিত করা সম্ভব। ঈমানের সম্পদে বলীয়ান হওয়ার উপলব্ধি তাদের মধ্যে গৌরব ও গর্বের অনুভূতি সৃষ্টি করে। একদিকে তারা কর্তব্যের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠে অপরদিকে লোভ-লালসা ও চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার শিক্ষা লাভ করে। আদব কায়দা রক্ষা করে একজন শ্রমিক অফিসারের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শিক্ষা তারা অর্জন করেছে। তারা আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন কিন্তু দৃঢ় ও ধীরস্থির। তাদের পূর্বের অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
তারা যেমন নিজেদের মানমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন তেমনি অফিসারদের মানসম্মানের ব্যাপারেও সজাগ। পারস্পরিক ভালবাসা, পরিশ্রম ও ঈমানদারী এসব শ্রমিকের ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করেছে।
কোম্পানির বিদেশি অফিসার যারা শ্রমিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিজেদের অধিকার বলে মনে করতো, তাদের কাছে এই নীরব রাজনীতি মোটেই পছন্দ হয়নি। তারা বুঝতে পারে যে, অবস্থা যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে ক্ষমতার লাগাম একদিন ঐ শাইখ ফরুগলীর হাতে চলে যাবে। এরপর আর কোন শক্তিই শাইখ ফরুগলী ও শ্রমিকদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সুতরাং কোম্পানির অফিসাররা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে ভাবতে থাকে যে, যে কোন উপায়ে এই সাহসী শাইখকে মসজিদের ইমামতি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট অফিসার মসিঁয়ে ফ্রাসোয়াকে শাইখের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
শাইখ ফরুগলী ইসমাঈলিয়া পৌঁছে তার ও ফ্রাসোয়ার মধ্যে হয়ে যাওয়া আলোচনার বিষয়ে হাসানুল বান্নাকে অবহিত করেন। হাসানুল বান্না তাকে বলেন যে, তিনি যেন নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। কেননা তিনি সঠিক অবস্থানে রয়েছেন এবং তিনি কোম্পানির পক্ষ থেকে কোন কাগজপত্র গ্রহণ করেননি। কোম্পানি কিছুদিন অপেক্ষা করে যাচাই করতে চাইলো যে, শাইখ ফরুগলী তাদের কাছে বেতনভাতা দাবি করেন কিনা। অবশেষে তারা তাদের কেন্দ্রের শরণাপন্ন হয়। কোম্পানির ডাইরেক্টর মসিয়ে মেনু সুয়েজ এলাকার প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করেন। সুয়েজের প্রশাসক ইসমাঈলিয়ার পুলিশ ইন্সপেক্টরকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত একদল পুলিশ নিয়ে হাবাসাতুল বালাহ পৌঁছার নির্দেশ দেন। পুলিশ ইন্সপেক্টর একদল পুলিশ নিয়ে কোম্পানির ডাইরেক্টরের অফিসে পৌঁছান এবং শাইখকে ডেকে আনার জন্য একজন কর্মচারীকে পাঠানো হয়।
শাইখ কর্মচারীকে জানিয়ে দেন, পুলিশ ইন্সপেক্টর বা ডাইরেক্টরের সাথে আমার কোন সম্পর্ক বা সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার সম্পর্ক বা সংশ্লিষ্টতা হচ্ছে মসজিদের সাথে। তাদের দুইজনের মধ্যে যদি কারো কোনো প্রয়োজন পড়ে তাহলে তারা আমার কাছে আসতে পারেন। এরপর ইন্সপেক্টর নিজেই শাইখের কাছে উপস্থিত হয়ে ডাইরেক্টরের ইচ্ছাকে মেনে নেয়ার জন্য তাকে অব্যাহত চাপ দিতে থাকেন এবং বলে বসেন, আপনি ইমামতি ছেড়ে ইসমাঈলিয়া চলে যান। শাইখ নিজের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, আপনি ইসমাঈলিয়া বরখাস্ত সংক্রান্ত লিখিত দুই লাইন এনে দিন আমি এখনি চলে যাবো। আপনি যদি শক্তি প্রয়োগ করতে চান তাহলে করে দেখতে পারেন। আমি এখান থেকে কক্ষনোই বাইরে বের হবো না। শুধু আমার লাশই বের হবে।
এরই মধ্যে এ খবর শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে। তারা তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে মিছিল সহকারে স্লোগান দিতে দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
পুলিশ ইন্সপেক্টর এই বিরোধের পরিণতি সম্পর্কে ভীত হয়ে যেখানকার অবস্থা সেখানে রেখেই ইসমাঈলিয়া চলে গিয়ে এ সমস্যার সমাধানে কোন উপায় বের করা যায় কিনা তার জন্য হাসানুল বান্নার সাথে সাক্ষাৎ করেন। হাসানুল বান্না ব্যক্তিগত অপরাগতার কথা তাকে জানিয়ে দেন যে, এ ব্যাপারে কার্যনির্বাহী পরিষদের চিন্তা-ভাবনা, পরামর্শ ও পর্যালোচনার পরই কোন কিছু বলা যেতে পারে।
হাসানুল বান্না কায়রোতে কোম্পানির ডাইরেক্টর জেনারেলের সাথে নিজে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করেন, আপনার শাইখ ফরুগলীর পিছনে কেন আদাপানি খেয়ে লেগেছেন। তার কাছে এর কোন জবাব ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তাদের এখন লোক দরকার যিনি তাদের বশ্যতা স্বীকার করে নিবেন এবং তাদের দাবির সামনে মাথানত করবেন। অনেক মুসলমান নেতা আমার বন্ধু। আমি আলজেরিয়ায়ও ২০ বছর ছিলাম। আমি তাদের মধ্যে শাইখের মত কোন লোককে পাইনি। তিনি আর্মির জেনারেলের মত আমাদের ওপর তার নির্দেশ কার্যকর করতে চান।
হাসানুল বান্না তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এসব কোম্পানি শ্রমিকদের ওপর বরাবর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করার চেষ্টা করছে। তাদেরকে এরা মানুষই মনে করে না, এমনকি এদের পূর্ণ মজুরি পর্যন্ত দেয় না। অপরদিকে এসব কোম্পানির লভ্যাংশ ফুলে ফেঁপে স্ফীত হয়ে উঠছে। এ বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসানকল্পে কোম্পানির পরিবর্তন নীতিমালায় পরিবর্তন সাধন অত্যন্ত জরুরি। অবশেষে ডাইরেক্টর ও হাসানুল বান্না এই মর্মে মতৈক্যে পৌঁছান যে, শাইখ ফরুগলী ২ মাস পর্যন্ত যথারীতি নিজের পদে বহাল থাকবেন। এরপর কোম্পানি তাকে সসম্মানে অব্যাহতি দিবে। কোম্পানি নিয়ম মাফিক ইখওয়ানুল মুসলেমুনের কাছে তার স্থলাভিষিক্ত করার জন্য অন্য একজন আলেমের নাম চেয়ে পাঠাবে এবং নতুন ইমামকে দ্বিগুণ বেতন দিতে হবে। যা হোক দুই মাস পর শাইখ ফরুগলী তার সাবেক কর্মস্থলে ফিরে আসেন এবং শাইখ শাফী আহমদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এভাবেই সুয়েজের এ মরুভূমিতে ইসলামী আন্দোলনের কাফেলা এগিয়ে যেতে থাকে।
0 comments: